প্রখ্যাত কলামিস্ট জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী `কালের কণ্ঠে` ড. ইউনূস সম্পর্কে গত ৩ এপ্রিল যে নিবন্ধ লিখেছেন (ইউনূস সাহেবকে সার্চ কমিটির প্রধানের পদে বসাতে হবে কেন?), সেই নিবন্ধের কয়েকটি মন্তব্য সম্পর্কে আমি কিছু সঠিক তথ্য পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরতে চাই।
জনাব গাফ্ফার চৌধুরী একটি ভুল ধারণা বা রিপোর্টের ভিত্তিতে একটা পুরো নিবন্ধ লিখে ফেলেছেন।
জনাব গাফ্ফার চৌধুরীর লেখাটি পড়লে মনে হয়, `গ্রামীণ ব্যাংক` সরকারের সোনালী বা পূবালী ব্যাংকের মতো আরেকটি ব্যাংক। আমার মনে হয়, জনাব চৌধুরী গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে তেমন তথ্য জানেন না অথবা জেনেও না জানার ভান করছেন। এ কথা দেশ-বিদেশের সব সচেতন মানুষ অবগত আছেন যে, গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের আইডিয়ায়, উদ্যোগে ও সরকারের আইনে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। শুরুর দিকে সরকারের কিছু শেয়ার থাকলেও তা পর্যায়ক্রমে শোধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সরকারের শেয়ার ৫ শতাংশের বেশি নয়। ৯৫ শতাংশ শেয়ার হলো এর সদস্যদের। সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। ১৯৯৫ সালের পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক বিদেশি কোনো ঋণও গ্রহণ করেনি। এ ব্যাংকে সরকারের অর্থসহায়তা এখন নেই বললেই চলে। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে ৯ জন মালিক সদস্য, তিনজন সরকার মনোনীত সদস্য ও চেয়ারম্যান রয়েছেন। বোর্ডের মালিক সদস্যরাই প্রস্তাব দিয়েছেন নতুন এমডি নিয়োগের সার্চ কমিটিতে ড. ইউনূসকে প্রধান করার জন্য। জনাব গাফ্ফার চৌধুরী মনে করেন এটা ঠিক হবে না। কেন ঠিক হবে না তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। কিন্তু বোর্ডে যাঁরা এই ব্যাংকের মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁরা চান ড. ইউনূসই সার্চ কমিটির প্রধান হবেন। যাতে তিনি (ড. ইউনূস) ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি মনোনয়ন দিতে পারেন। জনাব চৌধুরী ড. ইউনূসকে শুধু `প্রাক্তন এমডি` হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এখানেও তাঁর বিভ্রান্তি ও হীনম্মন্যতা রয়েছে। প্রকৃত তথ্য হলো, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। আইনি ছাড়পত্রের জন্য তিনি সরকারকে এই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন মাত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ গ্রামীণ ব্যাংকের গুরুত্ব অনুধাবন করে ড. ইউনূসের এই ব্যক্তিগত প্রকল্পকে আইনি সহায়তা দিয়ে একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয় মূলধন দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়িয়ে এনেছে। ড. ইউনূসের পর ব্যাংকের পরবর্তী এমডি কে হবেন সে ব্যাপারে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিটি মতামত দেবেন না, তো কে মতামত দেবেন? সরকারের কোনো যুগ্ম সচিব বা জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী? বিষয়টি খুব হালকাভাবে দেখা হচ্ছে না? অর্থমন্ত্রী জনাব মুহিতও মনে করেন, ড. ইউনূসকে সার্চ কমিটির প্রধান করা যায় না। অর্থমন্ত্রীও জনাব গাফ্ফার চৌধুরীর মতোই বিভ্রান্ত অথবা এতে তাঁদের কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে। না হলে যিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা সেই ব্যাংকের এমডি নিয়োগে তাঁর মতামত নিতে অসুবিধা কোথায়? আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের মালিক সদস্যরাই চান ড. ইউনূসকে। মালিকদের কথাই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মালিকরাই তো তাঁদের ব্যাংকের ভালোমন্দ অন্যদের চেয়ে ভালো বুঝবেন। অন্য ব্যাংক বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কার কথা শোনা হতো? কার কথায় গুরুত্ব দেওয়া হতো? সবাই একটু ভেবে দেখুন তো।
ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. মজিনা মাঝেমধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে কথা বলেন বলে জনাব গাফ্ফার চৌধুরী খুব দুঃখ পেয়েছেন। তাঁর ধারণা, এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন! মার্কিন রাষ্ট্রদূত শুধু গ্রামীণ ব্যাংকই নয়, ব্র্যাকসহ বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচিরও প্রশংসা করেন। এটা নতুন কিছু নয়। আর বাংলাদেশে যত বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি আসেন, বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধি আসেন, তাঁদের অনেকেই রুটিন করে ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে যান এবং গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এ পরিদর্শন বাংলাদেশ সরকারের কর্মসূচিতে থাকে না। কিন্তু বিদেশি সরকারের কর্মসূচিতে অবশ্যই থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রশংসা এরই ধারাবাহিকতায় দেখলে জনাব চৌধুরীর ভ্রান্তি দূর হতো। অথচ তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের হাস্যকর ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, রাজনৈতিক দল, গভর্ন্যান্স ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রায়ই মন্তব্য করেন ও পরামর্শ দেন। সম্প্রতি মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি শারম্যানও রাজনৈতিক মতৈক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তখন কিন্তু জনাব গাফ্ফার চৌধুরীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না। শুধু গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে মন্তব্য করলেই তিনি সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ মনে করেন, যা অমূলক বলেই আমি মনে করি।
জনাব গাফ্ফার চৌধুরী এই সামান্য একটি ঘটনাকে `জাতীয় আপৎকালের` সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলিহারি তাঁর কল্পনাশক্তি (নাকি উসকানিমূলক মন্তব্য)! জনাব চৌধুরী কোথায় দেখলেন গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে শক্তিশালী বৈদেশিক হস্তক্ষেপ প্রকট আকার ধারণ করেছে? মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা বিদেশি কোনো অতিথি মাঝেমধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাতন্ত্র্য ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেই তা জনাব চৌধুরীর কাছে `বৈদেশিক হস্তক্ষেপ` হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের এ রকম উদ্বেগ প্রকাশ করা খুব প্রয়োজন। নইলে কোনো রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদ ছাড়া, পেশিশক্তির দাপট ছাড়া, একটি প্রতিষ্ঠান (গ্রামীণ ব্যাংক) ও একজন নিরস্ত্র ব্যক্তি হিসেবে সরকারের ও ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তির রোষের মুখে টিকে থাকা ড. ইউনূসের পক্ষে অসম্ভব হতো। এর সঙ্গে রয়েছেন একটি দলের লেজুড় কলামিস্টরা, যাঁদের কাজই হলো হুক্কাহুয়া করা। অথচ বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকায় এসব লেজুড় কলামিস্ট এক বছর যাবৎ গ্রামীণ ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ ও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে লাগাতার লিখেছেন এবং লিখে যাচ্ছেন। এত কিছুর পরও কিন্তু ড. ইউনূস সম্প্রতি বিশ্বের ১২ জন ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তার একজন বলে সম্মানিত হয়েছেন।
