মিনার মাহমুদের মৃত্যু নিয়ে এতো লেখালেখি হবে চিন্তাও করিনি। তিনি সাংবাদিক হিসাবে সচেতন মহলে ব্যাপক পরিচিতি ছিলেন।
২০০৯ সালের দিকে মিনার মাহমুদের একটি লেখা ছাপা হয় আমাদের সময় পত্রিকায়। লেখাটিতে আমার প্রশংসা করেই বেশিরভাগ শব্দ ব্যয় করেছিলেন তিনি। সাধারণত আমার বিরুদ্ধে লিখতেই এক শ্রেণীর সাংবাদিক আনন্দ পান। অনেকগুলো যুক্তি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো মিনার মাহমুদ খণ্ডন করেছিলেন। একই লেখায় তিনি এরশাদকে আক্রমন করেছিলেন। তখন মিনার মাহমুদকে দেখাতো দূরের কথা টেলিফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি।
হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে ২০০৯ সালে এপ্রিলের ১৪ তারিখে আমি ২৬টি মামলা মাথায় নিয়ে ফেনীর আদালতে হাজির হই। আদালত তখন সব মামলায় জামিন দিলেও কেবল একটি মামলায় জামিন না দেওয়াতে আমাকে সাত মাস জেল খাটতে হয়েছিল।
ফেনী জেলখানা থেকে পরদিনই আমাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ দিন থাকার পর চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু হাসাপাতালে (বিএসএমএমইউ) পাঠানো হয়।
হাসপাতালে থাকাকালে এক ফটো সাংবাদিক যাকে আমি জনকণ্ঠের জন্য বিদেশ থেকেই তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলাম, তার সঙ্গে আমি একটি পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তখনই তিনি মিনার মাহমুদের কথা আমাকে বলতে থাকেন। তিনি তার ভূয়সী প্রশংসাও করলেন।
আমি তাকে বলেছিলাম, মিনার মাহমুদ যদি আমার পত্রিকার দায়িত্ব নেন আমি খুবই খুশি হবো। তার সপ্তাহখানেক পরে তিনি মিনার মাহমুদকে নিয়ে হাসপাতালে এলেন। সেখানে মিনারের সঙ্গে আমার দু’ঘণ্টা আলোচনা হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব নিতে রাজি হন। ঐদিনই ক্রিকেট খেলার উন্নতি করার জন্য কি কি প্রয়োজন এ ব্যাপারে একটি সাক্ষাৎকার নেন। আমার পরিকল্পনার কথা শুনে তিনি মুগ্ধ হন। সাক্ষাৎকারটি আবারও আমাদের সময়ে ছাপা হয়। তার পর অনেক দিন মিনারের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার আত্মজীবনী প্রকাশ হওয়ার পর হঠাৎ মিনারের টেলিফোন, আমার বইটি কোথায়? তার কথামত দু’টি বই তার জন্য এলিফ্যান্ট রোডে পাঠিয়ে দিলাম। বোঝা গেল তিনি এক রাতেই পুরো বইটি পড়ে ফেলেছেন।
তিনি বলছিলেন, এমন নির্জলা স্বীকারোক্তি দিয়ে আর কাউকে আত্মকথা লিখতে শুনিনি। আমি বলেছিলাম- আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীও মোড়ক উন্মোচনের দিন এ কথাই বলেছিলেন। পরে একটি নিবন্ধও লিখেছিলেন।
প্রায় ছয় মাস পর মিনার হাজারিকা প্রতিদিনের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এলেন। প্রত্রিকাটির কাজকর্ম কেমন চলছে সব জেনে গেলেন। আমার পত্রিকাটিতে কাজ করার আশ্বাসও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কি কারণে জানি না মিনার আর কখনই যোগাযোগ করেননি।
মিনারের অন্য কি গুণ ছিল জানি না, তিনি অত্যন্ত সৎ লোক ছিলেন বলে আমার ধারণা। লেখাতেও তার হাত ভালো ছিলো। যেদিন মিনার মাহমুদ চির বিদায় নিলেন সেদিন আমি সিঙ্গাপুর ছিলাম। মালয়েশিয়া হয়ে গত রাতেই আমি দেশে ফিরেছি। ফলে মিনারকে শেষ দেখাটি আমার দেখা হয়নি। মালয়েশিয়াতেই হাজারিকা প্রতিদিনে মিনারের মৃত্যুর খবরটি পড়েছি। মিনারকে না দেখার বেদনা রয়েই গেলো। অনেকের মত মিনারও আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিল। মিনার চলে যাবার পর কেবলই ভাবছিলাম মিনার যে এত মানুষের কাছে প্রিয় ও পরিচিত ছিল তা আমি বুঝতেই পরিনি।
জয়নাল হাজারী: সাবেক সংসদ সদস্য-ফেনী-২ ও প্রধান সম্পাদক, হাজারিকা প্রতিদিন
ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১২