ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজবাড়ীর মিষ্টির সুনাম দেশজুড়ে

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
রাজবাড়ীর মিষ্টির সুনাম দেশজুড়ে

রাজবাড়ী: ভোজনরসিক বাঙালির কাছে মিষ্টি যেন এক অমৃত স্বাদের খাবারের নাম। মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ মেলা ভার।

আর সেটি যদি হয় সুস্বাদু তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক মিষ্টির নাম রাজবাড়ীর ‘ক্ষীর চমচম’। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে জেলাসহ দেশ ও দেশের বাইরে। ক্ষীর চমচম একটু রসালো হয়। চমচমের খাঁটি দুধের ছানার তৈরি মাওয়ার শুকনো গুঁড়া দিয়ে হয় ক্ষীর চমচম। যা এটিকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। ক্ষীর চমচম ছাড়াও খাঁটি দুধের ছানা ও মাওয়া দিয়ে তৈরি নানা পদের মিষ্টি তৈরি হয় রাজবাড়ীতে। মানুষের কাছে এসব মিষ্টির চাহিদা ব্যাপক।

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা দুগ্ধ খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে কারখানায় এনে দীর্ঘ সময় জ্বালিয়ে ছানায় রূপান্তর করে চমচম তৈরি করে। সে চমচম মিষ্টির রসের মধ্যে ভিজিয়ে রাখে। এছাড়া ছানা দিয়ে তৈরি নরম মাওয়াকে শক্ত মাওয়ায় পরিনত করা হয়। পরবর্তীতে মাওয়া ভেঙে চালনি দিয়ে চেলে গুড়া ক্ষীর বানিয়ে চমচমের ওপরে প্রলোপ দিয়ে তৈরি সুস্বাদু ক্ষীর চমচম।  

বর্তমানে দুধ, চিনি ও কারিগরদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম। তবে উৎসব পার্বনে দাম আরও বেড়ে যায়। বেশ মজাদার ও সুস্বাদু হওয়ায় জেলা ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচমের সুনাম ছরিয়ে পড়েছে বর্হিবিশ্বে অনেকে দেশে।  

এদিকে রাজবাড়ী জেলা শহরে বহু মিষ্টির দোকান থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি দোকানের চমচম ও মিষ্টি উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে ভাদু সাহা ও শংকর সাহার চমচম সর্বত্র পরিচিত। এছাড়া মিষ্টি বাড়ী, হোসেন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, বানিবহ দধি ভাণ্ডারসহ কয়েকটি দোকানের ক্ষীর চমচম বেশ জনপ্রিয়। ক্ষীর চমচম সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে অর্ডার করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেটজাত করে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরে। অনেকে আবার ব্যবসার জন্যে কম দামে কিনে ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে। মিষ্টির জগতে বহু বছর ধরেই রাজবাড়ীর চমচম বিখ্যাত।  

চমচমের পাশাপাশি পেয়ারা, সন্দেস, বর্ফি, কাটারীভোগ, রসগোল্লা, রসমালাই, কালোজাম, সাগর ভোগ, গোপাল ভোগ,স্পন্স মিষ্টিসহ বিভিন্ন পদের মিষ্টি রাজবাড়ীতে তৈরি হয়।

সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলা শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ক্রেতারা মিষ্টি কেনার জন্য মিষ্টির দোকানে ভিড় করেছেন।

রবিউল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, কাজের জন্য ঢাকায় থাকি। ঢাকার অন্য যে কোনো মিষ্টি থেকে রাজবাড়ীর চমচম ভালো ও অনেক সুস্বাদু। এর কারণে চমচম কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো। প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা করে দাম নিয়েছেন দোকানি।

সৌদি প্রবাসী নাসির হোসেন। ছুটিতে এসেছেন গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর মূলঘরে। পরিবারের সদস্য ও প্রবাসী বন্ধুদের জন্য কিনতে এসেছেন চমচম। তিনি বাংলানিউজেক বলেন, রাজবাড়ীর চমচম ভালো হওয়ায় কয়েকবার বিদেশে নিয়েছি। রাজবাড়ী জেলার এই মিষ্টি খেয়ে তার দেশি ও বিদেশি বন্ধুরা অনেক প্রশংসা করেছেন। আমার মতো অনেক প্রবাসী দেশ থেকে যাওয়ার সময় রাজবাড়ীর চমচমসহ অনান্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়।

আরেক ক্রেতা সমীর কুমার দাস বলেন, রাজবাড়ীর চমচমের দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম আছে। দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু। আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে বেড়াতে গেলে, ঢাকায় অফিসে গেলে, এমনকি ভারতে গেলেও তিনি রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম নিয়ে যান।

মিষ্টি বাড়ি নামে মিষ্টির দোকানের পরিচালক গৌড় ঘোষ, হোসেন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী ও বানিবহ দধি ভাণ্ডারের পরিচালক লিটন ঘোষ বাংলািনউজেক জানান, খাঁটি দুধের ছানা ও মাওয়ার কারণে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে সবকিছুর দাম ও কারিগরদের মজুরি বাড়ায় ৩৫০ টাকার নিচে প্রতিকেজি মিষ্টি বিক্রি সম্ভব হয় না। জেলায় বহু মিষ্টির দোকান থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি দোকানের ক্ষীর চমচম ভালো।

নির্মল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পরিমল কুমার সাহা জানান, নির্মল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ভাদু সাহা নামে পরিচিত। গরুর দুধ দিয়ে তারা মিষ্টি তৈরি করি। কোন গুড়া দুধ ব্যবহার করা হয় না। এর কারণে আমাদের দোকানের ক্ষীর চমচমের আলাদা সুনাম রয়েছে। মজাদার ও সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারা দেশের বাইরে আমাদের দোকানের মিষ্টি নিয়ে যায়। এই সুনাম ধরে রাখতে মিষ্টির মান আরও ভালো করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।