পদ্মার ইলিশ নিয়ে দাদা’দের শহর কলকাতার এখন গদগদ অবস্থা! কারণ জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে পনের মেট্রিক টন ইলিশের প্রথম চালানটি গিয়ে পৌঁছেছে। আগামি শনিবারের মধ্যে আরও ২৫০ মেট্রিক টন গিয়ে পৌঁছবে! কলকাতার বর্তমান পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে তাদের হিমাগারগুলোতে এখন ২৫০ মেট্রিক টন ইলিশের মজুদ আছে।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাওয়াতে তাদের এবার জামাইষষ্ঠী জমবে ভালো!
আমার ধর্মীয় জ্ঞান-পড়াশুনা কম। নিজের ধর্মতো বটে, অন্যের ধর্মজ্ঞানের বিষয়েও তাই! জামাইষষ্ঠী সম্পর্কে জানতে শুক্রবার সিডনি প্রবাসী ছড়াকার-কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্তকে ফোন করে তার সাহায্য নিয়েছি। বাঙ্গালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ পুজার দিনটিতে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা এক ধরনের আনুষ্ঠানিক নবায়ন করেন। মেয়ের জামাইও তাদের কাছে সন্তান, কিন্তু সে’তো ঔরসজাত সন্তান নয়। এমনিতে মেয়ে জামাই শশুরবাড়ি গেলে ভালো খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়। জামাইষষ্ঠীতে মেয়ে জামাইকে খাওয়ানোর চেষ্টা হয় পঞ্চব্যঞ্জনে! কলকাতায় যেহেতু ইলিশের আক্রা, তাই এদিন মেয়ে জামাইকে ইলিশ দিয়ে খাওয়াতে পারলে শশুর-শাশুড়িরা নিজেদের বিশেষ বনেদি ভাবেন! আবার তা যদি হয় পদ্মার ইলিশ! এদিন জামাইরা সাধারনত দই আর শাশুড়ির জন্য নতুন একটা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে শশুরবাড়ি যান। আর শশুর-শাশুড়ি জামাইকে উপহার দেন পাঞ্জাবি। ইলিশসহ পঞ্চব্যঞ্জনে আপ্যায়ন করেন জামাইকে।
এবারের জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ইলিশের চালানটি আগেভাগে সময়মতো পৌঁছনোর কারনেই বুঝি এ নিয়ে গদগদ শোরগোলটি বেশি পড়েছে! পশ্চিমঙ্গের মন্ত্রীরা ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এবার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ইলিশ নিয়ে কোন রকম কালোবাজারি তারা বরদাশত করবেন না। জীবন থাকতে নয়।
পশ্চিমবঙ্গের তিন দশকের বামদূর্গের পতন ঘটিয়ে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতারোহণে যে সব মিডিয়ার ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, দৈনিক বর্তমান এর একটি। কিন্তু নানা কারনে এখন পত্রিকাটির সঙ্গেই মমতা ব্যানার্জী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছেনা। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি পাঠাগারগুলোতে বর্তমান রাখায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাঙ্গালি নেতৃ্ত্বের যা স্বভাব দোষ! একবার ক্ষমতা পেয়ে গেলেই আর কোন সমলোচনা সহ্য করতে পারেন না! কিন্তু জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা নিশ্চিত করাতে সেই বর্তমান’ই মমতার ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছে, স্বয়ং মূখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন! সত্যিই কী তাই? ইলিশ নিয়ে কী ইদানিং হাসিনার সঙ্গে মমতার সরাসরি ফোনে কথা হয়েছে? কী জানি, কলকাতার পত্রিকাওয়ালা অনেকের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ভক্তি-শ্রদ্ধা কম। একবার ভারতীয় নির্বাচন কভার করতে গিয়ে কলকাতা ভিত্তিক মিডিয়ার কয়েকজন দিল্লী সংবাদদাতার সঙ্গে বেশ কিছুদিন ছিলাম। একই গাড়িতে করে আমরা কয়েকদিন চষে বেড়িয়েছি গোটা উত্তর প্রদেশ। তখন দেখেছি গল্প লিখতে কত ওস্তাদ দাদা’রা। এ ব্যাপারে অবশ্য তাদের যুক্তি ছিল রিপোর্টে একটু রং-রক্ত-মাংস না মেশালে পাঠক পড়েনা! আগে পাঠককে পড়াতে হবে।
