১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা—বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন।
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় ও অম্লান। আনন্দ ও আবেগে মাখা বিজয় দিবস। জাতির জীবনে এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন।
পৃথিবীতে কয়টি দেশ আছে, যারা নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করে বিজয় দিবস অর্জন করেছে? ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আত্মত্যাগ, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ১৬ সংখ্যাটি বাঙালির জীবনে গর্ব ও আনন্দের দিন। দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান একজন ক্রীড়া অন্তপ্রাণ মানুষ। খেলাধুলা ঘিরে তাঁর উৎসাহ সেই শৈশব থেকে। একসময় নিজে খেলেছেন। ব্যস্ততার মধ্যেও এখন খেলার খোঁজখবর রাখেন এবং দেশের ক্রীড়ার মানোন্নয়নের চিন্তা তাঁকে সব সময় তাড়া করে। তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ ও সম্মতিতে একনিষ্ঠ ফুটবল প্রেমিক ইমরুল হাসান (বর্তমানে বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট) এবং তাঁর কয়েকজন ফুটবল অনুরাগী মিলে ‘বসুন্ধরা কিংস’ প্রতিষ্ঠা করেন—দিনটি ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস।
বিজয় দিবসকে বাঙালির ফুটবলে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবস ১৬ ডিসেম্বর। পাইওনিয়র লীগে বসুন্ধরা কিংসের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে।
প্রথম থেকেই মনেপ্রাণে স্বদেশানুরাগে বিশ্বাসী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, তাঁর ক্রীড়াপিপাসু সন্তান যাঁরা গ্রুপের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন এবং গ্রুপের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার কাছে ১৬ সংখ্যাটি বড় প্রিয়, ভালোবাসা ও আনন্দের। ১৬ সংখ্যাটিকে সবাই হৃদয়ে ধারণ করেন বিজয় দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। বসুন্ধরা গ্রুপের সব বিনিয়োগ ও উদ্যোগ বাংলাদেশকেন্দ্রিক। আর তা দেশ ও মানুষের কল্যাণে। গ্রুপের সামাজিক কার্যক্রমের পরিধির গণ্ডি অনেক বড়।
বাঙালি নিজেদের রাষ্ট্র পেয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর বিজয় দিবস থেকে। এর আগে রাষ্ট্র নামের জাতির এই বৃহত্তম সংগঠনটির সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ক্রীড়াঙ্গনের ফুটবলে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বসুন্ধরা কিংসের জন্ম। ‘জেনেরিক’ দল হিসেবে নয়, প্রথম থেকেই বসুন্ধরা কিংসকে ‘ভ্যালু অ্যাডেড’ একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে চলেছে অগ্রগামী চিন্তার পেশাদারি নির্বাহী পরিষদ।
বসুন্ধরা কিংসের স্লোগান হলো—‘BORN TO BEAT’ অর্থাৎ ‘জন্ম জয়ের জন্য’। আর এই জয় শুধু মাঠের লড়াইয়ে নয়, ফুটবলের উন্নয়নে সব প্রতিবন্ধকতার বিপক্ষেও। কিংস পরাজয় মানতে রাজি নয়। কিংসের জয় মানে ভালো ফুটবল এবং সময়ের চাহিদা পূরণের জয়। নতুন সংস্কৃতির জয়। বসুন্ধরা কিংস ফুটবলের জয় উপভোগ করতে চায় সব অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে। স্বপ্ন একা দেখে না, স্বপ্ন দেখে সমষ্টিগতভাবে অংশীদারদের নিয়ে।
ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিচালনা পরিষদ তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ধারাবাহিকতার সঙ্গে ‘শ্রেষ্ঠতার মুকুট’ উপহার দিতে সক্ষম, তার উদাহরণ হলো বসুন্ধরা কিংস। মাঠে এসেই পর পর চারবার প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে বারবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। একটির পর একটি রেকর্ড সৃষ্টির নজির তো আর নেই।
ক্লাব ফুটবলে সংবেদনশীলতা বড় বেশি। অনেক কিছু ভেবেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেন ক্লাব সমর্থক ও ভক্তরা। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান বলেছেন, ক্লাব সমর্থক ও ভক্তরা বলেন—‘আজ আমাদের খেলা। নতুবা বলেন, আমাদের খেলা আগামীকাল বা পরশু। এই সমর্থক ছাড়া তো খেলা সংগীত ছাড়া নাচ দেখার মতো। ’
বিজয় দিবস ১৬ সংখ্যাটির দর্শন কিংস দলে চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে—১১ জন খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট, বসুন্ধরা গ্রুপ ও সমর্থকরা। ১৬ নম্বর জার্সির একক অধিকার শুধু সমর্থকদের জন্য মহান বিজয় দিবসকে সব সময় মর্যাদার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। একমাত্র সমর্থক ও ভক্তরা ছাড়া বসুন্ধরা কিংসের মাঠে খেলোয়াড়দের কখনো ১৬ নম্বর জার্সি পরতে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হবেও না ভবিষ্যতে। আমার সন্ধানী মন এই বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্লাব ফুটবল সংস্কৃতির গভীরতার মধ্যে ঢুকে এ ধরনের নির্দিষ্ট সংখ্যার জার্সি (১৬) শুধু সমর্থকদের জন্য বরাদ্দ—এ রকম কোনো নজির পাইনি। বসুন্ধরা কিংস যখন ভারতে খেলতে গিয়েছিল তখন সব সমর্থককে লাল রঙের ১৬ জার্সি পরা অবস্থায় গ্যালারিতে দেখে বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন এই বিষয়টি কী? উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘১৬ সংখ্যাটা আমাদের কাছে গর্বের। আর তাই ফ্যান জার্সিতে আমরা ব্যবহার করেছি। আমাদের প্রতিটি ম্যাচে সব সমর্থক এই ১৬ নম্বর জার্সি পরেই মাঠে আসে। আমাদের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৬ নম্বর কোনো দিন কোন ফুটবলারকে দিইনি। ভবিষ্যতেও আমাদের ক্লাবে কেউ এই নম্বরের জার্সি পাবে না। এটা শুধুই সমর্থকদের জন্য। ’
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি)
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
আরএইচ