৩৩.
বিপদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আস্থার কাউকে মনে পড়ে। পলাতক জীবনের শুরুতেই অজানার পথে নেমে আমার ‘উড়াল যাত্রা’র কথা মনে এলো।
-পালাও। আমাকে নিয়ে যেখানে পারো পালিয়ে যাও।
সাইফুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো:
-কি কন স্যার! বিষয় কি?
আমি তাকে পুরো ঘটনা জানিয়ে বলি:
-আমি গভীর চক্রান্তের শিকার। আমার প্রতিপক্ষ আমাকে ষড়যন্ত্রের জালে আটকে ফেলেছে। একদিকে ধাওয়া করছে পুলিশ আর অন্য দিকে সন্ত্রাসীরা। আমাকে এখন নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
সাইফুল বিজ্ঞের মতো বললো:
-অবস্থা গুরুচরণ। তয় ভয়ের কিছু নাই। বাংলাদেশে পলাইয়া থাকন বড় সহজ। একবার আমি সিএনজি লইয়্যা ভাইগা গেছিলাম। এখনও ধরতে পারে নাই।
আমি উদ্বেগের সঙ্গে বলি:
-সে তো বুঝলাম! এখন কি করা দরকার সেটা বলো?
আমার কথায় ড্রাইভার সাইফুল খানিক ভেবে সিরিয়াস হয়ে বললো:
-স্যার, প্রথমে ঘণ্টা খানেক উল্টা-পাল্টা ঘুরি। দেখি, পেছনে কেউ আছে কিনা। এর মধ্যে চিন্তা করি, কই যাওয়া যায়। এখনই কোথাও যাওয়া ঠিক না। পেছনে ফেউ থাকলে জায়গা চিইন্যা ফেলবে।
আমি তাকে বলি:
-তাই করো সাইফুল।
সাইফুল ‘উড়াল যাত্রা’ শুরু করছে। সে এখন পঙ্খীরাজের মতো ঢাকা শহরের এ রাস্তা, সে রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার মাথায় একটি শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘ক্রোধ’। আমি কার ক্রোধে আক্রান্ত হয়েছি? বিশেষ কোনও ব্যক্তির, না সিস্টেমের? আমার মধ্যেও জ্বলছে ক্রোধাগ্নি। একটি নীলাভ অন্ধকার জগতকে পুড়িয়ে ফেলার আগুন নিজের মধ্যে ধারণ করে আমি উত্তেজনায় শিহরিত হচ্ছি। মহাকবি হোমারের ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যের মূল থিম অ্যাকিলিসের ক্রোধ। ১৫৬৯৩ লাইনের বিশাল মহাকাব্যের প্রথম শব্দটিই 'সবহরং', মানে ‘ক্রোধ’। ‘ইলিয়াড’-এর বিষয়বস্তু যুদ্ধ। আমিও একটি যুদ্ধের মধ্যেই আছি। ক্রোধের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পর্ক যথেষ্ট নিবিড় ও যুক্তিগ্রাহ্য। ক্রোধ, হিংসা, লোভ থেকেই শুরু মানব ইতিহাসের অধিকাংশ যুদ্ধের। ‘ইলিয়াড’-এ অ্যাকিলিস ক্রোধোন্মাদ তার বস আগামেমননের ওপর। কারণ আগামেমনন কেড়ে নিয়েছে অ্যাকিলিসের যুদ্ধে পাওয়া পুরস্কার সুন্দরী ব্রাইসিয়িসকে। অপমানিত অ্যাকিলিস ফুঁসে উঠল ক্রোধে। ঘোষণা দিল, সে যুদ্ধে আর অংশ নেবে না। ক্রোধ থেকেই তার এই সিদ্ধান্ত। যার পরিণতিতে ট্রোজানদের হাতে গ্রিকদের প্রায়-সমূহ পরাজয়। এক মানুষের ক্রোধ হয়ে দাঁড়াল হাজার হাজার গ্রিকের মৃত্যুর কারণ। এটুকু অ্যাকিলিসের প্রথম ক্রোধের পরিণতি, যা আছে ‘ইলিয়াড’-এর মোটামুটি অর্ধেক জুড়ে। এরপর ট্রোজান বীর হেক্টরের হাতে অ্যাকিলিসের প্রিয়তম বন্ধু প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যু হলে জেগে উঠে অ্যাকিলিসের দ্বিতীয় দফা ক্রোধ। প্রথমবারের ক্রোধে যে মানুষ যুদ্ধের মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁবুতে বসে ফুঁসেছে, দ্বিতীয়বারের ক্রোধে সে এখন বন্ধু হত্যার প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত। কাহিনীর উপরিতলে অ্যাকিলিসের দু’ দফা ক্রোধের উদ্গিরণ, যার অন্তরালে বয়ে চলেছে এক চির ট্র্যাজিক বোধ-অ্যাকিলিস জানে, বন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধে নামলে ট্রোজানদের হাতে তার মৃত্যু হবে। তবুও সে অবিচল। এটাই ‘ইলিয়াড’। অ্যাকিলিস ও আরও অনেকের নিয়তির কথা। ‘উড়াল যাত্রা’য় বাইরের ও ভিতরের ক্রোধের বিন্যাসে আমি এ কোন নিয়তির হাতে বন্দি? আমার জন্মশহরে আমাকেই পলাতক নিয়তি নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে?