কিন্তু আবার একটি কারণে বর্তমানের রিপোর্টকে সত্য মানতে ইচ্ছাও করে! ক’দিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন অনেক কথার মধ্যে একটি কথা ছিল, প্রতিবেশিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশী বলতে আমাদের ভারত-নেপাল-ভূটান আর বার্মা। এরমধ্যে একলা চলো বার্মাওয়ালাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার সুযোগ সীমিত। নেপাল-ভূটান মানে ‘যাহা ভারত বলিবে তাহা’! আর ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে প্রধানমন্ত্রীর বলে দেয়া লাগেনা। দাদা’রা একটু হ্যাঁ বললেই আহা! এটি আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে কথা না। বিএনপি-জাতীয় পার্টি এরা যে যখন ছিল, তাই হয়েছে!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল সবচেয়ে কম সময়। কিন্তু সো-কল্ড ভারত বিরোধী তথা অ’আওয়ামী লীগ দলগুলোই ক্ষমতায় বেশি ছিল। কিন্তু তাদের আমলেই বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে ভারতীয় লক্করঝক্কর গাড়ির এক চেটিয়া বাজার করে দিতে দেশে জাপানি রি-কন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। যতদূর জানি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশে ব্যবসা করতে বিএনপির মতো একটি সো-কল্ড ভারত বিরোধী দলকেই ঢাকার ক্ষমতায় দেখতে চায়। কিন্তু গত নির্বাচনে এর হিসাবে একটু গড়বড় হয়ে গিয়েছিল! এরমাঝে দশ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালান ধরা পড়ে যাওয়াও ছিল একটি কারণ! ভারতীয় চরমপন্থীদের জন্য অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিল। এখনতো কোর্টে সাক্ষী-আসামিদের কথাবার্তায় এরসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতি মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামিসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে! এমনকি তাদের সাধের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুকও বাবরকে দোষ দিয়ে কোর্টে বক্তব্য দিয়েছেন!
আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে ভারতের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নানান ঘটনায় প্রতিষ্ঠিত। সর্বশেষ ঢাকায় যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এর পিছনেও ভারতীয় ভূমিকা ছিল। পনের আগস্টের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার আগেও ভারতীয়রা বঙ্গবন্ধু সরকারকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা আমলে নেননি। আসলে বাঙ্গালি কেউ যে তাকে হত্যা করতে পারে, এমন ধারনা-বিশ্বাসটিও তার মধ্যে ছিলনা! সে কারনে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের মতো একটি সাদামাটা অরক্ষিত বাড়িতে থাকতেন জাতির পিতা দেশের রাষ্ট্রপতি! কিন্তু এবার শেখ হাসিনা ভারতীয় বার্তাকে আমল দিয়েছেন। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাটিরও সে কারণে বিনাশ হয়েছে অঙ্কুরেই! কিন্তু তুলামূলক ভালো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কী দেশের স্বার্থ ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছে বা না পারছে? এর সোজা উত্তরটি হলো না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ আর তিস্তার পানির ব্যবস্থা করতে না পারাটা এরমাঝে উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা। এর কারণে তিন বিঘা করিডোর যে এখন চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকেম দহগ্রাম-অঙ্গারপোতার মানুষেরা যে যেকোন সময়ে দেশে আসতে-যেতে পারেন, দীর্ঘদিনের ঝুলানো সমস্যাটির সুরাহা সাফল্যটিও কেমন ম্লান হয়ে আছে!
