ঢাকা: গত ১২ বছর আগে (২০১০ সালের নভেস্বর) রাজধানীর কদমতলীতে হুমায়ুন কবির ওরফে টিটু নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে রবিন শেখ ও তার সহযোগীরা। টিটু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।
এক দশক পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেই হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি রবিন শেখকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
নিজেকে আত্মগোপন রাখতে রবিন শেখ কখনো রাজমিস্ত্রি, আবার কখনো অটোচালক সেজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেন।
শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালায় র্যাব-১০। এ সময় উপজেলার বেরাবো এলাকা থেকে আয়নাবাজ সোহাগের অন্যতম সহযোগী ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রবিন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি টিটু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আয়নাবাজ সোহাগের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর হুমায়ুন কবির ওরফে টিটুকে গুলি চালায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪), মামুন (৩৩), রবিন শেখ (৩০) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়।
২০১০ সালে টিটু হত্যা মামলায় রবিন শেখকে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। ২০১২ সালে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তির পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর রবিন শেখের অনুপস্থিতিতে আদালত রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। কিন্তু রবিন জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রবিন টিটু হত্যাকাণ্ডের সময় নবাবপুর এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। ২০১২ সালে জামিনে মুক্তি লাভের পর তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বেরাবো এলাকায় অটোড্রাইভার হিসেবে নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিলেন।
মেজর শাহরিয়ার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, আসামি রবিন ও আয়নাবাজ সোহাগ একই এলাকায় পাশাপাশি বাসায় বসবাস করতেন। সেই সুবাদে রবিনের সঙ্গে মামুন ও সোহাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যার ফলে রবিন সোহাগের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
উল্লেখ্য, টিটু হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি আয়নাবাজ সোহাগকে র্যাব-১০ গত ২৯ জানুয়ারি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল (মিডফোর্ড) হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর গত ১০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন মেঘনা ঘাট এলাকা থেকে মামলার ২ নম্বর আসামি মামুনকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ মামলার ৩ নম্বর আসামি রবিন শেখকে গ্রেফতার করেছে তারা। গ্রেফতার রবিনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড