নাট্যকাহিনির সূচনা হয় ডেকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের বাবা। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং প্রয়াত অগ্রজের স্ত্রী যুবরাজ হ্যামলেটের জননী গারট্রুডের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
জনককে হারানোর ব্যথা, জননীর সঙ্গে পিতৃব্যের পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া ইত্যাদি যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়। যুবরাজ শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এ দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনা প্রবাহ মেনে নিতে পারেন নি।
জীবনের এ দুঃসহ লগ্নে তার সামনে বাবার প্রেতাত্মা আবির্ভূত হয়ে তাকে জানিয়ে দেয় যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্প দংশনে নিহত হয়েছেন; আসল সত্য হল, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছেন।
ঘটনা প্রবাহে আরও কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রানি গারট্রুডের ঘরে মাতাপুত্রের কথোপকথন শোনার জন্যে আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভ্রমবশত হত্যা করেন।
পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া বাবার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙে পড়েন এবং জলে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের যন্ত্রণা মেটান। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈতক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।
লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় মাখানো থাকে বিষ। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ার্তেস হ্যামলেটের ঊর্ধ্ববাহু রক্তাক্ত করে, হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করেন।
এদিকে রানি গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, যা পান করার কথা ছিল হ্যামলেটের। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র।
রাজার সব ষড়যন্ত্র যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করে এবং সে নিজেও প্রাণত্যাগ করে।
এভাবেই চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারি-ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। আর হ্যামলেটের সার্বক্ষণিক অনুগামী প্রিয়বন্ধু হোরেশিও থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মকে এ বেদনা বিধুর কাহিনি শোনাবার জন্য।
সৈয়দ হক স্মরণে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শেষদিনে শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। সৈয়দ শামসুল হক অনুদিত এ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যাভিনেতা আতাউর রহমান।
ব্যক্তি মানুষের অন্তর্গত ও নিত্যকার সংঘাতময় জীবনের আশা-হতাশার দোদুল্যমানতা অনুকরণীয় পারঙ্গময়তা চিত্রিত হয়েছে নাটকটিতে। শেক্সপিয়রের অনন্য লেখনীতে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের ইতি ও নেতির দ্বন্দ্বও বিবৃত হয়েছে এ নাটকে।
‘হ্যামলেট’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিল্পকলা একাডেমির রেপার্টরি নাট্য শিল্পীরা। নাটক মঞ্চায়নের আগে সৈয়দ হকের কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন নাটকটির নির্দেশক আতাউর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮
এইচএমএস/ওএইচ/