ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিলছে নতুন তথ্য, পিকে হালদারদের ফের জেরার আবেদন করবে ইডি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
মিলছে নতুন তথ্য, পিকে হালদারদের ফের জেরার আবেদন করবে ইডি

কলকাতা: টানা ৩৯ দিন ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট’র (ইডি) জেরায় জর্জরিত বাংলাদেশি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তার সহযোগীরা। কিন্তু জেরা শেষ হচ্ছে না।

চলবে আরও কিছু দিন। যে কারণে আবারও জেল হেফাজতে থাকতে পারেন আসামিরা।

সোমবার (২০ জুন) ইডি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, জেরার জেরে প্রতিদিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন তারা। মঙ্গলবার (২১ জুন) পিকে হালদারসহ বাকি আসামিদের আদালতে তোলা হবে। এ সময় তাদের আরও ১৪ দিনের জেল হেফাজত ও জেরার জন্য আবেদন করবে ইডি। জেরা শেষ না হওয়ার ক্ষেত্রে ইডি কারণ দেখিয়েছে, পিকে হালদার একা নন, তার পেছনে বড় ক্ষমতাধর লোকজন রয়েছেন। নতুন আরও একটি দেশে পিকে তার প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও দ্বীপরাষ্ট্র গ্রানাডার নাম পাওয়া গিয়েছিল জেরার কল্যাণে। নতুন যে দেশের নাম পাওয়া গেছে সেটি সার্বিয়া লাগোয়া বলে শোনা যাচ্ছে। রিয়েল এস্টেট’র ব্যবসার পাশাপাশি কিছু অনৈতিক কাজের সঙ্গে পিকেসহ অন্যান্যদের জড়িত থাকার কথা শোনা গেছে। ইডি সূত্রে জানা গেছে, বেশ মোটা অঙ্কের টাকা এখনও পিকের জিম্মায় আছে, যা বাংলাদেশ বা ভারতে নেই। তৃতীয় কোনো দেশে রয়েছে। পিকেদের আত্মসাৎ করা বেশিরভাগ অর্থ প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছে ইডির ওই সূত্র।

জানা গেছে, ইডি অনেকটাই জাল গুটিয়ে নিয়ে এসেছে। আসামিদের জেরার কল্যাণে পিকে হালদার ওরফে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে ১৩টি বাড়ি এবং ফ্ল্যাট ও একটি বোট হাউসের হদিস পেয়ে কর্মকর্তারা। কয়েকশ বিঘা খালি জমিও কেনা রয়েছে শিবশংকর হালদারের নামে। বাংলাদেশের অবৈধ অর্থে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রিয়েল এস্টেট’র ব্যবসায় ঢালা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজেক্টে ইনভেস্টও করেছে পিকে হালদার। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে তার ১৩টি কোম্পানির হদিস, যাতে পিকে হালদার ও শিবশংকর হালদার দুটি নামই রয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং গ্রেনেডার পাসপোর্ট। শিবঙ্কর নামে কানাডায় নাগরিকত্বের নথিও মিলেছে আসামির কাছ থেকে।

এ ছাড়া মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার মিলিয়ে মোট ৮১টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে, যা থেকে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম পাওয়া গেছে। ৮৭টি ভারতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে, যার কাছ ছিল ৫০- ৬০ জন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে লেনদেন করা। সেই টাকা ব্যবহৃত হতো অন্য খাতে। এ কারণে সাধারণ অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের মাসিক ২৫ হাজার রুপি বেতন দেওয়া হতো। এরমধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা গোপনে ভারতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন।

একই সঙ্গে ৬০ কোটি রুপি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। মালয়েশিয়ায় তার সাতটি ফ্ল্যাটের হদিস পাওয়া গেছে। দুবাইয়ে রিয়েল এস্টেট ও ৩০০ কোটি রুপির মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য পেয়েছে ইডি।

বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা পিকে হালদার এবং তার পাঁচ সহযোগীকে গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে গ্রেফতার করে ইডি। অন্যান্য আসামিরা হলেন- প্রাণেশ কুমার হালদার, প্রীতীশ কুমার হালদার, স্বপন মৈত্র ও উত্তম মৈত্র ও আমানা সুলতানা ওরফে শার্লি হালদার। গ্রেফতারের পর প্রথমে তাদের ৪ দিন ও পরে ১০ দিন অর্থাৎ ১৪ দিন ইডির রিমান্ডে রাখা হয়। পরে গত ২৭মে আদালতের রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্তের কারণে ১১দিনের জুডিশিয়াল কাস্টডি হয় আসামিদের। একইভাবে গত ৭ জুন আদালতে তোলা হলে তাদেরকে ১৪ দিনের জুডিশিয়াল কাস্টডি দেওয়া হয়।

ইডির পক্ষ থেকে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রথমটি অবৈধ অর্থ-পাচার আইনে, দ্বিতীয়টি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন। পিকে হালদার ও তার চার সহযোগীকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়েছে। আমানা সুলতানাকে আলিপুর জেলে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
ভিএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।