ড্রাইভার সাইফুলের গলা শোনা গেল:
-স্যার, কেউ ফলো করে নাই। গ্যারান্টি।
আমি কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করি:
-এখন কি করবে সাইফুল?
সে বিজ্ঞের মতো উত্তর দিল:
-মাথায় একটা খাসা বুদ্ধি আইছে স্যার!
আমি উৎসাহিত হই:
-কি বুদ্ধি?
সে বুদ্ধিটা আমাকে খোলাসা করে বলে:
-পালানোর জায়গা স্যার আমার কাছেই আছে!
আমি এবার বেশ উত্তেজিত হয়েই জানতে চাই:
-কোথায়?
সাইফুল সিএনজির স্পিড কমিয়ে বেশ স্থির ভাবে বলতে থাকে:
-স্যার, আপাতত আমাগো বস্তিতে ঘাপটি দিয়া থাকেন। কেউ চিন্তাও করতে পারবো না যে, আপনার মতো একজন মানুষ এই বস্তিতে থাকতে পারে।
ভেবে দেখলাম, সাইফুল মন্দ বলে নি। উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ালে কেউ দেখে ফেলতে পারে। তারচেয়ে বরং অচিন্তণীয় একটি জায়গায় আশ্রয় নেওয়াই শ্রেয়। সেখানে স্থির হয়ে বসে পরবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। যুদ্ধের জন্য দুর্গ চাই। ঘাঁটি চাই। সাইফুলের বস্তিই আমার দুর্গ। বাহ! বেশ তো! বিপদেও মনে মনে হাসি পেলো। আমি সন্তুষ্ট চিত্তে বললাম:
-ঠিক আছে সাইফুল, তাই চলো।
সাইফুল যেন আমার হুকুমের জন্যই অপেক্ষা করছিল। সেনাপতির বিক্রমে সে অচীরেই আগারগাঁও বস্তির সামনে সিএনজি দাঁড় করালো। সে যেন যুদ্ধযাত্রায় আমার সাহায্যার্থে কাল্পনিক শত্রুর বিরুদ্ধে মহারণে অবর্তীণ হয়েছে। সিএনজি থেকে নামতে নামতে সে বললো:
-স্যার একটু খাড়ান। গাড়িটা বাইন্ধা আসি। আমরা বস্তির পিছনের দিক দিয়া যামু। কেউ দেখতে পারবো না।
চটপট করে একটি শিকল দিয়ে সিএনজিটি থামের সঙ্গে তালা দিয়ে সাইফুল পাশের চা দোকানির দিকে গলা উঁচিয়ে বললো, ‘গাড়ি দেখিস নিয়ামত’। তারপর ‘চলেন স্যার‘ বলে আমাকে নিয়ে সারি সারি টিনের ঘরের জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। গলি, তস্য-গলি ঠেলে সে বস্তির মাঝ বরাবর একটি লম্বা টিনের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। লম্বা ঘরটিতে দশ-বারোটি দরজা। বেশির ভাগেই তালা ঝুঁলছে। সে কোমর থেকে চাবি বের করে একটি তালা খুলে আমাকে নিঃশব্দে ডাকলো। ঘরে একটি চৌকি। ঘরের মধ্যে আরেকটি ছোট দরজা। পিছনে আরেকটি ঘর। আমি ঘরে ঢুকে সাইফুলের দিকে সপ্রশংস চোখে তাকিয়ে বলি:
-বেশ জায়গায় এনেছে! আমিও এখান থেকে একবার বের হলে আর ফিরে আসতে পারবো না। এই গোলক ধাঁধার চক্কর থেকে আমাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হবে না।
সাইফুল খুশি হলো আমার কথায়। সে জগে করে কিছু পানি দিয়ে বললো:
-স্যার, হাত-মুখ ধুইয়া রেস্ট নেন। আমি জলদি কিছু বাজার-সদাই নিয়া আসি। পোলার মা এখনই বাসা-বাড়ির কাম থেইক্যা ফিরা আইবো। পোলা-মাইয়্যারাও ইস্কুল থন আইসা যাইব। আইজ দুপুরে এক সাথে খামু স্যার।
সাইফুলের চোখ আনন্দে চকচক করছে। মনে হলো সে যেন বহু বছরের পুরনো আত্মার আত্মীয়কে ফিরে পেয়েছে। এমন উৎফুল্ল সে অনেক দিন হয় নি। চৌকিতে একটি নতুন চাদর বিছিয়ে সে বলল:
-আরাম করেন স্যার। আমি যামু আর আমু।
বাইরে থেকে দরজা চাপা দিয়ে সাইফুল চলে গেল। আমি বিছানায় শুয়ে ভাবছি, আসলেই কি বিচিত্র! মানব জীবন! কে কখন কোথায় থাকবে, কি করবে, আগাম জানার উপায় নেই। এখানে একটু স্থির হয়ে ভাবতে হবে আমার পরবর্তী অ্যাকশন নিয়ে। আমাকে ষড়যন্ত্রে জাল ছিন্ন করতে হবে। নিজেকে রক্ষা করতে হবে ওদের কবল থেকে। ভাঙতে হবে নেশার অপরাধচক্র।