জনাব গাফ্ফার চৌধুরী প্রায়ই তাঁর কলামে ড. ইউনূস সম্পর্কে ভুল তথ্য দেন। এ লেখায়ও দিয়েছেন। যেমন- সরকার ড. ইউনূসকে কখনো গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দেয়নি। মুহিতও দেননি। প্রস্তাবই যখন দেওয়া হয়নি তখন নাকচ করার সুযোগ কোথায়? বরং ড. ইউনূসই কয়েক বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা সরকার বিবেচনায় আনেনি।
জনাব চৌধুরীর ভাষ্যমতে, গ্রামীণ ব্যাংকে নানা অনিয়মের কারণে সরকার ড. ইউনূসকে সরায়নি; তাঁকে সরিয়েছে বয়সের অজুহাতে। আর অনিয়মের অনুসন্ধান করার জন্য সরকার যে কমিটি করে দিয়েছিল তারা তো কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। বরং কমিটি বলেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। যে `অনিয়মের` অভিযোগ নরওয়ের এক টিভির সাংবাদিক তুলেছিলেন, খোদ নরওয়ে সরকার বলেছে, `তা বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। ` জনাব গাফ্ফার চৌধুরী এসব উদ্ধৃতি কখনো ব্যবহার করেন না, যা একধরনের অসততা।
`আদালতের রায় ড. ইউনূস মানতে চান না`- এমন তথ্য গাফ্ফার চৌধুরী কোথায় পেলেন? আদালতের রায় মেনে নিয়েই তো তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি কি ওই চেয়ারে এখনো বসে আছেন? রায় মানলেন না কিভাবে? এ ধরনের বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য পত্রিকার পাতায় লিখে জনাব চৌধুরী নিজেকে ছোট করছেন না?
ড. ইউনূসের উদ্দেশে জনাব গাফ্ফার চৌধুরী এই নিবন্ধে যে আবেদন জানিয়েছেন, তাও অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয়। কারণ এসব কাজে ড. ইউনূসের কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশে তাঁর কোনো সরকারি নির্বাহী পদের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তিনি তো বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কাজ করছেন। তাঁর সমর্থনে দেশে যা হচ্ছে তা সবাই যার যার দায়িত্ববোধ থেকে করছে। দেশের স্বার্থ ও মর্যাদার স্বার্থেই করছে। ব্যক্তিস্বার্থে নয়। ব্যক্তি ইউনূসের এ দেশে প্রতিযোগিতার কিছু নেই। তিনি ভোটেও দাঁড়াচ্ছেন না, `জনপ্রিয়` হওয়ার প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিচ্ছেন না। ড. ইউনূসের জনবল ও অর্থবল কোনোটিই নেই। আছে শুধু গুডউইল বা সুনাম। তিনি কোনো দল করেন না, সন্ত্রাসী পোষেণ না। আর অর্থবল? আজীবন চাকরিজীবীর অর্থবল কত থাকতে পারে তা জনাব চৌধুরীর অজানা নয়। তবে বিশ্বব্যাপী `বক্তৃতা` দিয়ে তাঁর কিছু অতিরিক্ত আয় হয় বটে। গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে তাঁর ওপর অবিচার হলে তিনি বিরোধী দলকে দিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি কেন- জনাব গাফ্ফার চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন। লেজুড় কলামিস্টের উপযুক্ত প্রশ্নই বটে। আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছে, জনাব গাফ্ফার চৌধুরী ও আরো অনেক বুদ্ধিজীবী ড. ইউনূসকে অদ্যাবধি ঠিক চিনতে পারেননি। ড. ইউনূসকে বুঝতে তাঁদের আরো সময় লাগবে। আর বুঝতে পারেননি বলেই তাঁকে রাজনৈতিক `আন্দোলন` করার পরামর্শ দিতে পেরেছেন। অথবা ইচ্ছা করেই রাজনীতিতে ঠেলে দিয়ে আবারও এক হাত নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ তিনি বিবৃতি দিয়েই বলেছিলেন, `নো মোর পলিটিকস`।
বিশ্বব্যাংক ও পদ্মা সেতুবিষয়ক `গুজবটি` জনাব চৌধুরী এ লেখায়ও টেনে এনেছেন। নিজেই বলেছেন `গুজব`, তবু দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার এ অভিযোগ প্রমাণ করছে না কেন? জনাব চৌধুরী এবার সরকারকে এই `গুজব` প্রমাণ করার জন্য উৎসাহিত করলে ভালো হয়। অর্থমন্ত্রী কিন্তু একবার বলেছিলেন, `তাঁর কাছে এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই। ` তবু জনাব চৌধুরী ক্ষান্ত দিচ্ছেন না। তাঁর স্বার্থ কী? তিনি কি অহেতুক সমস্যা সৃষ্টিতে আনন্দ পান!
