ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংসদ সদস্য শিবলীর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
সংসদ সদস্য শিবলীর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ

ঢাকা: দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে মাহালীদের কবরস্থানের জমি দখল করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণের অভিযোগও করা হয়েছে।

সাঁওতাল জনগোষ্ঠী এ অভিযোগ করে। তারা জানিয়েছে, সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেনে তাদের জমিতে স্বপ্নপুরী নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। সাঁওতাল ও মাহালীদের কবরস্থানে করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। জমি ফেরত চাওয়ায় তাদের জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তা ও জমি ফেরতের দাবি করেছে এ জনগোষ্ঠী।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ি, জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরী নামে গড়ে ওঠা বিশাল ও আধুনিক বিনোদনকেন্দ্রটি তাদের পূর্বপুরুষদের জমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে। এই পার্কে আছে বিলাসবহুল হোটেল মোটেল, লেক, নানা ধরনের রাইড। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিনোদন কেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালী সম্প্রদায়ের তিনটি কবরস্থানও আছে। একটি কবরস্থানের ওপর সাংসদ শিবলীর বিলাসবহুল বাড়ি নির্মিত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী বিশুরাম মরমু বলেন, বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রটি। কিন্তু এ স্বপ্নপুরী যে শত শত সাঁওতালের জীবনের স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নিয়েছে তা কেউ জানে না। কবরস্থানের ওপরে গড়ে ওঠা বিলাসবহুল বাড়িটি প্রতিনিয়ত সাঁওতাল সম্প্রদায়কে কষ্টের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে রাখে।

আমরা সাঁওতাল ও মাহালী জনগোষ্ঠীর মানুষ এই ভূখণ্ডের সকল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলনসহ সমস্ত আন্দোলনে সাঁওতালরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। আশা ছিল স্বাধীন দেশে আমরা মর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচার পরিবেশ পাবো। কিন্তু আমাদের জীবন, সম্মান ও সম্পদের ওপর আক্রমণ তো কমছেই না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েই চলেছে। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। বিভিন্নভাবে সেখান থেকে তারা উচ্ছেদ হচ্ছে, জমি হারাচ্ছে; এমনকি জমি রক্ষা করতে গিয়ে জীবনও হারাচ্ছে।

উপস্থিত সাঁওতাল জনগোষ্ঠীরা অভিযোগ করেন, জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তাদের পূর্বপুরুষের জমি-জমা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত সাংসদ জনাব শিবলী সাদিক ও তার আপন চাচা দেলোয়ার হোসেন একজন কুখ্যাত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতা। তারা দুজন মিলে বিশাল এক বাহিনী লালনপালন করেন। এদেরকে দিয়ে এহেন কোনো অপরাধ কর্ম নাই যা তারা করেন না। সাঁওতালদের জমিই শুধু তারা দখল করে নাই, বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমিও তারা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত বক্তব্যে।

ভুক্তভোগী গণেশ হেমরম বলেন, আমার জমির উপরে ওরা ময়লা ফেলে। আমার বাপ দাদার কেউই তার কাছে জমি বিক্রি করে নাই। তাও তারা একই কথা বারবার বলে। এক জমি আমরা কয়বার বিক্রি করছি তাহলে? গ্রামের মানুষ ভয়ে কথা বলে না। আমার বাপ দাদার জমি আমি ফেরত চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উকিল হেমব্রমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সাঁওতাল অধিবাসী গণেশ হেমব্রম, রবেন মার্ডি, খুকুমনি হেমব্রম, অখিল হেমব্রম, লুইস হাসদা।

সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, শায়খুজ্জামান বাদশা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।