বস্তি এখন বেশ শান্ত-সমাহিত। শব্দ বা হৈ চৈ নেই বললেই চলে। লোকজন সম্ভবত এখন কাজে-কর্মে চলে গেছে। সামান্য দুয়েকটা শব্দ ছাড়া সব যেন ঝিম ধরে আছে কড়া দুপুরের মতো। কখন চোখ লেগে গিয়েছিল, টের পাই নি। টের পেলাম সাইফুলের আসার শব্দে। সে বিরাট বাজার করে ফিরেছে। ওর হাতের থলি উপচে পড়ছে শাক-সবজি। আরেক হাতে একটি বড় মাছ ও আস্ত একটি মুরগি। আমি বেশ বিরক্তই হলাম। বললাম:
-এসব কি করেছ সাইফুল! বিপদের সময় তুমি বিয়ের আয়োজন করে বসে আছ!
সাইফুল লাজুক হাসলো:
-স্যার আপনি এই গরিবের ঘরে পরতম আইছেন। আপনার উছিলায় আমরাও ভালো-মন্দ খামু।
সাইফুলের কথা শেষ হতে না হতেই ওর বউ এসে ঘরে ঢুকলো। আমাকে দেখেই অবাক হয়ে গেল সে। সাইফুলের দিকে সে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে। সাইফুল আমাকে পরিচয় করিয়ে বললো:
-আমার স্যার, সালাম কর।
বউটি আমার কাছে এসে কদমবুচি করে সালাম করলো। আমি বেশ বিব্রত হয়ে বলি:
-থাক! থাক! হয়েছে।
বউটির চেহারা ভালো করে দেখতে পেলাম। একি! ও যেন ফুলির আরেক বোন! অবিকল চেহারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাইফুলের ছেলে আর মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে ‘বড় চাচাজী আইছে, চাচাজী আইছে’ বলে বাড়ি মাথায় তুললো। ছেলে-মেয়ে দু’টি আমার শরীর ঘেঁষে বসে আছে। শত নিষেধের পরও ওরা বিছানা থেকে নেমে যাচ্ছে না। ওরা এই অচেনা নতুন আত্মীয়ের পাশ থেকে কিছুতেই যাবে না। আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আহা! সুইট হোম। বাড়ি...।
সাইফুলের বউ কোন ফাঁকে রান্না করে ফেলেছে, কিছুই বোঝা গেল না। সে এখন সবাইকে খেতে ডাকছে। মেঝেতে একটি পাটি বিছিয়ে খেতে দেওয়া হয়েছে। সাইফুল আর ওর স্ত্রী আমাকে অতিষ্ঠ করে তুললো। প্লেট খালি হওয়ার আগেই মাছের টুকরা, মুরগির পিস তুলে দিচ্ছে। বাধা দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। চমৎকার স্বাদের খাবার একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছি। অনেক দিন পর খাওয়ার তৃপ্তি পেলাম। সাইফুল বললো:
-এই ভরা দুপুরে আর বাইরে গিয়া কাম নাই। আমারও আজ রেস্ট। স্যার ঘুমান।
বলেই সে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভেতরের ছোট্ট ঘরটিতে চলে গেল।
কতক্ষণ ঘুমালাম বলতে পারবো না। ঘরে আলো জ্বলছে। একটি এনার্জি লাইট। আশে-পাশে টিভির শব্দ হচেছ। নানা অনুষ্ঠানের বিচিত্র শব্দে মনে হলো পুরো বস্তি জেগে উঠেছে। সারা দিন কাজের পর এখন বিনোদন। সংসার চালানোর জন্য নারী-পুরুষ সবাইকেই কাজ করতে হয়। এখানে দেখা যায় জীবনের মিলিত সংগ্রাম। আমি বিছানায় কাত হয়ে সংগ্রামী মানুষগুলোর কথা ভাবছি। ঠিক এমন সময় সাইফুল দরজা ভেঙে ঝড়ের বেগে ঘরে এসে হাঁপাতে লাগলো। এমন সশব্দ আগমনে আমি চমকে উঠি। ভেতরের ঘর থেকেও পুরো পরিবার বের হয়ে এসেছে। তারা মুখ হা করে আছে সাইফুলকে দেখে। সাইফুলের চোখ-মুখে আতঙ্কের ছাপ। সে কোনও রকমে দম নিয়ে বললো:
-স্যার চলেন, পালাইতে হইব।
আমি আঁতকে উঠি:
-কি ব্যাপার সাইফুল?
