ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বিদেশিদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রসঙ্গে দুটি কথা

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১২
বিদেশিদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রসঙ্গে দুটি কথা

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি বন্ধু নানাভাবে সহযোগীতা করেছিলেন, সেই বন্ধুদেরকে স্বাধীনতার ৪১ বছর পরে হলেও সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদান করেছেন। দেরিতে হলেও সরকারের এ সুন্দর কাজকে অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়।

সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাইনা।

মহাজোট সরকারের এহেন সুন্দর উদ্যোগকে অনেকেই নানাভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। আলোচনা- সমালোচনা করেছেন- যা খুবই ইতিবাচক বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যা নিতান্তই অপরিহার্য। এ রকম আলোচনা, বিশ্লেষণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরো জোরালো ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে থাকে। আর গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই হলো নানা মত। নানা পথের মধ্যে দিয়েই কল্যাণমূলক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সবচাইতে সুন্দর এবং উদ্দীপকমূলক বক্তব্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল যথার্থই বলেছেন- মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে চলতে ভালোবাসে।

আরেকটু এগিয়ে তিনি বলেছেন- যে সমাজে বাস করেনা, সে হয় পশু না হয় দেবতা। আমরাতো মানুষ। তাই  সমাজবদ্ধভাবে বাস করি। আর সমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান অবস্থা, আর বিরাজমান ঘটনাবলীর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়েই হয়ে থাকে।

এতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। সেটাকে বাস্তবতার কষ্টিপাথরে নিয়ে এবং ইতিহাসের নানা তথ্য, উপাত্ত, সংগ্রহ করে, যাচাই-বাচাই করে পরিশীলিত করা তো সমাজবদ্ধ মানুষেরই কাজ।

রাষ্ট্র কেবলমাত্র সেখানে নির্দেশকের বা পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে পারে।

দাউদ হায়দার এক সময়ের সাড়া জাগানো সম্মানিত কবি। যার কবিতায় ঝড়ে পড়তো অজস্র প্রাণের সহস্র কবিতার কাব্যমালা। ইউরোপ প্রবাসী কবি দাউদ হায়দার তার গত লেখনীতে বেশ কিছু খুটি-নাটি বিষয় তুলে ধরেছেন, যা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।

কবি দাউদ হায়দার যথার্থই বলেছেন- বদরুদ্দিন ওমরের বইয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সেই অজানা বন্ধুদের সাহায্য-সহায়তার অনেক গল্প যথার্থই বর্ণিত আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সেই দিকটা অবশ্যই আগে-ভাগে ভেবে দেখা উচিত ছিলো।

কবি দাউদ হায়দার এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবীদার। কারণ তিনি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, এবারকার সম্মাননায় বেশ কিছু অহেতুক লোককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছেন, যা দেওয়া উচিত হয়নি।

কিন্তু কবি দাউদ হায়দার, আপনারও কি উচিত ছিলোনা, আগে থেকে একজন দায়িত্ব ও সচেতন নামকরা কবি হিসেবে সরকারের সংশ্লিষ্টমহলে যোগাযোগ করে যথার্থ এবং সঠিক ব্যক্তিকে যাতে সম্মাননা দেওয়া হয়। সেই ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা। তাহলে  আজকে অন্তত‍ঃ বিবেকের তাড়নায় দংশিত হতে হতোনা ?

আকিদ‍ুল ইসলাম সিডনি প্রবাসী স্বনামধন্য কলাম লেখক, গবেষক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের অবদান স্বরুপ  সম্মাননা প্রদানের জন্য বেশ সুন্দর মানানসই কলাম লিখেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও লিখেছেন- দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান দেখানোর কথা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

যা বাস্তবতার নিরিখে যথার্থই এবং বলা যায় একেবারে টু দ্য পয়েন্ট এবং ডাইরেক্ট। কিন্তু আকিদুল ভাই, এটাতো স্বীকার করবেন, আমাদের বিজয়ের ৪১ বছর পরে হলেও এ রকম একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত সরকার সারাবিশ্বের জনগণের সামনে তুলে ধরেছে।

পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদানের একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সঙ্গে রাষ্ট্র কর্তৃক সম্মাননা প্রদানের যে সূত্রপাত করলেন, তা আগামী প্রজন্ম এবং সরকার সমানভাবে আরো উন্নত এবং আরো আধুনিক ধ্যান-ধারনায় এবং যথাযথ সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবে, বিকশিত করে তুলবে- তাই কি নয়?

