ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড: যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুল গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড: যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুল গ্রেফতার

ঢাকা: বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস ও ইন্ট শাখা) পুলিশ সুপার (এসপি) বীণা রানী দাস বাংলানিউজকে এ খবর নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর চামেলীবাগ, পল্টন এলাকা থেকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুলকে গ্রেফতার করা হয়। কামরুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার নারায়ণপুরের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে।

বীণা রানী দাস বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি কামরুল জানান, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে তারা ধাওয়া করেন। তারপর মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারপর কামরুল জানতে পারেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে এবং ওই ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়েছে। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেন। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের দুই মাস পর কামরুল বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, কামরুল ১৯৯৪ সালে তার বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। তার বাবার মৃত্যুর পর তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান। তারা তিন বোন, এক ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে কামরুল সবার ছোট। তিনি নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৫ সালে তিনি ঢাকার একটি কলেজে একাউন্টিং সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি তার এক সহপাঠীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় কামরুল তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন। এ সময় তিনি জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সঙে্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। প্রথমে তিনি ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতা জনৈক খোকন ও সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা তাকে প্রলুব্ধ করেন প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এভাবে তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন। ওই অবৈধ উপার্জন দিয়ে তিনি কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করেন। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেয় কামরুল। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। গ্রেফতার কামরুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে বিদ্যমান দুটি পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় ধাওয়া খেয়ে পথচারী বিশ্বজিৎ দৌড়ে প্রথমে কাছের একটি ভবনের দোতলায় অবস্থিত একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। দুষ্কৃতিকারীরা ওই ক্লিনিকে বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালিয়ে নির্বিচারে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন। তার গায়ে লৌহদণ্ড দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকেন। আহত বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে পাশের আরেকটি ভবনে ঢুকে পড়েন। দুষ্কৃতিকারীরা সেখানেও বিশ্বজিতের ওপর হামলা চালান। ১৫-২০ জনের একটি দল তাকে লৌহদণ্ড ও চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। আঘাতে তার কাপড় ছিঁড়ে যায় ও সারা শরীর রক্তাক্ত হয়। তিনি আবার পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আঘাত অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে শীর্ণকায় বিশ্বজিৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় তিনি উঠে দৌড় দেন, কিন্তু শাঁখারীবাজারের একটি গলিতে গিয়ে ঢলে পড়ে যান।

পরে মুমূর্ষু অবস্থায় এক রিকশাওয়ালা তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ভিক্টিম বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। তিনি ২০০৬ সালে ঢাকার শাঁখারীবাজারে নিউ আমন্ত্রণ টেইলার্সে দর্জির কাজ শুরু করেন। ভিক্টিম বিশ্বজিৎ বিবদমান দুটি পক্ষের কোনটির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না। তিনি জীবিকার তাগিদে ঘটনার সময় তার লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।

এই ঘটনায় ওই দিন সুত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ এই ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মামলার রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করলে তারা খালাস পান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।