ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরিকল্পনা ছিল চার জঙ্গি ছিনতাইয়ের, সমন্বয়ক অমি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
পরিকল্পনা ছিল চার জঙ্গি ছিনতাইয়ের, সমন্বয়ক অমি

ঢাকা: ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি। যাদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে তাদেরকে আদালতে জানান তিনি।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অমিকে (২৪) গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সিটিটিসি জানায়, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা মোহাম্মদপুরের যে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিল, সেই একই মামলায় অমিও আসামি। সে জামিনে থাকায় বাইরে থেকে আসামি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় অংশ নেন।

সিটিটিসি আরও জানায়, যাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাদের সঙ্গে একই সময় হাজিরা দেন অমি। ফলে বিষয়টি তাদের আগে থেকেই জানান তিনি।  এমনকি ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের হাত খরচের অর্থও আদালতে সরবরাহ করেন অমি।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান মোঃ. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার-নামীয় আসামি অমি। তিনি সংগঠনে রাফি হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে সে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে হিজবুত তহরীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকার বিরোধী অপ-তৎপরতার কারণে ২০১০ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১১ সালে জামিনে বের হয়ে আনসার আল ইসলামে উজ্জীবিত হয়ে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। তখন সংগঠনের নাম ছিলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।

তিনি আরও বলেন, অল্প দিনের মধ্যে অমির দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তাকে আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। এরপর অমি সিলেট অঞ্চলের অনেককে সংগঠনে নিয়োগ দেয়। দক্ষ নেতৃত্ব, সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ ও অতি সাহসী কর্মী হিসেবে সে সংগঠনের মূল ব্যক্তি বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর অমিকে সংগঠনের আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অমির মাধ্যমে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি মাইনুল হাসান শামীমকেও আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ১৬ সালে যখন ব্লগার হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনা সংগঠিত হয়; তখন সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর-বাড্ডা এলাকায় তাদের আস্তানা পায়। সে সময় অমিকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান জানান, ১৭ সালে অমি জামিনে আবার আবার ছাড়া পায়। জামিন পাওয়ার পর থেকে সে নিয়মিত হাজিরা দিতো, এর ফলে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। যখন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়, তখন অমির মাধ্যমে বন্দি জঙ্গিদের অবগত করা হয়। যারা ছিনিয়ে নিবে, তাদের সঙ্গেও সমন্বয় করেন অমি। তারই অংশ হিসেবে ২০ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে।

সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময় অমি বেশ কিছু নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে আসতো। যা বন্দিদের বিভিন্ন খরচ নির্বাহের জন্য সরবরাহ করতো। ঘটনার দিন ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদেরও খরচের জন্য কিছু অর্থ দেয় সে। তাকে রিমান্ডে এনে টাকার উৎসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলে আমরা গ্রেফতার করবো এবং আপনাদের জানাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, সেদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ১২ জঙ্গিকে আনা হয়। সেখান থেকে ৪ জনকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল। বিষয়টি ৪ জঙ্গিই জানতেন। তাদের প্রধান প্রায়োরিটি ছিলো আরাফাত এবং দ্বিতীয় ছিল শামীম। শামীমকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাতকে আটকে রাখতে সক্ষম হয় পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আনসার আল ইসলাম কাট-আউট পদ্ধতিতে তাদের অপারেশনগুলো সম্পন্ন করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে। ছিনতাইয়ের বিষয়টি চার জঙ্গিই জানতো। এর বাইরে আর কেউ জানতো কি-না আমরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। হয়তো এই বিষয়টি কারাগারের ভেতর থেকেও জানতে পারে অথবা হাজিরা দেওয়ার সময়ও জানতে পারে।

ওই চার জঙ্গিকে একসঙ্গে আনা কিংবা একসঙ্গে হ্যান্ড-কাফ পরানোর বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারও অবহেলা বা গাফিলতি রয়েছে কি-না এগুলো যাচাইয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা শুধু অপারেশনাল বিষয়গুলো দেখছি।

জামিনে থাকা জঙ্গিদের মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান মোঃ. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা তাদেরকে মনিটরিং করি। তারা ঘরে বসেও গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। আমরা কিছু দিন আগে দুই জন ডাক্তারকে ধরেছি, যারা প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

জামিনে থাকা জঙ্গিরা হুমকি কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিস্ক অবশ্যই রয়েছে। রিস্কটা মাথায় রেখেই আমরা তাদেরকে মনিটরিং অব্যাহত রাখি।

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের এখনও গ্রেফতার করতে না পারা প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলাম সবচেয়ে বেশি কাট-আউট সিস্টেম ফলো করে। এটি ব্রেক-ডাউন করতে একটু সময় লাগে, একটু সময় দিন। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ অনেক জটিল বিষয়। এটা সাধারণ অপরাধ বা খুনের সঙ্গে মেলালে হবে না। ৫-১০ দিনের বিষয় এখানে অবান্তর।

মেজর জিয়ার অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অবস্থান জানলে গ্রেফতার করবো। অবস্থান জানা মাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে। তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে।
অমিকে রিমান্ডে এনে বাইরে কারা ছিল, ভেতরে কোনো প্রস্তুতি ছিল কি-না অথবা যত ধরনের প্রশ্ন সামনে আসে এর সবকিছু আমরা জানার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
পিএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।