ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

দু’দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবো

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪
দু’দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবো

নিউইয়র্ক: ড্যান মজীনা নিজের মুখেই বললেন, আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতেই নিউইয়র্কে তার মতবিনিময় মিশন।

রোববারও সারাদিনমান পায়ে হেঁটে একের পর মতবিনিময় করলেন।

ঘুরে বেড়ালেন নিউইয়র্কের ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা জ্যাকসন হাইটসে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবার কথা যেমন বললেন তেমনি বললেন ভবিষ্যতের বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার কথাও।
তার দেশ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকবে, সহযোগিতা দেবে। সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা রক্ষায়। বাংলাদেশ যাতে প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগাতে পারে, পুরো এশিয়াজুড়ে ব্যবসা ও বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনাকে বাস্তবে রুপ দিতে পারে একাজে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে।

ড্যান মজীনা নিজেকে সব সময়ই ‘সেতুবন্ধ রচনাকারী’ বলে মনে করেন। একথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সেতু বন্ধনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য।

আর এ ম্যান্ডেট নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রাষ্ট্রদূত হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছেন। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনেক গভীর ও শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত।

টানা দুদিন নিউইয়র্কে ম্যারাথন মিটিং করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। মার্কিন দূতাবাসের ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ আওতায় ড্যান মজিনার এ কর্মসূচি সরকারী কর্মসূচি। একথা জানিয়েছে খোদ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তবে ড্যান মজিনার এ-মিশন দেশে ও প্রবাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা জল্পনারও জন্ম দিয়েছে।



মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশীয় বিভাগীয় আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর মিঃ এরিক আইডা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ড্যান মজীনা ১০ দিনের কর্মসূচিতে নিউইয়র্কের পর টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ায়ও যাবেন। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে প্রতিদিনই মজীনা অক্লান্ত সভা করে চলেছেন প্রবাসী বাংলাদশিদের সাথে।

 ‘বাংলাদেশকে সত্যিই খুব  ভালবাসেন  রাষ্ট্রদূত মজীনা’-- যোগ করেন এই কর্মকর্তা।   

রোববার সকালে উডসাইডের গুলশান টেরেসে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাথে প্রাতঃরাশ বৈঠক, দুপুরে আমেরিকা বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর জাস্টিস-এর আয়োজনে একই স্থানে মধ্যাহৃভোজ ও সভা,  এরপর পায়ে হেঁটে বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখা, বিকেলে শিগগিরই সম্প্রচারিতব্য টাইম টেলিভিশন স্টুডিওতে বিশেষ মতবিনিময় এবং সন্ধ্যায়  ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এর আয়োজনে নৈশভোজ ও মত বিনিময়সভায় বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা।

জ্যাকসন হাইটসে মান্নান গ্রোসারি, খামারবাড়ি খাবার বাড়ি, অবকাশ, ফুডকোর্ট ও আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলা রাস্তায় হকারদেও ব্যবসার খোঁজ খবর নেন রাষ্ট্রদূত। এসময় তিনি বাংলাদেশি বিভিন্ন শাক সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ সম্পর্কে যেমন জানতে চান তেমনি  রেস্তোরাঁগুলোতে খদ্দেরদের সাথে কথা বলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে তিনি অনেক রসিকতাও করেন। পথে থেমে থেমে বাংলাদেশের গল্প করেন, যেমন বরিশালে তার ভাললাগা, কূয়াকাটার গল্প, দিনাজপুরের লিচু, পাবনার চিনিগুঁড়া চাল আর ইলিশ মাছের গল্প।

বাংলানিউজের সাথে কিছু সময় দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় তিনি বলেন, চাকুরি থেকে অবসরের পর তিনি বাংলাদেশ বেড়িয়ে দেখবেন। বরিশালে যাবেন। বাংলাদেশ সত্যিই ভীষণ সুন্দর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিনি বাংলাদেশ’ বলে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসে এসে মনে হয়েছে তিনি তার নিজের মানুষের কাছে এসেছেন।

উল্লেখ্য  জ্যাকসন হাইটসে প্রবাসীরা ড্যান মজীনাকে বিভিন্ন উপহার দিয়ে তাদের ভাললাগা প্রকাশ করেছেন।



রোববার দুপুরে গুলশান টেরেসে, আমেরিকা আমেরিকা বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর জাস্টিসএর আয়োজনে মধ্যাহৃভোজ ও মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে কিভাবে সবোর্চ্চ পর্যায়ে নেওয়া যায় সেটা সম্ভব করার জন্যই  পর্যন্ত নিতেই বাংলাদেশিদের সাথে তার অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ের এই মিশন।

টাইম টেলিভিশন স্টুডিওতে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন,বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ভুলে গেলে চলবে না।

সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনাতে ডেমোক্রেসি অ্যালায়েন্স আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ড্যান মজীনা বলেছেন  ‘আমেরিকার জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইজ দ্য মডারেট, টলারেন্ট সেক্যুলার অলটারনেটিভ অব ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’।

তিনি বলেন বিশ্বের শীর্ষ গামেন্টস রপ্তানিকারক দেশ হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পণ্য হবে ‘গ্লোবাল ব্রান্ড’।

মজীনা আরো বলেন, নিজেই বিকিশিত হবে বাংলাদেশের গামেন্ট শিল্প। এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্ট  ‘শীর্ষ ব্রান্ড’ হবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস।
মজীনা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়ান টাইগার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার হবে ‘বাংলাদেশ’।

চট্রগাম বন্দরে এখন আর আগের মত সমস্যা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করেন মজীনা।

প্রবাসীদের সাথে ড্যান মজীনার ম্যারাথন মতবিনিময় সভা নিয়ে বিরোধী দুই রাজনৈতিক শিবিরে কৌতূহলের শেষ নেই। তবে সব মিলিয়ে সরকারবিরোধীরা মতবিনিময় সভাগুলোতে দেওয়া ড্যান মজীনার বক্তব্যে অনেকটাই হতাশ হয়েছেন বলেই জানা গেছ্।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