ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় জেলা প্রশাসনের সব অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের

ডিষ্ট্রিক্টকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
পাবনায় জেলা প্রশাসনের সব অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের

পাবনা: পাবনা জেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে অভিযুক্ত করে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন।

এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুই ভাগে বিভক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাসহ শারীরিক ভাবে লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা সদরের ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার ১৯ (নভেম্বর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তারা সম্প্রতি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।  

একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা বাবলুর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দোষিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তারা। অন্যথায় জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ আয়োজিত সরকারি ও জাতীয় দিবসের নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বর্জন করবে বলে ঘোষণা করা হয়। সব জাতীয় দিবস নিজেদের মতো করে পালন করা হবে বলেও জানান তারা।


লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার। তারা অভিযোগ করে বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কাজ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু বের হলে তাকে অর্তকিত হামলা করা হয়। অভিযুক্ত মেজর অবসরপ্রাপ্ত ডা. মনসুর তার হাতে থাকা ছাতা দিয়ে আঘাত করেন তাকে। এ ঘটনায় জেলায় ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, গেজেট ও লাল মুক্তিবার্তা বাতিলকৃত স্বব্যাখ্যায়িত দাবিদার অমুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার আলোকে একদিন পরে তারা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠালে সেখানে বৈঠক অুনষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাতিলকৃত অভিযুক্ত অমুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে জড়িত মেজর অবসর প্রাপ্ত ডা. মনসুর ও সামসুল আলম পানসেনসহ এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।

বক্তারা বলেন, গত ১৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) পাবনা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ভারত থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে জেলা সদরের গেজেটসহ লাল মুক্তিবার্তা বাতিল ও জামুকায় অভিযুক্ত অমুক্তিযোদ্ধার সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ বৈঠকে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুস সোবাহানের সাফাই সাক্ষী নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে নাসিরকে বহিষ্কার না করা হলে বৈঠক বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সভায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব তার বক্তব্যে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি সুজানগর যুদ্ধে অংশ নেননি। একইসঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধে তুফানি ব্যাটেলিয়ান বলে কোনো বাহিনী ছিলো না বলে মন্তব্য করেন। আমরা এ ধরনের মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিবকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া আহ্বান জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর আলম বাবলুর লাঞ্চিতকারী অপরাধিদের যতক্ষণ আইনের অওতায় না আনা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ আয়োজিত সরকারি ও জাতীয় দিবসের নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বর্জন করবে। একইসঙ্গে সব জাতীয় দিবস নিজেদের মতো করে পালন করা হবে বলেও জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিয়ার রহমান সাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মাহাবুববুর রাশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।