ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইলিশ ধরতে মধ্যরাতে সাগর যেতে প্রস্তুত জেলেরা

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
ইলিশ ধরতে মধ্যরাতে সাগর যেতে প্রস্তুত জেলেরা ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টায়। এ জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জেলেরা মাছ ধরার জন্য সাগর তীরে ফিরতে শুরু করেছে।

রাত ১২টার পর থেকেই গভীর সাগরে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার হাজার হাজার মাছধরার ট্রলার।

দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপুল মাছ ধরা পড়ার আশা করছে জেলেরা। তারা বলছেন, ২২ দিন ধরে সাগরে নামায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ অবাধে বিচরণ ও বংশবিস্তার করেছে। ফলে এবার বড় আকারের প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

পাথরঘাটা উপজেলার জেলে ইসমাইল বলেন,মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে শ্রমিক পেশায় নিয়োজিত ছিলাম। পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকম কষ্ট করে দিনগুলো পার করেছি। তবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়লে আমাদের সব দুঃখ কষ্ট ঘুচে যাবে।

তিনি বলেন, সরকার থেকে আমাকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় নাই।

সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের জেলে আহমেদ সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। সাগরে যেতে পারবো বলে খুশি লাগছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলেদের বেশ কিছু মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ট্রলার ভালো আছে তারাই সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অধিকাংশ ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাগরে নামতে পারছে না। ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক টাকা লাগে মেরামত করতে। যা অনেক মালিক বহন করতে না পেরে স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে মেরামত করে।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ ব্যবসায়ী শহিদুল বলেন, মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ২২ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়েছি। তাই বাড়ি থেকে এসেছি তিনদিন আগে। এসে জাল, নৌকা ঠিক করেছি। সব ঠিকঠাক করে আজকেই রওনা দেব মাছ ধরতে। দীর্ঘ ২২ দিন বেকার ছিলাম। এখন থেকে আবার কর্মব্যস্ত জীবন শুরু হলো।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গভীর সমুদ্রে ও সুন্দরবনে এখন দস্যুতার ভয় বিগত বছরগুলো তুলনায় কমেছে। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যাচ্ছে জেলেরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে লাভের পাল্লা ভারী করেই মৌসুম শেষে বাড়িতে ফিরতে পারবেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার জেলেরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাংলানিউজকে বলেন, জেলেরা ২২ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই নিষেধাজ্ঞার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকারে যেতে প্রস্তুত।

এক নজরে বরগুনা জেলার সাধারণ তথ্যাবলী-

আয়তন ১৯৩৯.৩৯ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩০ হাজার, উপজেলা ৬টি, ইউনিয়ন ৪২টি, মৎস্য চাষি ৮২ হাজার ২২৬ জন, মৎস্যজীবী ৪৭ হাজার ৪৪০ জন, নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার ২৭৭ জন, মৎস্য আড়ত ২০৮টি, মৎস্য হ্যাচারি সরকারি -দুটি, বেসরকারি-চারটি, চিংড়ি হ্যাচারি একটি (বেসরকারি), মৎস্য নার্সারি ৬৯টি (বেসরকারি), সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র একটি (পাথরঘাটা), সরকারি পুকুর ৪১৪টি, বেসরকারি পুকুর ৮৫ হাজার ৭৩১টি, জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন, রেণু উৎপাদন এক হাজার ৮২৫ কেজি (সরকারি বেসরকারি), চিংড়ির পি.এল উৎপাদন ৪ লাখ (বেসরকারি), ইলিশ উৎপাদন ৭৩ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন।

বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্য ৩৭ হাজার ৭০ জন। যা গত বছরের তুলনায় ২৩৯ জন কম।

জেলায় মাছের উৎপাদন ও চাহিদা-

মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। মাছের মোট চাহিদা ২৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৮২ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন।

বিগত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন-

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩০৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৪৭০০ মেট্রিক টন। মোট ৯২০০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩৫৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৫১৫০ মেট্রিক টন।  মোট ৯২৫০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৮৩৭১ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৮০০৯৭ মেট্রিক টন। মোট ৯৮৪৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৯৬৭৪ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৮৩৫৮২ মেট্রিক টন। মোট ১০৩২৫৬ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ২১২৪০ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৯০১২৬ মেট্রিক টন। মোট ১০৯০৭০ মেট্রিক টন উৎপাদন।

বিগত পাঁচ বছরে ইলিশ শিকার-

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সাগরে ৬০০৭০ মেট্রিক টন, নদীতে ১৭৩৫, মোট ৬১৮০৫ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সাগরে ৬২২৭৭ মেট্রিক টন, নদীতে ২০২১, মোট ৬৪৩৬৮ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সাগরে ৬৬৯১৭ মেট্রিক টন, নদীতে ৪৮২২, মোট ৭১৭৩৯ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাগরে ৬৭০৩৩ মেট্রিক টন, নদীতে ৪৮৫০, মোট ৭১৮৮৩ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০- এ সাগরে ৬৮২৩০ মেট্রিক টন, নদীতে ৫১৫১, মোট ৭৩৩৮১ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।