ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

১৩ দিন পর সিলেটের চা বাগানে সেই চেনা দৃশ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
১৩ দিন পর সিলেটের চা বাগানে সেই চেনা দৃশ্য ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: অবশেষে কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকদের একাংশ। আন্দোলনের দীর্ঘ ১৩ দিন পর দেখা মিলেছে সেই চিরচেনা দৃশ্যের।

সবুজ বাগান সতেজ হলো চা শ্রমিকদের স্পর্শে, পদচারণায়।  

বাগানের শোভা চা শ্রমিকরা। তাদের অনুপস্থিতি যেন বর্ণহীন হয়ে উঠেছিল চা বাগানের সবুজ প্রকৃতি।  

সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শহরতলীরর লাক্কাতুরা বাগানে চা উত্তোলনের কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকদের একাংশ। ফলে এ কয়দিনে বড় হওয়া কুঁড়ি উঠছে শ্রমিকদের ঝুঁড়িতে।   

তবে মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন আরেক পক্ষ। চা শ্রমিকদের ওই পক্ষ এখনও কাজে যোগ দেননি।
 
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সব শ্রমিক এখনও কাজে যোগ দেননি।   

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে সিলেটের লাক্কাতুরায় চা বাগান এলাকায় শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা রাতের আঁধারে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে একটি পক্ষ কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর শ্রমিকদের একাংশ কাজে ফেরায় বাগান মালিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।  

তবে আরেকটি পক্ষ এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, ৩০০ টাকা মজুরি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

কাজে না ফেরা শ্রমিকদের পক্ষে চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় বলেন, শ্রমিকরা ১৪ দিন ধরে না খেয়ে আন্দোলন করছেন। অথচ রাতের অন্ধকারে ১২০ টাকায় কাজে ফেরার হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল! আমাদের ন্যায্য দাবি ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন তবেই আমরা কাজে ফিরবো।

মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের এ দাবিতে মালিক পক্ষ সায় না দেওয়াতে ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান শ্রমিকরা।

তাদের আন্দোলন থেকে ফেরাতে দফায় দফায় বৈঠক চলে। গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।  

কিন্তু তাতে বেঁকে বসেন শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ওইদিন বিকেলে তারা ফের আন্দোলন শুরু করেন। পরে রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনে বৈঠক হলেও শ্রমিকদের বিভক্তির কারণে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।  

এ নিয়ে রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে চা শ্রমিকরা সিলেট এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।  

এরপর রোববার দিনগত রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং আওয়ামী লীগ নেতারা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু ওই বৈঠক থেকেও কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসেনি। বরং শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে অটল থাকেন।  

সর্বশেষ রোববার দিনগত রাতে মৌলভীবাজারে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানান চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে ফিরবেন শ্রমিকরা। তবে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নিজেদের দাবি জানাবেন। কিন্তু সোমবার সকালে চা শ্রমিকদের একটি পক্ষ ফের বেঁকে বসেন। তারা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে সোমবার দুপুর ১টার দিকে শ্রমিকদের একাংশ কাজে যোগ দিতে বাগানে যান। তারা চা পাতা তুলতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।