সীমান্ত হত্যা নিয়ে অনেকে একতরফা কথাবার্তাও বলেন। অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, চোরাচালানি এসব কারণে আমাদের লোকজন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া-আসার চেষ্টা করেন, এসবতো সত্যি। যশোর-সাতক্ষীরা সীমান্তের দরিদ্র একজন মানুষ কাজের জন্য ঢাকা আসতে যে টাকা লাগে, এরচেয়ে কম টাকায় সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা-দিল্লী চলে যেতে পারে। বা এপারের চেয়ে ওপারে তুলনামূলক কাজের সুযোগটিও বেশি। আত্মীয়-স্বজনও আছেন।
দেশের অবস্থার জন্য কাজের আশায় মানুষ শুধু ভারতে না অবৈধপথে নানা দেশেও যাবার চেষ্টা করে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢুকতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে বা নানাভাবে মারাও পড়ে। ঢাকায় একবার এক স্বপ্নবিলাসী যুবক বিমানের চাকার খোলের ভিতর ঢুকে বিদেশ যাবার চেষ্টা করেছিল। বিমানটি আকাশে হিমাঙ্কের এলাকায় চলে যাবার পর ওই অবস্থায় ওই খোলের মধ্যেই তার করুন মৃত্যু হয়। সৌদি আরবে নামার সময় চাকা নিচে নামতে গেলে খোলের ভিতর থাকা লাশটি পড়ে রানওয়েতে! ঢাকার বিমান বন্দরের নিরাপত্তাসহ নানাকিছু নিয়ে এ নিয়ে তখন হৈ চৈ হয়েছিল। মানব পাচার বা উন্নত একটি জীবনের আশায় মানষের এমন যে কোনভাবে দেশ ছাড়ার প্রবণতা-চেষ্টার বিষয়টি শুধু বাংলাদেশ না, সারা দুনিয়ারই সমস্যা। কিন্তু এই অনুপ্রবেশ রুখতে ভারতীয়রা একটি বন্ধু রাষ্ট্রের সীমান্তে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাবে এটা কোন সভ্য দেশের কাজ হতে পারেনা। কোন আন্তর্জাতিক আইনই এটি অনুমোদন করেনা।
ইন্দোনেশিয়া থেকে ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে সারা বছরই লোকজন অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছার চেষ্টা করে। বোট পিপল নামের এ বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিরোধীদল সব সময় অভিযোগ করে সরকারি দলের দূর্বলতার কারনে বোট আসা শুধু বাড়ছে। কমছেনা। মানব পাচারকারীদের হাত ধরে এসব বোটে যারা রওয়ানা দেয়, তারা লাইফ জ্যাকেট পরে থাকে। এরপরও নানা সময়ে সাগরে নৌ দূর্ঘটনায় প্রতিবছর যে কত মানুষের সলিল সমাধি হয়! তবে এমন বোট পিপলকে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসীমায় পেয়ে তাদের উদ্দেশে গুলি চালায় না অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনী। এটা এদেশে কল্পনাও করা যায়না। এমন বোট ধরা পড়ার পর বোটে থাকা লোকজনকে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ক্রিসমাস আইল্যান্ড নামের একটি দ্বীপের ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন জমা থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি নানা কিছু লম্বা সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার আইনটি আবার এমন যে, কোন একজন যদি তার কাছে পৌঁছে প্রমাণ করতে পারে, দেশে ফিরলে রাজনৈতিক-গৃহযুদ্ধ বা যৌক্তিক কারণে তার বা তাদের জীবন বিপন্ন হবে, তাহলে এ মানবিক রাষ্ট্রটি তাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য। কিন্তু এ বিষয়গুলোর সত্যতা তারা সংশ্লিষ্ট দেশে নিজেরা তদন্ত করে। যেমন বাংলাদেশের কেউ এসে এমন আশ্রয় চাইলে তা ড. কামাল, ড. জহিরের বা এ পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠিত ল’ফার্মের মাধ্যমে তারা এর সত্যতা তদন্ত করায়। এসব কাজে এরা প্রতিবছর শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ পেতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কেস শতভাগ নিষ্ঠা-বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে করার চেষ্টা করে।
