৬৪ বছরে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যে এই দলটি সব সময়ই শীর্ষে।
ইতিহাসটা থাকলে ডোবে অতীতে
লাভের বদল থাকতে হবে ক্ষতিতে
অতীত যদি অতিকথন চর্বণ বা চর্বিত
কেমন করে জাতি হবে গর্বিত?
অথচ আওয়ামী লীগ কিছুতেই ঝাড়া দিয়ে সটান দাঁড়াতে পারছে না। আজকের আওয়ামী লীগ যদি আত্মবিশ্লেষণ করে তাহলে তার সামনে শুদ্ধি প্রক্রিয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু তাতে তার আগ্রহ নেই। নেই বলেই এক সময়কার দাপুটে নেতারা গৃহবন্দী অথবা দলছুট। তার বদলে মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে ঘোষণা দেয়া অতি বামদের অনেকেই আজ এ দলের নেতানেত্রী। দিলীপ বড়ুয়ার মত বামনেতারা এ দলের মন্ত্রী অথবা রাশেদ খান মেনন, ইনুর মতো নেতারা বিরোধী নেত্রীর মাইনাস ফর্মুলা প্রদানে ব্যস্ত। একেই বলে কলিকাল।
অযাচিতভাবে পাওয়া কিছুই মানুষের সহ্য হয় না। হয় সে তা নষ্ট করে অথবা তাতে তার বদহজম হয়। নব্য আওয়ামী লীগার আর অতি বামদের বদহজমে অবস্থা তাই সঙ্গিন। আওয়ামী লীগ অবশ্য তা মানে না। তারা এখন ডিজিটাল প্রভুদের দোয়ায় ভালোই আছে। কি আশ্চর্যের! দলের বামরাও এই আর্শিবাদে সন্তুষ্ট। অথচ তার আজকের অবস্হানের পেছনে আছে প্রভূত্ববিরোধী দেশপ্রেমিক নেতাদের অবদান।
সত্য কথা বলার নাম গণতন্ত্র, সমালোচনা সহ্য করার নাম রাজনীতি আর এই নীতিতে অটল থাকার নাম আদর্শ। ষাট বছর পর আওয়ামী লীগ এগুলোকে ‘অচল মালের’ মত পরিত্যক্ত বলে ধরে নিয়েছে। দেশব্যাপী নতুন প্রজন্মের সামনে তার আর বিএনপির ভেতর তেমন কোনো ফারাক নেই যা দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরা যেতে পারে। একমাত্র যুদ্বাপরাধীদের বিচার, সে ব্যাপারে সময় নষ্ট বা সময় মত সাধন না হলে এ দলের ভাগ্যাকাশে বিপর্যয় নামতে বাধ্য।
আদর্শ আর উদ্দেশ্যে লাগামহীন হবার চিহ্নগুলো যখন প্রায় স্পষ্ট তখনই দলে নতুন মুখের আগমন চেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।
এদিকে, দলে থেকেও দলের বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না। মান্নার মত নেতা আওয়ামী লীগের বিপরীতে কিছুই করতে পারবেন না। তাঁর পুরোটাই ব্যক্তিগত আস্ফালন। কিন্তু নতুন নেতা বা নতুন প্রজন্ম কোথায়? সৈয়দ আশরাফ নতুনদের আহ্বান জানালেন বটে তিনি কি তাদের নিরাপদ রাখতে পারবেন? পারবেন আদর্শ আর ভয়হীন, দুর্নীতিহীন রাজনীতি উপহার দিতে? কেন আসবে তারা? কিসের টানে?
সবচে` বড় কথা এ দলের বঙ্গবন্ধু কোনোদিন কারো পথ আগলে দাঁড়াননি। জনতার দল ও নেতা বলেই আজ অব্দি তিনি সবার উর্ধ্বে রয়েছেন। কিন্তু নতুনরা যখন জানবেন- তারা এমন দলে যাচ্ছেন যেখানে আমৃত্যু দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারিতে থাকতে হবে জীবনেও শীর্ষে ওঠা যাবে না, তারা কি কারণে এবং কেন সেখানে যাবেন?
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সখ্য হতে পারে না। ষাট বছরেরও অধিক কালের বট গাছটির প্রয়োজন যতটা, ততটাই প্রয়োজন এর পরিচর্যা ও সংস্কার। এটা বুঝতে পারলেই মঙ্গল। তেজপাতা তেজ হারালেও তার সুবাসের জন্য জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগ, তুমি তেজ হারাইয়াছ, সুবাসও হারাইবে কিনা সে তোমার চয়েস!
বাংলাদেশ সময় ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১২
এমএমকে;সম্পাদনা:জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]