আজকাল প্রায় প্রতিদিনের লেখালেখি কমিয়ে মৌলিক কিছু লেখার কথা ভাবি। গত চার বছর ধরে প্রতিবারই ঈদকে সামনে রেখে বিশেষ একটি লেখা শেষ করার শপথ করি।
দেশের রাজনীতির সর্বশেষ সংযোজনটি হলো ‘নাগরিক ঐক্য’ নামের একটি সংগঠন গড়ার ঘোষণা। বাংলাদেশের হতাশাব্যঞ্জক, দুর্নীতিগ্রস্ত, সংঘাতপ্রবণ যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে এ ধরনের একটি নাগরিক শক্তির উত্থান অথবা আন্দোলনের দরকার এবং সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এর জন্যে সবার আগে দরকার এর কালিমাহীন সফেদ একটি নেতৃ্ত্ব। শুধুমাত্র এদিকটায় ঘাটতির কারণেই আগেও এ ধরনের বেশকিছু উদ্যোগ মার খেয়েছে অথবা কার্যকর হয়নি। এই নিষ্কলুষ অবস্থাটি এই নাগরিক ঐক্য-নেতাদেরও নেই। বরঞ্চ চরম কিছু ধান্ধাবাজ এর সঙ্গে জড়িত আছেন! আওয়ামী লীগ-বিএনপি এই দু’দলের বাইরে তৃতীয়ধারার রাজনীতির কথা বলে এরা হয়তো আরেকটি ১/১১’র ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবেন(যা আগেও তারা করেছেন), এমন ভদ্রবেশি একটি সংগঠনের ভিতরে থেকে হয়তো তারা যার যার সুবিধামতো আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র অথবা তাদের ‘স্বপ্নের তৃতীয় শক্তি’র পারপাস সার্ভ করতে পারবেন, এর বেশি কিছু করতে পারবেন না বা পারার সুযোগ নেই। তবে এই ব্যানার শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে তা হয়তো আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্না তথা প্রিয় মান্না ভাই’র নির্বাচনী ব্যানার হতে পারে। কিন্তু সে নির্বাচনও আর কবে হবে তা কেউ জানে না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো দলই এখন আর সে নির্বাচন চাইছে না। ‘স্বপ্নের তৃতীয় শক্তি’ এলে যদি সে নির্বাচন হয়, এমনও হয়তো ভাবা হয়ে থাকতে পারে!
এখন একটু এই ‘স্বপ্নের তৃতীয় শক্তি’র বিষয়ে একটা ব্যাখ্যা দিই। তৃতীয় ধারার রাজনৈতিক শক্তি বের বা সৃষ্টি করতে যে নিষ্কলুষ ক্যারিশম্যাটিক নেতৃ্ত্ব ও খাস নিয়ত লাগে তা আমাদের এসব উদ্যোক্তার নেই। আর এ কারণে তৃতীয় ধারার রাজনীতির কথা মুখে বললেও এদের মনের মধ্যে কিন্তু ১/১১ মার্কা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার জাতীয় কারও ‘শুভাগমন’! এটি আমাদের ড ইউনূস, ড কামাল থেকে শুরু করে এ জাতীয় সবার মনের মধ্যে কিলবিল করে! বিএনপির ১৮ দলীয় জোটে কল্যাণ পার্টির ব্যানারে এখন মেজর জেনারেল(অবঃ) ইব্রাহিম নামের আমার প্রিয় একজন মানষ আছেন। গুছিয়ে কথা বলতে পারেন বলে রাজনৈতিক দল করার আগ পর্যন্ত নানা টিভি’র টকশো সহ নানা মঞ্চে তার একটি মুক্তবিহঙ্গ জনপ্রিয়তা-গ্রহণযোগ্যতা ছিল। রাজনৈতিক দল গঠনের পর সেটি কোথায় কী অবস্থায় আছে বা পৌঁছেছে তা আমার প্রিয় ইব্রাহিম ভাই’রই নিজের আঁচ করে বোঝার কথা! গত ১/১১’র আগে এক টিভি’র টকশো’তে ইব্রাহিম ভাই’র আকুল একটি উক্তি এখনও কানে বাজে! সেটি ছিল ‘সেনাবাহিনীর মধ্যে কী এমন দেশপ্রেমিক কেউ কী নেই যে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসতে পারেন! আল্লাহ’র ওয়াস্তে আসেন, দেশটাকে উদ্ধারের একটি উদ্যোগ নিন’! জেনারেল ইব্রাহিমের সে আকুতি কাজে দিয়েছিল। ১/১১ ওয়ালারা আসার পর তাদের ছত্রছায়ায় থেকে ‘কল্যাণ পার্টি’ নামের একটি কিংস পার্টি গঠন করলেও তার নিজের বা দেশের কল্যাণের কিছুই যে করতে পারেননি, তাতো এর মাঝে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অতঃপর সাবেক সেই কিংস পার্টি নিয়েই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ছত্রছায়া নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল(অবঃ) মুহম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক! ১৮ দলীয় জোটে তিনি ছোট একটি দলের নেতা। জামায়াত নেতারা যদি তাকে কাছাকাছি আশেপাশে বসতে দেন, তাতেই ধন্য হন-বর্তে যান! এই হচ্ছে তার তৃতীয় ধারা স্বপ্নের পরিণতি!
