ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মধুমতির গর্ভে বসতবাড়ি, এখন আমরা যাব কই!

জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
মধুমতির গর্ভে বসতবাড়ি, এখন আমরা যাব কই!

মাগুরা: মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি নদীর পানি বাড়ায় ভাঙনের তীব্রতাও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুর গ্রামগুলোও নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।

প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে করে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা ও শত শত একর ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে মধুমতি পাড়ের মানুষের। কেউ কেউ ঘর ও মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। জমি ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে।

এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বাড়ি সরিয়েছি। আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবার। এবারও ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। দূরে কোথাও নতুন করে বাড়িঘর তোলার সামর্থ নেই, এখন কোথায় যাব আমরা।

এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলেছেন রেহেনা খাতুন নামে এক গৃহবধূ। তিনি উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামের হাসান কাজীর স্ত্রী। শুধু রেহেনা খাতুনই নয়; তার মত একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েও মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও রক্ষা করতে পারছেন না অনেকে।

সরেজমিনে নদী ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বসতভিটা ও গাছপালা মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত ঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বিক্রি করে দিয়েছেন গাছপালা। চোখের সামনে ভিটেবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নদী পাড়ের মানুষ।  

উপজেলার উত্তরে চরসেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালিশংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। এসব মানুষের দাবি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন রোধ না করা গেলে মধুমতি নদীতে সব বিলীন হয়ে যাবে।
 
মধুমতি নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, স্কুল, বাজার, মন্দির ও অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যাও। তাই তাদের দাবি স্থায়ী বাঁধের।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (মেম্বর) মো. মুরাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। কৃষিকাজ করে আমাদের সংসার চলে। নদী ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলে আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো? শুধু এই এলাকার আরও অনেক বসতভিটা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই নদী শাসনে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।

মহম্মদপুর আর এসকে এইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি মধুমতি নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, একটা পরিবার পাঁচ থেকে সাতবার বাড়ি সরিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাই নদীপাড়ের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।      
   
মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম মোমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা কিছুদিন আগে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক স্যার পরিদর্শন করেছেন এবং আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় গত বছরের মতো জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।