সব কিছুতেই সরকারের সমালোচনা করতে হবে- এই মানসিকতা থেকে অন্তত আপনারা যারা বিদেশ বিভূইয়ে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে থাকেন- তাদের কাছ থেকে এমনটা আশা করা যায়না। কারণ তাদের কাছ থেকে সমালোচনার সঙ্গে সুন্দর,পজিটিভ দিক-নির্দেশণামূলক বক্তব্য জাতি আশা করে।

কানাডা প্রবাসী মোল্লা বাহাউদ্দীন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা দাতাদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন,যা রীতিমতো হলুদ সাংবাদিকতার নামান্তর। কানাডার মতো আধুনিক, উন্নত, রুচিসম্মত দেশের আলো-বাতাস থেকে এতো পচা, সস্তা শব্দ চয়ন মোল্লা বাহাউদ্দীনের কাছ থেকে কিছুতেই কাম্য ছিলোনা।

তবে তিনি যথার্থই বলেছেন, মুখ খোলার জন্য, যাদের  উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা কি বললেই সব হয়ে যেত। কারণ অনেকের স্মৃতি শক্তিও তো দূর্বল হয়ে যেতে পারে।

যেহেতু ৪১ বছর আগে গৌরমময় স্মৃতির জন্য তাদেরকে আরেকটু সময় দেওয়া কি যথার্থ নয়? বিদ্যমান সমাজ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আর যাই হোক- অন্ততঃ তারাতো একটা শুভ উদ্যোগের সূচনা করে দিতে পেরেছেন। তাই বলে কি তারা সমালোচনার মুখে পড়বেন।

সব চাইতে বড় আশ্চর্যের বিষয়, প্রিয় তিন কলাম লেখকদের কেউই সুন্দর এই উদ্যোগকে কোনভাবেই শুভ সূচনা কিংবা ধন্যবাদের বিষয় হিসেবে দেখতে পাননি।

উন্নত বিশ্বের আলো-বাতাস থেকে নিরন্তর সংগ্রামরত হাজারো-লাখো  বাংলাদেশির প্রাণের ভাষা এবং তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়না, কলামের সুন্দর পংক্তিমালা দিয়ে তা কেবল বিবৃত করা যায়।

তার অর্থ এই নয় যে, আমি সরকারের এই কাজের একনিষ্ট সমর্থক হয়ে গেলাম। আমি শুধু ভালো কাজের প্রশংসা করলাম মাত্র। প্রথমবারের মতো সুন্দর একটি কাজ করতে গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে।

আর থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু স্বজনপ্রীতিও হতে পারে, আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে যা একেবারে অস্বাভাবিক নয়(তার অর্থ এই নয় যে সমর্থন করি)। আমাদের কোন মন্ত্রণালয়ে উন্নত বিশ্বের মতো কোন ডাটাবেজ এখনো তৈরি হয়নি।

সকল ইনফরমেশন এখনো সহজলভ্য নয়। এখনো সরকারি দফতর সেই ব্রিটিশ মান্ধাতার আমলের। যদিও আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। তার পরেও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে বেশ ধন্যবাদের প্রাপ্য।

এ ক্ষেত্রে তারা বেশ সুন্দর, গোছানো একটা কাজ বেশ সার্থকভাবে করতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ আবদুল মোমেন এবং তার টিম বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক খাটাখাটি করে যুক্তরাষ্ট্রের এবং অনেক বিদেশি মেহমানদের খোঁ‍জ-খবর নিয়ে উপযুক্ত তথ্যাবলী বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছেন- যা বিশেষ ধন্যবাদের দাবি রাখে।

স্বীকার করি- এবং সকলেই মানবেন যে, বড় কোন কাজ করতে গেলে ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে, অনেক তথ্য-উপাত্ত ঘাটতি এবং যথাযথভাবে বিন্যস্ত নাও হয়ে থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক আবেগ এবং একটু-আধটু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে।

কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। সবকিছু একসঙ্গে সঠিকভাবে হয়তো করা সম্ভব হয়নি। আমরা চাই আগামীতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এদিকটা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশে এবং দেশের বাইরের সকলের ন্যায্য সম্মান যথাযথভাবে দেবেন।

একই সঙ্গে যে সব প্রবাসী বাংলাদেশি শত কষ্টের মাঝেও প্রবাস জীবনে থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জান-মাল-সবকিছু দিয়ে প্রবাসী সরকারকে সহযোগীতা করেছেন,জাতির একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আশা করবো সরকার তাদেরসহ সকলের সম্মাননা আগামীতে প্রদান করবেন।

পরিকল্পিতভাবে, সুন্দর পরিকল্পণা এবং ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে। ধন্যবাদ আকিদুল, বাহাউদ্দীন, এবং কবি দাউদ হায়দারসহ সকলকে।

[email protected]  

বাংলাদেশ সময় : ১২৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১২
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।