আমেরিকা-ব্রিটেনের পরামর্শে গত ১/১১’ওয়ালারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদে ড ইউনূসকে চেয়েছিল। সাংবিধানিক ধারণায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বয়স হবে ৩ মাস। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কারবিজয়ী ড ইউনূস প্রস্তাব নিয়ে আসা উর্দিওয়ালাদের কাছে প্রথমেই তাদের সরকারের মেয়াদ নিয়ে জানতে চান। তারা দু’বছর বলাতে তিনি পিছিয়ে যান! কারণ তিনি এমন একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রধান হতে চেয়েছিলেন, যেটি কমপক্ষে পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকবে! আরেক পক্ষের তথ্য হচ্ছে প্রস্তাবটি পেয়ে ড ইউনূস ফজলে হাসান আবেদ, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ড দেবব্রতদের মতো প্রভাবশালী-ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে পরামর্শ না করে তার ভাই সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করলে তারা তাকে এ দায়িত্ব নিতে নিরুৎসাহিত করেন। অতঃপর তার পরামর্শে ড ফখরুদ্দিন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা হয়। পিছনে পিছনে ছায়া হিসাবে কাজ করতে থাকে জেনারেল মইনের নেতৃ্ত্বে আরেকটি সরকার! এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে একই দেশের প্রশাসন দেখে ফখরুদ্দিনের সরকার আর রাজনীতি দেখে জেনারেল মইনের সরকার! এরা হাসিনা-খালেদাদের গ্রেফতার করে, ড আনোয়ার হোসেনের মতো ঢাবি শিক্ষকদের পাকিস্তানি কায়দায় চোখ বেঁধে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে! আর সারাদিন সমন্বয়হীন গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান ব্যারিস্টার মইনুল, মেজর জেনারেল(অবঃ) মতিনগং! গ্রামীণ ব্যাংক সহ তার সমগ্র সৃষ্টি সমূহের কাজ বাদ দিয়ে সেই একটি অনির্বাচিত সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে নাগরিক শক্তি নামার আরেকটি কিংস পার্টি গড়ার চেষ্টা করেন ড ইউনূস! আর নিজস্ব রাজনৈতিক স্বপ্নে জনগনকে ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’ জাতীয় বক্তৃতা-পরামর্শ দিয়ে বেড়ান জেনারেল মইন! জাতি হিসাবে আমাদের লেখাপড়া, বাস্তব কাজকর্মের মেধাজ্ঞান, ক্যাপাসিটি-ক্যাপাবিলিটি এসবের সীমাবদ্ধতা সহ একশো সমস্যা আছে। এর ওপর এসব দুই সরকার আর তাদের ড ইউনুস, ড কামাল জাতীয় পরামর্শকদের নানান সমন্বয়হীনতায় তাদের কারোর কোনো কিছুই কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ব্যাটেবলে হয়নি! অতএব ড হোসেন জিল্লুর রহমানকে আমেরিকা-কানাডা পাঠিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা সমঝোতা করে তৃতীয় ধারার স্বপ্ন বাদ দিয়ে ড ফখরুদ্দীন, জেনারেল মইনরা হন দেশ ছাড়া! এসবের ক্ষতধারায় গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া হন ড ইউনূস! এরপরও ইউনুসের পক্ষে বলার জন্য হিলারি ক্লিনটনরা আছেন। ‘মাইনকার চিপায়’ পড়ে যাওয়া ফখরুদ্দিন-মইনদের পক্ষে কোথাও কেউ নেই!
