ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁশের বেড়া দেওয়ায় অবরুদ্ধ ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
বাঁশের বেড়া দেওয়ায় অবরুদ্ধ ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা

ফরিদপুর: ফরিদপুরে ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টণকে কেন্দ্র করে আয়েশা বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক মা'কে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই নারীর ভোরণপোষণ করা আরেক সন্তানের পরিবারকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এতে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা।

এমন ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুর পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের চরকমলাপুর এলাকায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হলে তারা বার বার সমাধানের আশ্বস্ত করলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।

জানা যায়, চরকমলাপুর এলাকার মৃত সামাদ শেখ ও আয়েশা বেগম (৬৯) দম্পতির সাত সন্তান রয়েছে। তারা হলেন- মৃত লতিফ শেখ, মৃত করিম শেখ, জিন্নাহ শেখ (৩৫), মনোয়ারা বেগম (৫০), রাশেদা বেগম (৪০), রেহানা বেগম ও হাজেরা বেগম। পৈত্রিক সম্পত্তি সাড়ে ৪২ শতাংশ জমি ভাইবোনদের মধ্যে বন্টণ নিয়ে চার বছর ধরে দ্বন্দ চলে আসছে। রাশেদা বেগম পরিবারসহ দুই ভাইকে নিয়ে এক বাড়িতে বসবাস করেন। আর তিনিই তার বৃদ্ধ মাকে দেখাশোনা করেন। এছাড়া মনোয়ারা বেগম নামে আরেক সন্তানও একই এলাকায় বসবাস করেন।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাশেদা বেগম ও তার বৃদ্ধ মায়ের অংশের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়িতে প্রবেশ বা বের হওয়ার মতো কোনো পথ নেই। বাঁশের বেড়ার নিচ দিয়েই চলাফেরা করছেন তারা।

ভুক্তভোগী রাশেদা বেগম বলেন, আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তির মোট সাড়ে ৪২ শতাংশ জমি আছে। সাত ভাইবোন ও মায়ের অংশের মধ্যে আমার ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ আছে। আর আমার আরেক বোনের কাছে থেকে একই পরিমাণ সম্পত্তি আমি কিনে নিয়েছি এবং মায়ের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ জমি আমাকে লিখে দিয়েছেন। সবমিলে আমার ১০ শতাংশ জমি আছে। কিন্তু বড় বোন মনোয়ারা বেগম ও তার সন্তানদের কূ-বুদ্ধিতে অন্য ভাই-বোনরা সঠিকভাবে বন্টণ না করে ইচ্ছেমতো জমি বন্টণ করে নিয়েছে। তারা আমাকে জোর করে গর্তের মধ্যকার অংশ দেয়। সেখান থেকে বের হওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই।

তিনি আরও বলেন, মিমাংসা করার জন্য এ বিষয়টি নিয়ে আমি ফরিদপুর পৌরসভায় আবেদন করেছি। স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক খলিফা ও মহিলা কাউন্সিলর জোবায়ের নাহার কণাকেও মিমাংসা করে দেওয়ার কথা বলেছি। পরে পৌরসভা থেকে আমিন এসে কোনোরকম মাপঝোপ করেই চলে গেছে। তারা চূড়ান্ত কোনো সমাধান করে দেয়নি। এরই সূত্র ধরে কয়েকদিন আগে বড় বোন মনোয়ারা বেগম ও তার ছেলে মনির লোকজন নিয়ে এসে আমার ঘরের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে যায়। এতে আমার ও মায়ের ঘর থেকে রাস্তায় বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, মনোয়ারা বেগম ও তার সন্তানরা আমাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে জায়গা দখল করতে চান। আমাদের চলাফেরার পথ না থাকায় বর্তমানে আমার পরিবার ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌরসভার মেয়রের মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চাই।

রাশেদা বেগম বলেন, আমার আরেক ভাই লতিফের পৌনে ৫ শতাংশ জায়গা কিনে নেন একই এলাকার মেহেদী হাসান রিয়াদ। পরে তিনি জমিজমা নিয়ে ঝামেলা দেখে আমার কাছে বিক্রি করে দেবেন বলে এক লক্ষ পনের হাজার টাকা বায়না নেন। পরে আমার বড় বোন মনোয়ারা আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও রিয়াদকে চাপ দিয়ে সেই যায়গা কিনে নেন। কিন্তু রিয়াদ এখনও আমার বায়নার টাকা ফেরত দেননি।

এদিকে বৃদ্ধ আয়েশা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে রাশেদা আমাকে খাওয়াচ্ছে। অন্য সন্তানরা আমাকে মা বলেও ডাকে না। আজ আমাকে ওরা বেড়া দিয়ে আটকায় দিছে। আমি খুব কষ্টে আছি। বাঁশের নিচ দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে আমার কাপড়টাও ছিড়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক খলিফার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং অভিযুক্ত মনোয়ার বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। রাশেদা বেগম আমার কাছে এসেছিলেন। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জন্য বিষয়টি এখনো মিমাংসা করা যায়নি। তবে বিষয়টি মিমাংসার জন্য চেষ্টা করবো।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার থানাতে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।