সে দম নিয়ে বললো:
-পুলিশ আসতাছে স্যার। এখানে নাকি একজন খুনি লুকাইছে। লোকটি বাংলাদেশি তয় বিদেশে থাকে।
আমি উত্তেজিত কণ্ঠে জানতে চাই:
-তুমি খবর পেলে কিভাবে?
সাইফুল এখনও পূর্ণ স্বাভাবিক হয় নি। ধরা গলায় সে আমাকে জানালো:
-আমি নিয়ামতের দোকানে চা খাইতে গেছি। দেখি, কালু মাস্তান সাঙ্গ-পাঙ্গ লইয়া বইস্যা আছে। সে-ই কথাটা কইল। পুলিশের লগে লগে ওরেও নাকি ডিউটি করতে হইবো। হেগোরে বস্তির দিকে নজর রাখনের জন্য হেগোর বড় ওস্তাদ অর্ডার দিছে।
আমি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামি:
-সর্বনাশ! এরা এখানেও এসে গেছে! এখন উপায়?
আমার কথায় সাইফুলের বউ কেঁদে ফেললো। বাচ্চারাও ভয় পেয়ে ফুঁপিয়ে উঠেছে। ওরা দু’ পাশ থেকে আমার দু’ হাত ধরে রেখেছে। ওরা আমাকে যেতে দেবে না। আমি ওদের মমতা মাখা চোখ দেখে আপ্লুত হয়ে গেলাম। সাইফুল তাড়া দেয়:
-স্যার, চলেন আগে এখান থেকে সইৠা যাই। তারপর দেখন যাইবো।
সাইফুলই ঠিক করে, জঙ্গলা পথ দিয়ে ড্রেনের পাশে পাশে আমি বড় রাস্তায় চলে যাবো। আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে সাইফুলের ছোট ছেলেটি। সাইফুল তার গাড়ি নিয়ামতের দোকানের পাশ থেকে সেখানে নিয়ে যাবে, যেখানে ড্রেন বড় রাস্তায় পড়েছে। তারপর আমাকে সরিয়ে নেবে অন্য কোথাও। সাইফুল দরদভরা কণ্ঠে তার ছেলেকে বলে:
-পারবানা আব্বা স্যারেরে লইয়্যা আইতে?
ছেলেটি মায়াবী গলায় উত্তর দেয়:
-ক্যান পারুম না বাপজান! ওই পথেই তো বুজানরে লইয়্যা রোজ ইস্কুলে যাই।
আমি আর সাইফুল ঘর থেকে দুই দিকে ছুটে গেলাম। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলেছে সাইফুলের ছেলেটি। আহা! ছেলেটির নাম পর্যন্ত জানা হলো না। সে তীর বেগে ঝোঁপ-জঙ্গলা মাড়িয়ে আমাকে বস্তির পেছনের ড্রেনের ওপর নিয়ে এলো। ঠিক তখনই বস্তির অপর প্রান্তে অনেকগুলো হুইসেলের শব্দ শোনা গেল। বাঁশির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে বহু পুলিশের বুটের আওয়াজ ক্রমশ এদিকেই আসছে। সাইফুলের ছেলেটি এতো শব্দ শুনে কিছুটা হতচকিত হলো। এ রকম আওয়াজ সে আগে বস্তিতে শুনে নি। সে তিড়িং-বিড়িং করে ড্রেন পার করে একটি খোলা জায়গা পেরিয়ে বড় রাস্তার মুখে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। সাইফুলের ‘উড়াল যাত্রা’ আমার আগেই সেখানে হাজির। সাইফুলটা আসলেই কাজের। এই বিপদে ও না থাকলে যে কি হতো! আমি দৌড়ে সিএনজিতে উঠে চোখ ফিরিয়ে দেখি সাইফুলের ছেলের পিছনে ওর মা আর বোনও এসে দাঁড়িয়েছে। সবার চোখে জল। ওরা কাঁদছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৭
জেডএম/