শুক্রবার জুম্মা বার দেখে ঘোষণা করা নাগরিক ঐক্যের নেতারাও কিন্তু নানাভাবে সেই ‘১/১১ ভিত্তিক তৃতীয় ধারা স্বপ্নের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিলেন! ১/১১ আসায় দেশে অর্থনৈতিকভাবে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে লাভবান হন তিনি আমার প্রিয় আইনজীবীদের একজন, ব্যারিস্টার রফিকুল হক! মহাজোটের অন্যতম নেতা হওয়া স্বত্ত্বেও ড কামাল হোসেন কিন্তু তখন শেখ হাসিনার পক্ষে কোর্টে দাঁড়াননি। দাঁড়িয়েছেন ব্যারিস্টার রফিক। হাসিনা-খালেদা দুই নেত্রীর জন্য কোর্টে দাঁড়ানোর বিনিময়ে দুই নেত্রীর কাছ থেকে তিনি কোনো্ পারিশ্রমিক নেননি। কিন্তু দেশের যত রাঘব-বোয়াল দুর্নীতিবাজ তখন ধরা পড়েছিলেন, শুধুমাত্র টাকার জন্য তাদের প্রায় সবার পক্ষে কোর্টে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের জাতির বিবেকরুপী এই নাগরিক নেতা! আইন ব্যবসার টাকার আয় দিয়ে তিনি বড় একটি এতিমখানা চালান, আদ-দ্বীনের মতো একটি হাসপাতাল করেছেন বলে তার তখনকার ব্যক্তিগত বিপুল আয়-রোজগারে খুশি হয়েছি। কিন্তু যিনি সারাদিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেন, বড় দুইদলের জমিদারির পাল্টাপাল্টিতে ত্যক্ত-বিরক্ত আমাদের তৃতীয়ধারার স্বপ্ন দেখান, তিনি কোর্টে বরাবর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের পক্ষে, এটি কী সোজাসাপটা স্ববিরোধিতা না? ইনারা আমাদের নতুন কী রাজনীতি দেবেন? আর ব্যারিস্টার রফিকতো এই সেদিন ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া’ বলে বিএনপির অনশনের মঞ্চে গিয়ে বক্তৃতার মাধ্যমে নিজস্ব সর্বশেষ রাজনৈতিক কেবলাটি নিজেই পরিষ্কার করেছেন! পাজামা-পাঞ্জাবি পরে শুক্রবারও গিয়ে বক্তৃতা দিয়ছেন বিএনপির দলীয় মুখপত্র দৈনিকের অনুষ্ঠানে। তিনি কিভাবে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ অথবা তৃতীয় ধারা সৃষ্টিতে নেতৃ্ত্ব দিতে পারেন? এভাবে ভুলপথে ভুল মানুষজনের নেতৃ্ত্বে নাগরিক ঐক্যের যাত্রাটাই হয়ে গেল বুঝি নাস্তি!
মাহমুদুর রহমান মান্না এক সময়কার সৃষ্টি সুখের উল্লাসী তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতা। আওয়ামী লীগের সাম্রাজ্যবাদী-সামন্তবাদী নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে আমাদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাতেন। মতিয়া চৌধুরীদের অনুসরণে নিজের দল বাসদের আ ফ ম মাহবুবুল হকদের সহ বিপ্লবের স্বপ্ন ছেড়েছুঁড়ে তিনিও একদিন আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার ছায়াতলে আশ্রয় নেন। তার সঙ্গে ডাকসুর জিএস আখতারুজ্জামান অবশ্য আগেই যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। এদের মতো প্রতিভাবান নেতাদের কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ আরও উজ্জ্বল অবস্থানে যেতে পারতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার পরিবারভিত্তিক অবস্থা এমন যে এখানে বেশি ক্যারিশমা থাকা বা দেখানোর বিপদও অনেক! বিএনপির তারেক রহমানের চাইতে ক্যারিশম্যাটিক হয়ে যাচ্ছিলেন বিদেশে পড়াশুনা করা মাহী বি চৌধুরী! এ নিয়ে দ্বন্দ্ব পরবর্তী সময়ে এত বিধবংসী রূপ নেয় যে, এর জন্য শুধু তাকে না, তার বাবা বদরুদ্দোজা চৌধুরীকেও বঙ্গভবন থেকে বিতাড়ণ করা হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে অনেক মেধাবী তুখোড় নেতা থাকতে এ দল দুটির সাধারণ সম্পাদক-মহাসচিবদের বায়োডাটা দেখলেই বোঝা যাবে শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া কী চান! এক সময়কার অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী এসব ভালো বোঝেন-পারেন বলে তিনি বেশ আছেন! এসব বুঝে-শুনে চলার ক্ষেত্রে মাহমুদুর রহমান মান্নারা সেখানে চরমভাবে ব্যর্থ বলে তার আজকের এই না-ঘরকা না-ঘাটকা অবস্থা! শেখ হাসিনা শুধু তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়াটাই শুধু বাকি রেখেছেন! মাহমুদুর রহমান নিজে নিজে এক রকম জোর করে ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগার হিসাবে তার আইডেনটিটি! ডাকসুর সাবেক বিপ্লবী ভিপি মান্না ভাই গত ১/১১’র সময় আমাদের রাজনৈতিক সংস্কারের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন-লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার অফিসারদের মগজে বিশ্বাস করে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটিওতো সত্য! প্রিয় মান্না ভাই যদি দেশের তরুণ সমাজকে নতুন স্বপ্নে আন্দোলিত করতে পারেন, তাতে সবচেয়ে বেশি যারা খুশি হবেন, সে তালিকায় আমার নামটিও যে থাকবে তা তিনি জানেন। কিন্তু এ আন্দোলন কাদের নিয়ে? ব্যারিস্টার রফিক, আসিফ নজরুলদের নিয়ে? ব্যারিস্টার রফিককে তিনি আন্না হাজারের মতো অনশনে বসতে বলেছেন! পঞ্চাশ লাখ লোক জমায়েত করতে বলেছেন! ব্যারিস্টার রফিক একজন পেশাদার আইনজীবী। টাকা দেখলে কে দুর্নীতিবাজ আর কে ফেরেস্তা এ নিয়ে যার কোনো বাছবিচার নেই, তার কাছে এমন কী করে আশা করতে পারলেন মান্না ভাই? তার মক্কেলদের সবাইও কী তাকে দেখতে আসবে আসা করা যায়? যেহেতু তিনি এখন বিএনপি-জামায়াতের স্টেজমেটদের একজন, তারা সেখানে হয়তো অবশ্য আসবেন। কিন্তু সেটিতো তখন বিএনপি-জামায়াতেরই আরেকটি প্রোগ্রাম শো’ হয়ে যাবে! নাগরিক ঐক্যের থাকবে না। এখনও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না কী সে মঞ্চে স্বস্তিবোধ করবেন?
শুক্রবার নাগরিক ঐক্য ঘোষণার অনুষ্ঠানেই তাদের জাত চিনতে আরেকটি সহযোগিতা দিয়ে ফেলেছেন আসিফ নজরুল! বিগত ১/১১’র মিডিয়া প্রপাগান্ডা সংগঠনের দায়িত্বে যারা ছিলেন আসিফ নজরুল তাদের অন্যতম। তখনকার টকশো’ সহ তার নানা টিভি অনুষ্ঠানের সিডি যাদের কাছে আছে তারা তাকে ও তার সহযোগীদের ভালো চেনেন-জানেন। মাঝে ‘দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী মনে করি না’ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে সমস্যা দেখে তিনি তা প্রত্যাহার করেন! শুক্রবারের ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ বলে দেশকে কৃত্রিমভাবে ভাগ করা হয়। অথচ স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট করেছে সব কটি দল’। আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের ফোরাম করেন। আমরা যখন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন শুরু করি তখন থেকেই বিএনপি-জামায়াতওয়ালারা এটিকে দেশকে বিভক্ত করার চক্রান্ত হিসাবে দেখে-বলে আসছে। আসিফ নজরুল শুরুতে আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সময়মতো তার জায়গাতেই ফিরে গেছেন! এখন আরেকটু স্মার্টভাবে তিনি যে ‘কৃত্রিম বিভক্তির’ কথাটি তুললেন, এ ব্যাপারে তাদের ‘অকৃত্রিম’ অবস্থানটা কী, এ ব্যাপারে প্রিয় মাহমুদুর রহমান মান্না ভাই ব্যাখ্যা দেবেন আশা করছি।
এ ব্যাপারে আসিফ নজরুল তার পরিচিত রাজনৈতিক অবস্থানটিই বলেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে থাকলে তাও স্পষ্ট করবেন আশা করছি। এ নিয়ে এই নাগরিকদের সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার রফিকের পৃথক কোনো বক্তব্য সঙ্গত কারণেই আশা করি না। কারণ আমরা তাকে চিনি-জানি। তিনি কখনোই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে একাট্টা লোক ছিলেন না। এখনও নেই। তিনি পেশাদার উকিল। মক্কেল মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার, এ নিয়ে তার কোনো বাছবিচার,আসক্তি,নিরাসক্তি কিছুই নেই।
পাদটীকাঃ যদ্দুর মনে পড়ে দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার মড়কে অকল্পনীয় মৃত্যু পরিস্থিতির প্রতিবাদে সাংবাদিক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী ঈদ পালনের কর্মসূচি দিলে সেখান থেকেই এক নাগরিক ঐক্য সংগঠনটির নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। এরপর যখন এই নাগরিকদের পক্ষে বিএনপির একটি হরতালকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয়া হয়, উদ্যোগটি তখন বিতর্কের মুখে পড়ে। কিন্তু যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে এই সংগঠনের নিউক্লিয়াস, শুক্রবারের ঘোষণা অনুষ্ঠানে তাকেই অর্থাৎ সৈয়দ আবুল মকসুদকেই দেখা যায়নি! এ ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, এর উদ্যোক্তারা গত কিছুদিন ধরেই তাকে এড়িয়ে চলছেন! এমনকি সমকালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেখা হবার সময়ও এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বলেননি! সূত্রটি বলেছে, এই যে তাকে না জানিয়ে চুপি চুপি সংগঠনের শুভযাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, এতে সৈয়দ আবুল মকসুদ খুশিই হয়েছেন। কারণ সংশ্লিষ্ট কারও কারও রাজনৈতিক লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে তিনি এমনিতেই তাদের সঙ্গে অস্বস্তিবোধ করছিলেন।
শেষ কথাঃ তাহলে চলমান অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তির পথ কী? দেশ কী এমন অনিশ্চিত-আশা-লক্ষ্যহীন চলতেই থাকবে? আমি তা মনে করি না। দেশের ভিতর থেকে বিশেষত শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্য বিশেষ একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে অথবা চলছে। অনলাইন বিপ্লবের কারণে এদের সবার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের বিষয়টিও অনেক সহজ-দ্রুততর হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিস্বার্থ মতলবি-ধান্ধাবাজদের বিরুদ্ধে এদের ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসবে নেতৃত্ব। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এভাবে অনন্তকাল স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লীলাক্ষেত্র হয়ে থাকবে না। সামনে অবশ্যই সুদিন।
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]