ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা

লাইসেন্স ছাড়াই ফিটনেসবিহীন ট্রাকটি চালাতেন শিপন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
লাইসেন্স ছাড়াই ফিটনেসবিহীন ট্রাকটি চালাতেন শিপন র‌্যাবের কবজায় ট্রাকচালক শিপন।

ঢাকা: ‘সাত মাস ধরে শতকরা ১০ শতাংশ কমিশন ভিত্তিতে কাঁচামাল পরিবহন ও সরবরাহের জন্য এই ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন রাজু আহমেদ ওরফে শিপন (৪২)। তবে ট্রাকচালক শিপনের বৈধ কোনো লাইসেন্স ছিল না।

এছাড়াও ট্রাকটির ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। ট্রাকের ধারণক্ষমতা সাত টন হলেও দুর্ঘটনার সময় ওই ট্রাকের ওজন ১৩ দশমিক ৫ টন ছিল। শুধু তাই নয়, ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাকচালকের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সড়কে একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল শিপন। ’

চাঞ্চল্যকর ময়মনসিংহের ত্রিশালে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচলকারী একটি ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যু ও অলৌকিকভাবে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালক শিপনকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

আরও পড়ুন>>সেই শিশুকে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ 

১৬ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ময়মনসিংহগামী বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।  এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্মা বেগম (২৬) এবং তার তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তার। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওযার সময় তাদের মৃত্যু হয়। এ দুর্ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা রত্নার ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে আহতাবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসার উদ্দেশে তাকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ১৭ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা (নং ১৮) দায়ের করেন। কথা বলছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত জাহাঙ্গীর আলম পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা সন্তান ছাড়াও তাদের পরিবারে ৮ ও ১০ বয়সী দুই ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙে গেছে বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বর্তমানে শিশুটি চিকিৎসাধীন। মামলা দায়ের করার পর দুর্ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে র‌্যাব।  

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে শিপনকে গ্রেফতার করা হয়। শিপন রাজশাহীর বাঘার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে শিপন নিহতদের গাড়ি চাপা দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সিপন জানায়, ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিলেন তিনি। এর মধ্যে তিনি একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মালামাল আনলোড করে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসেন।

১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে ট্রাকের মালিকের আমবোঝাই করে এবং পরে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলুবোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টায় রওয়ানা করেন। পথে তিনি হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন বলে জানায়। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয় তিনি। এরপর স্থানীয়রা ট্রাকটি থামায়, তখন সুযোগ বুঝে চালক শিপন ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। পরে বাস থেকে তিনি ময়মনসিংহ বাইপাসে নেমে যায়। সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে আরেকটি বাসে করে তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। সেখান থেকে তিনি তার পরিচিত বিভিন্ন চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন। সোমবার এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শিপন জানান, ৬/৭ মাস আগে থেকে তিনি শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। ট্রাকে করে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করতেন। এই ট্রাকের ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। ট্রাকের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ মালামাল পরিবহন করা হতো বলেও জানায় এই ঘাতক চালক।  

তিনি আরও জানান, আগে গাড়ির মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। বর্তমানে ভারী যানবাহন চালানোর জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স তার ছিল না।

গ্রেফতার আসামি শিপনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।