ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

অপহরণের ১৯ দিন পর আ.লীগ নেতার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী উদ্ধার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
অপহরণের ১৯ দিন পর আ.লীগ নেতার বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী উদ্ধার

ফরিদপুর : আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অপহরণের ১৯ দিন পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে হেলাল খান নামে এক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি মাইক্রোবাসসহ অপহরণকারী ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (৭ আগস্ট) বিকেলে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে শনিবার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই রাতে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। হেলাল খান আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামের আলিম খানের (মৃত) ছেলে। শিরগ্রামে একটি সুতার মিল রয়েছে হেলাল খানের।

অপহৃত ব্যবসায়ীর ভাষ্য, গত ১৮ জুলাই রাতে তাকে বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু ফোন দিয়ে ডেকে নেন। বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। জিল্লু তাকে বলেন, চল ঘুরে আসি।

গাড়ির ভেতর তার হাত পা বেঁধে ফেলা হয়। বিভিন্ন স্থান ঘুরে তাকে নিয়ে রাখা হয় একটি ঘরে। তিনি জানালা খুলে ওই এলাকার একটি দোকানের সাইনবোর্ড দেখতে পান, যেখানে খুলনার ঠিকানা লেখা রয়েছে। তিনি বুঝতে পারেন তাকে খুলনা নিয়ে আসা হয়েছে। পরদিন জিল্লু নিজ আড়পাড়ায় তাকে নিয়ে আসেন। সেখানে হেলালকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়।

হেলাল বলেন, এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে যায়। এরই মধ্যে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দারি করেন জিল্লুসহ তার সহযোগীরা। আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাড়ি থেকে কেউ ফোন দিলে লাউড স্পিকারে কথা বলতে হতো। তারা শিখিয়ে দিতেন, আমি ব্যবসার কাজে বাইরে আছি। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি।

তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি চেকের পাতায়ও স্বাক্ষর করিয়ে নেয় জিল্লুসহ তার লোকজন। প্রতিদিনই আমাকে মারপিট করা হতো। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার মিলের একটি মেশিন ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। আমাকে দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে মেশিন বিক্রির কথা বলায়। কাস্টমার আসলে ওরা মিলে গিয়ে তাকে মেশিন বুঝিয়ে দিয়ে ওদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে নেয়।

হেলাল আরও জানান, আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লু এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েকমাস আগে বানা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ করায় বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সর্বশেষ আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা হয় অপহরণকারী জিল্লুর। আমার বড় ভাই থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি জানালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ আমাকে জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃত ব্যবসায়ী হেলাল খানকে আড়পাড়া গ্রামের আশরাফুজ্জামান মিয়া জিল্লুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় জিল্লু (৪৫), বোয়ালমারী উপজেলার ছুলনা গ্রামের পংকজ রায় (৪৩), চরনারানদিয়া গ্রামের রাকিব শেখ (৩২) ও আড়পাড়া গ্রামের মো. নিশানকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানের সময় একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, একটি নোয়া মাইক্রোবাস, দুটি মোবাইল ফোন ও সোনালী ব্যাংকে টাকা জমার একটি রশিদ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ২০২৬ ঘণ্টা, ৭ আগস্ট, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।