ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

জলে গেল ১৩ টন চালের টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
জলে গেল ১৩ টন চালের টাকা!

জামালপুর: অ-পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে রাস্তা মেরামত প্রকল্পে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের (কাবিখা) ১৩ টন চালের টাকা জলের তোড়ে ভেসে গেছে!

জানা গেছে, বন্যা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে দেওয়ানগঞ্জ খোলাবাড়ী রাস্তা মেরামতের কাজটি শুরু করে উপজেলা পরিষদ। কাজ শেষ হওয়ার আগেই মেরামত করা সম্পূর্ণ রাস্তা পানির তোড়ে ভেসে গেছে।

এতে গচ্চা গেছে প্রকল্পের পুরো টাকা।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জন্মেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। তারা বলছেন, কাজটি সঠিকভাবে করলে রাস্তাটি পানিতে ভেসে যেত না।

চলতি বন্যার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী ৫ মিটার সংস্কারকৃত সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে উপজেলা শহরের সঙ্গে দেওয়ানগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা পুলিশসহ হাজার হাজার মানুষ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদী ভাঙনের খড়্গ পড়েছে চিকাজানি ইউনিয়নে। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের খোলাবাড়ীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, বাজারের অবস্থা খারাপ হয়ে আছে। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানি, জিঞ্জিরাম নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার চিকাজানি, ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহামেদ জানান, বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা, খোলাবাড়ী, মোন্নে বাজার, ফারাজি পাড়া, কাজলা পাড়া, মণ্ডল বাজার, গুচ্ছ গ্রাম ও আরও ৬টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক দেওয়ানগঞ্জ খোলাবাড়ী রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি গত ৩ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের মুখে। নদ ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে সড়কটি প্রথম ভাঙন শুরু হয়। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন শুরু হলে স্থানীয়ভাবে কিছু বালুর বস্তা ও বাঁশ দিয়ে প্রতিরোধ গড়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাজাহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের অর্থ ছাড় পেতে দেরি হওয়ায় কাজটিও শুরু করতে দেরি হয়। ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বন্যার শিকার হয় সড়কটি।

প্রসঙ্গত, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানি, জিঞ্জিরাম নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি হতে থাকায় উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে খোলাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জের প্রধান সড়ক। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বাহাদুরাবাদ নৌ-থানাসহ ১০ হাজার মানুষ। নদী ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬টি গ্রাম।

স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

বাহাদুরাবাদ নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, গত বছর এ সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হলে কিছু বালু ও বস্তা, ডাম্পিং করা হয়। উচুকরণ না হওয়ায় গত ১৬ জুন রাতে অবিরাম বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও চরম অবহেলার কারণে সড়কটি রক্ষার কোনো ব্যবস্থা করেনি কেউ। তাই এ জনপদের মানুষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে চলাচল করছেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, সড়কটি দুই বছর আগেই বন্যায় ভেঙে গিয়েছিল। এখন মাটি কেটে সড়ক উঁচু করাসহ দুই পাশে জিও ব্যাগ দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু তা না করেই কীভাবে এলজিইডি বিভাগ সড়কটি মেরামতের কাজ করবে?

পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, আমি খবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি, ওই সড়ক পানি উন্নয়ন বোর্ডের না। তারপরও আমাদের যদি কিছু করার থাকে আমি সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ১৮ জুন, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।