কিন্তু ভারততো গড়পড়তা আমাদের মতোই একটা দেশ। ভারতীয়রাও এভাবে অস্ট্রেলিয়া আসার-থাকার চেষ্টা করে। অস্ট্রেলিয়ানদের মানবিকতা আমরা ভারতের কাছে আশা করতে পারিনা। প্রথমে যেটা চেষ্টা করতে পারি, তাহলো আমাদের লোকজন যাতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা না করে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিন্তু কে তা করবে? রাষ্ট্রতো এই মানুষজনকে কাজ দেবার গ্যারান্টি দেবেনা, বা তার সে সামর্থও নেই। যে দেশে বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি সব আমলে ভারতীয় গরু চোরাচালান হয়ে আসে, গরু চোরাচালানের বখরা সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পর্যায় পর্যন্ত ভাগাভাগি হয়, ভারতীয় গরু না এলে আমাদের মাথা নষ্ট(!), মাংসের বাজার চড়ে, মুসলমানি্ত্ব-কুরবানি, এসব ঠিক থাকেনা, সেখানে সীমান্তে অনুপ্রবেশ-চোরাচালান বন্ধ হবে, এমন আশা করাটাই বাতুলতা মাত্র। গরু চোরাচালানির সঙ্গে শুধু বিজেবি না, বিএসএফও জড়িত। দু’পক্ষের সমঝোতা ছাড়া কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে গরুর পাল বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনা। সর্বশেষ সীমান্তে আমাদের যে মানুষটিকে ল্যংটা করে পিটানো নিয়ে আমরা চিল্লা-চিল্লি-প্রতিবাদ করেছি সেও কিন্তু একজন গরু চোরচোলানি। বিএসএফ’এর টাকার বখরা নিয়ে কোন সমস্যাকে কেন্দ্র করে নিঃসন্দেহে তেমন ঘটনা ঘটেছে। এখন আমাদের গরুর দরকার, কিন্তু আজ পর্যন্ত এ বিষয়টি বৈধভাবে আমদানির ব্যবস্থা করছিনা কেন? এসবের দায়দায়িত্ব কার?
আমরা কেন আজ পর্যন্ত ভারতকে বোঝাতে পারলাম না যে, একটা মানুষ সে অনুপ্রেশকারী বা সন্দেহজনক যাই হোকনা কেন, তাকে বা তাদেরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়না। ভারত যদি এটা না শুনতে চায়, এ এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে জাতিসংঘ আছে, আন্তর্জাতিক আদালত আছে। সমু্দ্রসীমা জয় করতে যদি আমরা ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারি, দেশের মানুষ হত্যাকান্ড বন্ধে একই কাজ করতে পারিনা কেন? এসব আর কাকে কী বলবো! দেশে আমরা র্যাব সহ নানা কিছুকে দিয়ে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করি, এসব হত্যাকাণ্ডকে দেশেরই একদল মানুষ সন্ত্রাসী মারা হয়েছে বলে বাহবা দেন, এর কারনেই কী সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে আমাদের সরকারগুলোরও আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার মুরোদ-নৈতিক জোর নেই? একবার ইসলামাবাদে পাকিস্তানি এক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের তোপে থ’ বনে যেতে হয়েছিল! ডন পত্রিকার ওই সাংবাদিক আমাকে বলেন, একাত্তরে আমাদের আর্মি তোমাদের দু’লাখ নারীকে ধর্ষনের খোঁচা তোমরা সব-সময় আমাদের দাও। কিন্তু একাত্তরের পর থেকে এ পর্যন্ত তোমাদের দেশের মানব চোরাচালানিরা তোমাদের কত মেয়েকে করাচির পতিতালয়ে এনে বিক্রি করেছে, সে হিসাব কী তোমাদের কাছে আছে? জবাব দিতে পারিনি। আফগানিস্তানের সেই আব্দুর রহমানের মতো মনে মনে বলেছি, ইনহাস্ত ওয়াতাম। এইতো আমার জন্মভূমি।
