দুটো খবরই কালকের পত্রিকার। এমপি পেটানো এএসপি হারুনের পদোন্নতি হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দলীয় কর্মীদের হরতালে পুলিশের পাশাপাশি রাজপথে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে সাগর-রুনীর হত্যাকারীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের অঙ্গীকার রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী রক্ষা করতে না পারলেও, হরতাল কিংবা বিরোধী দলের যে কোন আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দলীয় বাহিনী ঠিকঠাক পালন করতে পারবে, কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপির বিগত দিনের কর্মসূচিগুলিতেও দলীয় কর্মীরা সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। বিশেষ করে গত হরতালের সময়ে সিলেটে পুলিশের গুলিতে আহত এক যুবককে কিভাবে সরকার দলীয় কর্মী এবং পুলিশের যৌথ প্রযোজনায় আবারো লাঠিপেটা করে, কুপিয়ে মেরে ফেলা হয় জনগণ সেটা দেখেছে। সরকার দলীয় কর্মীরা পুলিশের সামনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে বিরোধী দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে। এখন সবাই বুঝতে পারছে, দলীয় সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে মানুষ খুন করতে কিংবা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করতে সাহস পায় কোত্থেকে।
বিগত দিনগুলিতে দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে যে সব মন্ত্রী রাষ্ট্রের দায়িত্বে থেকে দলীয় কর্মীদের পুলিশের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে সিলেটের সেই আলোচিত হত্যার হুকুমের আসামি করা যায় না? কিংবা এই আহবানে সাড়া দিয়ে পুলিশের পাশে থেকে যে সব দলীয় কর্মীরা অবৈধ অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছিল, গুলি ছুড়েছিল, সেই সব সন্ত্রাসীর সাথে তাদের হুকুমদাতা হিসেবে মন্ত্রীদের নামে কি অবৈধ অস্ত্রের মামলা ঠুকে দেয়া যায় না? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আবারো যদি দলীয় কর্মীরা একই কাণ্ড করে বসে তাহলে তার দায় দায়িত্ব অবশ্যই তার।
আরো একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কি আইন শৃংখলা বাহিনীর উপরে কোনো আস্থা নেই? হারুন তাপসদের মতো পুলিশ অফিসার থাকার পরেও কেন সরকার পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারছে না? নাকি দল ও সরকারের মধ্যে এবং পুলিশ ও দলীয় কর্মীদের মধ্যে তারা কোনো পার্থক্য রাখতে চান না?
দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন দলীয় কর্মীদের রাজপথে পুলিশের পাশে থেকে বিরোধী দলকে দমনের কথা বলেন, তখন পুলিশের পাশে অস্ত্রধারী কোনো সরকারদলীয় কর্মীকে গ্রেফতারের সাহস পুলিশের থাকে না। কিছু কিছু পুলিশ অফিসারও অতি উৎসাহে সরকারি দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে দলীয় কর্মী হয়ে ওঠেন।
বিরোধী দলের চিফ হুইপকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং প্রকাশ্য রাজপথে লাঠিপেটা করে দেশে বিদেশে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল পুলিশ হারুন এবং তাপস। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংসদের স্পিকারও জোর দিয়ে বলেছিলেন তদন্তপূর্বক এর বিচার হবে। সেই বিচারের এই হলো নমুনা। ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় ৮৭তম স্থান অধিকারী মি: হারুন ৪৩জনকে ডিঙিয়ে পেয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব। অপরাধ করে শাস্তির পরিবর্তে কেউ যদি এভাবে পুরস্কৃত হয় তাহলে জনগণ কিভাবে তার কাছ থেকে সেবা আশা করবে। সে তো জনসেবা করে পুরস্কৃত হয়নি, দলীয় সেবা করে এসপি হয়েছে। কাজেই তার চাকুরি জীবনের বাকী সময় সে কেন জনসেবা করতে যাবে?
প্রতিটা রাজনৈতিক সরকারের সময় হারুনের মতো পুলিশেরা সরকারের আনুকূল্য পেয়ে এসেছে। এএসপি কোহিনূরের নাম এখনো মানুষের মুখে মুখে। হারুনের পদোন্নতির খবরে আবারো প্রমাণিত হলো্, পুলিশ বাহিনী তার নিজস্ব পেশায় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুক সেটা কোনো সরকারই চায় না। বারবার তারা পুলিশকে দলীয় বাহিনীর মতো ব্যবহার করে তাদের পেশাগত মনোবল এবং নৈতিক মনোবলকে ভেংগে দিয়েছে। আজকে সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে ব্যর্থতা এবং সাম্প্রতিক আরো বহু কিছুর সঙ্গেই এর একটা সম্পর্ক আছে।
হারুনের অতি বাড়াবাড়ির জন্য শাস্তি পাবার কথা ছিল। কিন্তু সে হলো পুরস্কৃত! যে অপরাধের মাধ্যমে দলীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পুরস্কারটাই হলো তার সর্বোত্তম শাস্তি। সত্যি, বড় অদ্ভুত!
কি দারুণ সাজা!
হারুন এখন রাজা!
[email protected]
বাংলাদেশ সময় ০৯০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১২
সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর;