তারা বানুর সংসারে দিন আনতে পান্তা ফুরাত। অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে সমানতালে চলে স্বামীর নির্যাতন।
হঠাৎ একদিন সড়ক ধরে দল বেঁধে একই গ্রামের মর্জিনা, কুলসুমদের হেঁটে যাওয়া দেখে জানতে পারে, গ্রামে এনজিও এসেছে। মহিলাদের সুদে টাকা ধার দেয়। তারাবানুর মনে হলো, একখানা সেলাই মেশিন আর কিছু কাপড় কিনে তো সে নিজেই ঘরে বসে কিছু একটা করতে পারে। লোন এনে কাজের কিছু করতে পারলে মন্দ কি! পরিবারের ‘অবস্থা’ যদি একটু ফেরে।
রাতে জুয়া খেলে বাড়ি ফিরতেই তারাবানু স্বামীকে কথাটা বলে। প্রথমে রাজী না হলেও ভাল থাকার হাতছানিতে রাজী হয়ে যায়। পরের দিনই হাতের কাজ কোনোভাবে শেষ করেই তারাবানু এনজিওর সদস্য হতে ছুটে যায়। একদিন তারাবানুর সেলাই মেশিনের দোকান করার স্বপ্নও পূরণ হয়। এক সময় বাড়িতে ছোট্ট একটা মুরগীর ফার্মও গড়ে তোলে। তারপর ধীরে ধীরে তারাবানুদের সংসারের অবস্থা ফেরে। তিনবেলা ভালোভাবে খেতে পারাসহ দু’সন্তানকে নিয়মিত স্কুলেও পাঠায়।
এভাবে তারাবানুর ‘অবস্থা’ ফিরলেও তার ‘অবস্থানের’ কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনো স্বামী রাতে জুয়া খেলে বাড়ি ফিরে এসে মাঝেমধ্যেই গায়ে হাত তোলে। সংসারের কোনো সিদ্ধান্তেই তারাবানুর কোনো অংশগ্রহণ নেই। এমনকি নিজের আয়ের উপরেও তার কোনো কর্তৃত্ব নেই। স্বামীই পরিবারের একচ্ছত্র মালিক। তারাবানুর দৌড় স্বামীর বেঁধে দেয়া ‘খোটের’ (গণ্ডির) মধ্যেই। এর ভিতরে যতোখুশি নাচো, হাত-পা দোলাও সমস্যা নেই। খোট অতিক্রম করলেই খবর আছে!
মারধরের পরিমাণ মোটেও কমেনি। বরং তার প্রকৃতি পাল্টেছে। আগে স্বামী প্রকাশ্যে মারত। তারাবানুও চিৎকার করে, হাউমাউ করে কেঁদেকেটে পাড়া পড়শীর করুণা লাভ করে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করতো। গত ক’দিনে পড়শীরা নির্যাতনের বিষয়টা এনজিওকে জানালে তারা তারাবানুর স্বামীকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়, নির্যাতন বন্ধ না হলে লোন দেয়া বন্ধ করে দেবে। এমনকি তারাবানুকে তারা আইনের আশ্রয় নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। ভড়কে যায় তারাবানুর স্বামী। তারাবানুর আয় বন্ধ হলে জুয়ার টাকা আসবে কিভাবে! তাছাড়া আইনের আশ্রয় নিলেতো সর্বনাশ! সে নতুন কৌশল ফাঁদে। তারাবানুকে শাসানি দেয়: ‘‘মার খাবি কিন্তু আওয়াজ করবি না। করলেই তিন তালাক। ’’ চুপসে যায় তারাবানু। এখন তারাবানু প্রতিরাতে মার খেলেও কাঁ-কুঁ করে না। ওদিকে পাড়াপ্রতিবেশীরা ভাবছে, তারাবানু কতো স্বামী সোহাগী! বেশ! বেশ!
বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘরানায় নারীর স্বাধীনতা বোঝাতে ‘অবস্থা’ এবং ‘অবস্থানের’ একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে। ‘অবস্থা’ বলতে মোটামুটি আর্থিক অবস্থা এবং বাহ্যিকভাবে ভাল থাকা না থাকাকে বোঝায়। অর্থাৎ ভাল খেতে পারা, ভাল কাপড় পরা, ফ্যাশন-ভূষণ করা ইত্যাদি। সেই হিসেবে বড় লোকের কাজের বুয়াদের ‘অবস্থাও’ অনেকের চেয়ে ভাল। একইভাবে আরবের লোকেদের ‘অবস্থা’ ইউরোপের অনেক দেশের নাগরিকের চেয়েও ভাল। কিন্তু গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে নাগরিক হিসেবে তাদের ‘অবস্থান’ হয়তো বা আফ্রিকার কোনো কোনো রাষ্ট্রেরও নীচে হবে।
অন্যদিকে, ‘অবস্থানের’ সঙ্গে ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা এবং ক্ষমতায়নের প্রশ্ন জড়িত। অর্থাৎ কারো ‘অবস্থা’ ভাল না হলেও ‘অবস্থান’ ভাল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামের স্কুলের শিক্ষকের ‘অবস্থা’ ভাল না হলেও গ্রামের যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার পেছনে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কাজেই, গ্রামের ভিতরে তাদের ‘অবস্থান’ অনেক উপরে। একজন ব্যক্তির অবস্থানের পরিবর্তন মানে সে মর্যাদায়িত হয়েছে, সে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা লাভ করেছে, ব্যক্তি হিসেবে স্বাধীনতা পেয়েছে।
তারাবানুর মতো বিগত বেশ ক’বছরে বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ‘অবস্থার’ কিছুটা উন্নতি হলেও এগুলোর ‘অবস্থান’ ঠিক আগের মতোই আছে। সারা বিশ্বে প্রযুক্তি, যোগাযোগ মাধ্যম এবং মানবাধিকার ধারণাটি যুগপৎ যথেষ্ট এগিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে ফেইসবুক, টু্ইটার, ব্লগের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মানুষ তার জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছে। একটা সময়ে কারো সাইকেল থাকলে সে ছিল বন্ধুমহলে জনপ্রিয়। কারণ সাইকেল চালিয়ে খুব সহজে দূরের বন্ধুর সংগে দেখা সাক্ষাৎ করা যেত। এরপরে সাইকেলের জায়গা দখল করে মোবাইল ফোন। বর্তমানে বেশ দাপটের সংগে বন্ধুত্ব রক্ষার মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আগ্রাসীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পাল্টে দিয়েছে বন্ধুত্বের প্রকৃতিও। নতুন পরিচয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট আছে? এগুলো শুধু বন্ধুত্ব রক্ষার হাতিয়ার নয়, দিনে দিনে প্রতিবাদের মাধ্যম হয়ে উঠছে। পাশাপাশি কর্পোরেট গ্রুপগুলো বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা আনুষঙ্গিক অন্যান্য স্বার্থের কারণে নতুন নতুন সংবাদপত্র বের করছে। তার অর্থ এই নয় য়ে, সেই সাথে সাংবাদিকদের সংবাদ পরিবেশনে স্বাধীনতাও বেড়েছে।
বরং আধুনিক বাজার অর্থনীতির সংগে প্রতিযোগিতায় টিকতে গিয়ে, সীমাবদ্ধতার ভিতরে গুণগত মানের সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আরো বেশী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। বলতেই হবে, অতীতের তুলনায় সংবাদপত্রে সরকার এবং বিরোধী দল উভয়েরই কাজের যথেষ্ট মূল্যায়ন থাকে। বিপক্ষে গেলে উভয় পক্ষ সংবাদপত্রের প্রতি বিরাগভাজন হয়। নেমে আসে বিভিন্ন মাত্রার নির্যাতন। মাত্র ক’সপ্তাহের ঘটনার দিকে আলোকপাত করলেই বোঝা যাবে সাংবাদিকরা বাংলাদেশে কতোটা ঝুঁকির মুখে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। মাত্র সেদিন তিনজন ফটো সাংবাদিককে নির্মমভাবে পেটাল পুলিশ। তার পরপরই বিডি নিউজের অফিসের ভিতরেই সাংবাদিকরা রক্তাক্ত হলেন স্থানীয় সরকার দলীয় গুণ্ডাদের হাতে। ক’টা দিন না যেতেই আদালত চত্বরে পুলিশ কর্তৃক শ্লীতহানির শিকার একটা মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে আবারো নির্যাতনের শিকার হন সাংবাদিক এবং আইনজীবীরা।
এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেবার কোনো অবকাশ নেই। কারণ আগে-পরে প্রায় সব সময়ই সরকার অপরাধীদের বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে বক্তব্য এবং কাজের মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ‘’পুলিশ থেকে দূরে থাকার’’ পরামর্শ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ‘’পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে’’ বলে অত্যাচারী পুলিশের পক্ষ নিয়ে সাফাই এবং সর্বশেষে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ‘’সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে সাংবাদিকদের পেটের ভাত হজম হয় না’’ বলে দেওয়া বক্তব্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরকারের বৈরি অবস্থানকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই, বিভিন্ন কারণে মানুষ আগের চেয়ে বেশি তথ্য পেলেও সাংবাদিকদের পেশাগত ‘অবস্থানে’ তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি।
সংবাদের কতোটুকু গৃহীত হবে, কোনটা প্রশংসিত হবে, কোনটা তিরষ্কৃত হবে, সেটা নির্ধারিত হয় সংবাদটা কতোটুকু পক্ষে এলো, কতোটুকু বিপক্ষে গেল তার সমীকরণ করে। এই একচোখা সমীকরণে আবারো আটকে গিয়েছেন সাংবাদিকরা। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, প্রতিদিন সরকারের সমালোচনা করে না লিখলে ‘অনেকের’ পেটের ভাত হজম হয় না’। তিনি আরো বলেছেন, সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই না করে অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়ে লেখা হচ্ছে।
খুবই মজার বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুটা সত্যতা সেই সাংবাদিকরাই প্রমাণ করে ছাড়লেন। সেদিন কয়েকটি পত্রিকা বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সাঈদকে নিয়ে যে খবর পরিবেশন করে সেটা যথার্থ ছিল না। এর চেয়েও মজার কথা হলো, সায়ীদ স্যারের খবর নিয়ে সাংবাদিকদের ভুল এবং প্রধানমন্ত্রীর কথার তাৎপর্যটা এক নয়। কারণ সেই ভুলকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকরা তিরষ্কৃত হলেও আতংকিত হননি। পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রীর ‘বেডরুম পাহারা’ কিংবা ‘পেটের ভাত হজম করা’ জাতীয় মন্তব্যে পুরো সাংবাদিক সমাজে আতংক নেমে এসেছে।
প্র্রধানমন্ত্রী তার পুরো বক্তব্যে সাংবাদিকদের বারবার বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, বিগত জোট সরকারের আমলের চেয়ে তারা অনেক ভাল আছেন। অতএব, কথায় কথায় এই সরকারের কাজের সমালোচনা করা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মূল সুর সংবাদের সত্য-মিথ্যাকে নিয়ে নয়, বরং তা সরকারের কতোটুকু পক্ষে গেল, কতোটুকু বিপক্ষে গেল সেটা নিয়ে।
অপরদিকে, অধ্যাপক আবু সায়ীদ প্রমাণসহ দেখিয়েছেন, সাংবাদিকদের লেখার অপূর্ণতাটা কোথায়। দাপুটে সাংসদদের হাতে সায়ীদ স্যার এতোটা নাকাল হয়েও সাংবাদিকদের উপরে বিন্দুমাত্র বিষোদগার করেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিষোদগার থাকলেও তথ্য বিকৃতি কিভাবে হচ্ছে সেটা খোলাসা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, তার সময়ে সংবাদপত্র যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করছে। ক্ষমতায় এলে সবাই ভুলে যান যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। এটা একটা অধিকারের বিষয়। কোন সরকার কতোটুকু দিল সেটা বলা কওয়ার কিছু নেই। বরং সেটা ব্যাহত হলে সরকারের জবাবদিহিতার প্রশ্ন আসে। সাংবাদিকদের মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ করা রাষ্ট্র তথা সরকারের দায়ের মধ্যে পড়ে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্ব যাদের সেই পুলিশের হাতেই তারা এখন বেশি নিগৃহীত হচ্ছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার পুলিশকে দায়মুক্তি দিয়ে দোষের ভার সাংবাদিকদের কাঁধেই চাপানো হচ্ছে।
বিশ্বায়ন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। দেশের সব বিষয়ই এখন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে চালিয়ে দেয়া যায় না, বিশেষ করে মানবাধিকার ইস্যুটি। মানবাধিকার বিষয়টি এখন বৈশ্বিক। সে কারণে সরকারের কাছে ‘সামান্য’ শ্রমিকনেতা আমিনুলের হত্যা স্বাভাবিক মনে হলেও বিশ্বের কাছে তা এক গুরুতর ইস্যু। আমিনুলের হত্যার জের ধরে একটা দেশের পুরো পোশাকশিল্প বিশ্বেরবাজারে এখন হুমকির মুখে পড়ে গেছে।
আজকাল শুধু সাংবাদিকরাই নয়, দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে আদালত সবখানেই কোনো মন্তব্য নিজেদের বিপক্ষে মন্তব্য গেলেই সরকার তাতে হস্তক্ষেপ করছে। সমালোচনা বন্ধে হুমকি ধমকির পাশাপাশি বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করছে। যেমন, সায়ীদ স্যারের কথিত বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংসদরা বলেছেন, তারা জননির্বাচিত। কাজেই, তারা শুধু জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। তাদের এই কূটকৌশলী কথাকে এক ব্যক্তি সুন্দরভাবে ফেইসবুকে সমালোচনাবিদ্ধ করেছেন:
“ ........ আবু সায়ীদ স্যার কি নিজেও একজন ভোটার নন? তিনিও কি জনগণের একজন নন? নাকি `জনগণ` বলতে আপনারা (রাজনীতিবিদরা) আমাদের মত সাধারণ মানুষকে বোঝেন যারা আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি না এবং সেই সুযোগে আপনারা আমাদের বছরের পর বছর শোষণ (শোষন)করে চলেছেন?”
কেউ কেউ আবার বলছেন, তিনি একজন সজ্জন, ভদ্র মানুষ। কেন গেলেন রাজনীতির মতো জটিল বিষয়ে কথা বলতে। অর্থাৎ ভদ্র মানেই গোবেচারা। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পারবেন না। এটা মত প্রকাশের উপরে প্রেজুডিস আরোপের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলে অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা মাত্র। যেখানে ‘ভদ্র’ মানেই হচ্ছে প্রতিবাদহীন, নিস্কর্মা (নিষ্কর্মা)। সাঈদ (সায়ীদ) স্যার ভদ্র হলেও পরেরটুকু নন। দেশের বিপদে তার মতো মানুষই তো এগিয়ে আসবেন ‘আলোর’ বার্তা নিয়ে। ’’
আবারো তারাবানুর কাহিনীতে ফিরে আসি। তারাবানুর সংসারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এলেও ব্যক্তি হিসেবে তার মর্যাদা কিংবা স্বাধীনতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। তেমনি আগের তুলনায় সংবাদপত্রের সংখ্যা বাড়লেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বাড়েনি। আগের সরকারের আমলেও যেমন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন, খুন হয়েছেন, এখনো সেই বিভীষিকায় ছেদ পড়েনি।
এভাবে তারাবানুর ‘অবস্থানের’ সঙ্গে ‘ভেতো সাংবাদিকদের’ বিস্তর মিল খুঁজে পাই। এনজিওর চাপ যেমন তারাবানুর নির্যাতন থামাতে পারেনি, ঠিক তেমনি সারাবিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যমকে শৃংখলমুক্ত করাতে পারেনি। কষ্টের আয় দিয়ে তারাবানুর তিনবেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা হলেও তার ‘অবস্থান’ আগের জায়গাতেই ছিল। আগে স্বামীর পিটুনিতে আওয়াজ করে কেঁদে কষ্ট কিছুটা লাঘব করলেও এখন চাপা কান্না কষ্টটাকে আটকে রাখে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র আগের মতো সেন্সরশিপের শিকার না হলেও রাস্তাঘাটে এখন পুলিশ এবং গুণ্ডাদের হাতে সাংবাদিকেরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, সেটা সেন্সর আরোপের চেয়েও ভয়াবহ। নির্যাতনের এই দুষ্টচক্র থেকে তারাবানু আর ‘ভেতো’ সাংবাদিকদের মুক্তি কবে মিলবে কে জানে!
[email protected]
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী গবেষক
বাংলাদেশ সময় : ১৩২৪ ঘণ্টা, ০৭ জুন, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]