ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সকাল ৮টা থেকে অফিসের সুবিধা-অসুবিধা

মহিউদ্দিন মাহমুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
সকাল ৮টা থেকে অফিসের সুবিধা-অসুবিধা

ঢাকা: দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে অফিস করেছেন সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন সময়সূচিতে অফিস করার অনেকগুলো সুবিধার সঙ্গে কিছু অসুবিধার কথা জানিয়েছেন তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, নতুন সময়সূচিতে অন্যতম অসুবিধা হলো সকাল সকাল শহরে যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধি। সুবিধা হলো এখন পরিবারকে আগের চেয়ে বেশি সময় দিতে পারছেন চাকরিজীবীরা। রাতে আগে আগেই ঘুমাচ্ছেন এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার ভালো অভ্যাস গড়ে উঠছে। এর স্বাস্থ্যগত ভালো দিক আছে বলেও মনে করেন তারা।

সরকারি চাকরিজীবীরা বলছেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অফিসের নতুন সময়সূচি ভালো ফল দেবে।

সকাল আটটায় অফিস শুরু প্রথম দিন বুধবারের মতো বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। যেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব এলাকায় যানজট বেশি দেখা গেছে।

অনেক আগে থেকেই ঢাকায় ভয়াবহ যানজট প্রতিদিনের সমস্যা। নতুন সূচি অনুযায়ী অফিস এবং রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুল শুরুর সময় একই হওয়ায় সকালের দিকে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়েছে।

নতুন সময়সূচিতে ঢাকার যানজটে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। হানিফ ফ্লাইওভার, গুলিস্তানসহ যেসব এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেশি সেসব এলাকায় যানজট কমেছে। অন্যদিকে যেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি সেসব এলাকায় যানজটের তীব্রতা বেড়েছে।

এছাড়া আগে সকাল ৮টার পর থেকে দুপুর ১২টা-১টা এবং বিকেল ৫টার পর থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত যানজট থাকতো। এখন সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০/১১টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা-সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যানজটের তীব্রতা বেশি থাকে।

সচিবালয়ে অফিস করেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, সকাল বেলায় রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম থাকায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আবার প্রাইভেট কারের সংখ্যা বেশি থাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। নতুন সময়সূচিতে স্কুল এবং অফিসের সময় প্রায় একই হওয়ায় যানজটের তীব্রতা বেড়েছে।

স্কুলে সন্তানকে পৌঁছে দেওয়ার অসুবিধার কথা জানিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, তিনি এখন আর আগের মতো সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারছেন না। এ নিয়ে তাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতাও আছে। সচিবালয়ে অফিস করেন আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন সময়ে তার সুবিধা হয়েছে। এখন তিনি সন্তানসহ একবারে বাসা থেকে বের হন এবং সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে সরাসরি অফিসে চলে আসেন।

তিনি বলেন, স্কুল, বাসা ও অফিসের দূরুত্বের ওপর ভিত্তি করে নতুন সময়সূচি কারো জন্য অসুবিধার আবার কারো জন্য সুবিধাজনক হয়েছে।

আব্দুল গফুর নামে একজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, এখন মনে হচ্ছে দিন দুই ঘণ্টা বড় হয়ে গেছে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠায় দিনটাকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে। বিকেলে ও রাতে অনেক সময় পাচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রথম প্রথম অভ্যস্ত হতে অনেকের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটা ভালোই হবে মনে করছি।

গফুর আরও বলেন, সময়সূচি যাই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। এই সংকট নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিক হওয়া জরুরি। শুধু যানজট কমাতে পারলেও জ্বালানির ব্যাপক সাশ্রয় হবে।

নতুন সময়সূচিতে সুবিধার কথা জানিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত মিজানুর রহমান নামে একজন জানান, তার সুবিধা হয়েছে। বিকেল ৩টায় অফিস শেষ করে তিনি এখন আগের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা আগে বাসায় যেতে পারছেন। ফলে তিনি তার সন্তান ও পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারছেন।

আগে সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েকে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসার সুযোগ পেতেন না। এখন সেটা করতে পারছেন বলে জানান মিজানুর।

সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, সকালে অফিস করার একটা স্বাস্থ্যগত সুবিধা আছে। আগে অফিস শেষ করে জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা, কখনো রাত হতো। শরীরের ক্লান্তি, যানজটের ধকল, মানসিক চাপ এগুলো নিয়ে ঘুমাতে যেতাম। ঘুম থেকে উঠে আবার ধকল।

তিনি বলেন, এখন বাসায় পৌঁছে সন্ধ্যার আগেও হাতে সময় পাচ্ছি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতে বেশ সময় পাচ্ছি। সন্তান পরিবারকে সময় দিয়েও আগে আগে ঘুমাতে যাচ্ছি। রাতে বেশ প্রশান্তির ঘুম হচ্ছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠছে। এটা শরীর ও মন দুটোর জন্যই ভালো মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।