ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ড্রেসকোড না মানায় তিরস্কার, বিষপানে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২২
ড্রেসকোড না মানায় তিরস্কার, বিষপানে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

নরসিংদী: ড্রেসকোড না মানায় নরসিংদীর শিবপুরে স্কুল শিক্ষার্থীকে তিরস্কার ও বেত্রাঘাত করায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছে প্রভা (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রী।  

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মেয়েটির মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা গাঁ ডাকা দিয়েছেন। প্রভার মৃত্যুর আগে শিক্ষিকাকে দায়ী করে থানায় অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া।

প্রভা শিবপুররের বাঘাবো জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে।

স্কুল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রভা শিবপুর সরকারি পাইলট  মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলের নির্ধারিত রং সাদা সালোয়ার কামিজ ও পায়জামা। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও সে স্কুলে আসে। প্রভা স্কুলে আসার সময় সাদা সালোয়ার কামিজ পড়লেও সাদা পায়জামার পরিবর্তে গ্রে কালারের গেঞ্জির টাউজার পরিধান করে স্কুলে আসেন। স্কুলে টিফিন শেষে বেলা পৌনে ৪টার দিকে শারীরিক চর্চার ক্লাস নিচ্ছিল স্কুলের শিক্ষক নার্গিস সুলতানা কনিকা। ওই সময় ড্রেসকোড না মানার কারণে প্রভাকে তিরস্কারসহ কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন শিক্ষিকা কনিকা। এরপর ক্ষোভে ও অভিমানে স্কুল থেকে বের হয়ে বাজার থেকে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট কিনে খেয়ে ফেলে প্রভা। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রভা শিবপুর থানায় যায়। সেখানে গিয়ে থানায় কর্মরত ডিউটি অফিসারের কাছে স্কুল শিক্ষিকা নার্গিস সুলতানা কনিকার নামে অভিযোগ দায়ের করে। স্কুলছাত্রী অভিযোগে উল্লেখ করে, ওই শিক্ষিকা সবসময় কারণে অকারণে তাকে তিরস্কার করেন এবং সব শিক্ষার্থীর সামনে অপমান করেন। তাই সে বিষ পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা দায়ী। এর পরপরই প্রভা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে থানা পুলিশ দ্রুত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে খবর দেন এবং প্রভাকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেয়েটিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকেই স্কুল শিক্ষিকা গা ডাকা দিয়েছেন।  

শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ডেসকোড না মানার কারণে স্কুলছাত্রীকে শাসন করা হয়েছিল। এতে সে অপমানিত বোধ করে এ পথ বেছে নিয়েছে। আমারা জানার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে বাচাঁনোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।  

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিকেলে এক শিক্ষার্থী থানায় আসেন। এসে স্কুলের শিক্ষিকা কনিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগে উল্লেখ করেছে, প্রভার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা কনিকা দায়ী। ওই শিক্ষিকা তাকে প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করেন, তাই সে ইদুর মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এই কথা বলতে বলতেই স্কুলছাত্রী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।  

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীর অভিযোগটি আমরা আমলে নিয়ে শিক্ষিকাকে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।