এখন প্রশ্ন ইলিশ নিয়ে যদি হাসিনা-মমতার টেলিফোনে কথা থাকে, তখন কী তিস্তার পানির বিষয় উঠেছিল? ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে সরকার ঘোষণা দিয়ে যে সাফল্যটি দেখাতে চেয়েছিল, তার নাম তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি। মনমোহনের সফরের সময় এ চুক্তি হয়ে যাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে মমতা ব্যানার্জি বেঁকে বসাতে চুক্তিটিও আর হয়নি। আর হবে কীনা, কবে হবে, তাও কেউ জানেনা! মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী হবার পর প্রথা ভেঙ্গে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকে এ নিয়ে বাঁকা কথা বললেও আমি সেটি ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। আমাদের দরকার আদায় করা। জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী থাকতে গঙ্গার পানি চুক্তি সহ বাংলাদেশের অনেক কিছু আদায়ে সহায়তা করেছেন। জ্যোতি বসুদের চিন্তা ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে অনুপ্রবেশসহ নানা সমস্যা কমে আসবে। মমতার সে দূরদর্শী চিন্তা নেই বা তার তা দরকারও নেই। তার কাছে তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বড়। তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে মমতার অবস্থানটি হলো বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত পানি দেবার মতো পানি তিস্তায় নেই। পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকা খেয়াল করি প্রতিদিন। নদীভরাট, নদী দুষণ, দখল, আমাদের দেশের সব সমস্যা সেখানেও সমান। এই গ্রীষ্মে তাদের নদীগুলোও সব শুকিয়ে সংকীর্ণ। এসব যেমন সত্য, তেমন সত্য হচ্ছে তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে নানা শাখা-প্রশাখায় মিশে এটি গিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। কাজেই পানি আছে কী নেই এটা মাপার দায়িত্ব মমতার নয়। আন্তর্জাতিক নদীতে বাংলাদেশের প্রাপ্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিতেই হবে। এটিই আন্তর্জাতিক আইন। ভারত এটি না মানলে সমুদ্র সীমার মতো এর বিরুদ্ধে যেতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
বাংলাদেশের নেতারা এসব নিয়ে ভারতের সঙ্গে শক্ত বাহাস, দর কষাকষিতেও যেতে চান না। এর একটি কারণও আছে। জিয়াউর রহমান একবার ফারাক্কা ইস্যু জাতিসংঘে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পানি আদায় করতে পারেননি। আসলে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এমন সব জায়গাতেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট দাপট। পেশাদারিত্বের অভাবে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কথা বলা, পেপার ওয়ার্কের মতো লোকবলের অভাব আমাদের যথেষ্ট। আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য পর্যন্ত নেই। একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে বদনাম-অভিযোগ করে। বিদেশিরাও এসবের সুযোগ নেয়। সে কারনে দেশের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার সাহসও যেন সরকারের নেই! পিঠ বুলিয়ে দাদা যদি দেন, দিদি যদি দেন, করে সব সময়! তিস্তা চুক্তি, পদ্মা সেতু, উড়াল রেল এসব কিন্তু আগামি নির্বাচনে এ সরকারকে ভোগাবে। প্রধানমন্ত্রীকে তাই বলি, দিদি’কে ইলিশ দেন, জামদানি দেন, দিদির দেশে বাড়ি বাড়ি জামাইষষ্ঠী মহাসমারোহে করতে সহায়তা করুন সমস্যা নেই, আগামি নির্বাচনে কিন্তু দিদি এসে ভোট দেবেন না। ভোট দেবে পাবলিক। ভোটের আগে যদি তিস্তায় পানি না আসে তাহলে কিন্তু নৌকা চলবেনা। জেগে ওঠা চরে ধানের আবাদ-ধানের শীষের বাহারি রং ফুটতে পারে। নদী শুকিয়ে থাকলে সে ধানও নৌকা বোঝাই আনতে পারবেন না। অতএব পানি আদায়ের যা করার তাড়াতাড়ি করুন। আপনাদের হাতে কিন্তু সময় খুব কম।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
এমএমকে- [email protected]