জনাব চৌধুরী একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জব্দ করার পরামর্শ দিয়েছেন। ড. ইউনূস তো শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী নন বা তাঁর কাজের (সামাজিক ব্যবসা) বাধাও নন, তাহলে তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীকে জব্দ করবেন? আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধ করার চিন্তা করলে বিএনপি করবে, এখানে ড. ইউনূসের করণীয় কিছু নেই।
আমাদের সবাইকে এ কথা বুঝতে হবে, ড. ইউনূস কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার তাঁর কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাঁকে দিয়ে আমেরিকা বা কোনো বৃহৎ পরাশক্তি লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্তত বাংলাদেশ ইস্যুতে তিনি কোনো পরাশক্তির উপকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এসব উপকার সরকারি ব্যক্তিরাই শুধু করতে পারেন। জনাব গাফ্ফার চৌধুরী ড. ইউনূসকে নিয়ে যা সত্য নয় তা বলার চেষ্টা করেন। এটা কিছুতেই সৎ সাংবাদিকতা হতে পারে না।
ড. ইউনূসকে `নোবেল হিরো` বলা কি মিডিয়ার জন্য দোষ হয়েছে? তাহলে কাকে নোবেল হিরো বলা উচিত হবে, তা কি জনাব চৌধুরী জানাবেন? জনাব চৌধুরী `গ্রামীণ` ইস্যুতে আমেরিকার ভূমিকা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও অন্য বিদেশিদের বক্তব্যে বা মন্তব্যে খুবই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। এই উদ্বেগ অকারণ। তাঁরা বাংলাদেশের গরিব মানুষদের একটি সফল প্রতিষ্ঠানের ভালো চায় বলেই নানা কথা বলেন। তাঁরা এ দেশের রাজনৈতিক দল সম্পর্কেও নানা কথা বলেন। ড. ইউনূসের মতো একজন মেধাবী ও সৎ মানুষের কথা বলে তাঁরা তো কোনো অন্যায় করেছেন বলে মনে হয় না। বিদেশের বিবেকবান মানুষরা যদি ড. ইউনূসের সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে না আসতেন, তাহলে এত দিনে এ দেশের প্রতিহিংসার সংস্কৃতির আগুনে ড. ইউনূস জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতেন। জনাব চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন, আজ যদি আপনার প্রতি কেউ অসম্মানজনক আচরণ করে এবং বিদেশি বিবেকবান মানুষরা যদি এর প্রতিবাদ করেন সেটা কি বৈদেশিক হস্তক্ষেপ হবে? ড. ইউনূসের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল তা কোনোভাবেই সম্মানজনক ছিল না। তাই সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। যদিও সরকার `ইগো` সমস্যার কারণে কারো সুপারিশ গ্রহণ করেনি। সরকার যদি দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পরামর্শ বা অনুরোধ গ্রহণ করত তাহলে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কেরও উন্নতি হতো। কিন্তু সরকারের মাথা মোটা কর্তাব্যক্তিরা `ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়` এই কেতাবি বুলি আউড়িয়ে বিষয়টি পাত্তা দেননি, যা যুক্তিসংগত ছিল না। মনে রাখা দরকার, স্বনামধন্য ব্যক্তির উপস্থিতি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। একজন বঙ্গবন্ধু বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সুপরিচিত করেছিলেন, কথাটি কি মিথ্যা? ড. ইউনূসও একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যাঁর জন্য বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। এ জন্য জনাব চৌধুরীর সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না। সৌজন্যে: দৈনিক কালের কণ্ঠ
লেখক : কলামিস্ট, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
[email protected]