অপরাধী গ্রেফতারের ’সম্ভাবনাহীন’ আলোচিত সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে এসে কিল-ঘুষিতে `ধন্য` হলেন সাধারণ নিরীহ কিছু সাংবাদিক, যারা সহকর্মীদের প্রতি নিখাদ মমতায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে জড়ো হয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। লম্বা চওড়া বক্তব্য আর হুমকি ভিন্ন আজোবধি সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলোর কোনো নড়াচড়া দেখি না।
ক্যামেরার সামনে লোক দেখানো পিকচার পারফেক্ট হাসি আর করমর্দনে কখনো ভেতরে লুকিয়ে থাকা অবিশ্বাস-ঘৃণা হারিয়ে যায় না। বরং তুষের আগুনের ধাঁচে বাড়ে, নীরব দহনে পোড়ায় সব। `ছেলে-ছোকরা` সাংবাদিকদের আন্তরিক ও আবেগী দাবি ঠেকানোর আর অন্য কোনো উপায় সাংবাদিক নেতাদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে আসেনি।
নিরঙ্কুশ একাট্টা হওয়া ভিন্ন কোনো উপায় ছিল না নেতাদের অলিখিত `প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির’। হুমকি-ধমকি-সরকারকে ডেট লাইন বেঁধে দেয়া আর মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ’নাটক’ দিয়ে ১৩৫ দিন পার করা গেলেও সাধারণ সাংবাদিকদের ভোলানো যাচ্ছিলো না সাগর-রুনীর হত্যা।
সাধারণ সাংবাদিকদের `নিম্নচাপে’ সৃষ্ট থমথমে আবহাওয়াটাকে সামাল দিতে বেছে নেয়া হয় এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য। রাজনৈতিক নেতাদের ধাঁচে `তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণে` বলা হয়, প্রয়োজনে এটিএন বন্ধ করে দেয়া হবে।
দাবি তোলেন এটিএন চেয়ারম্যানকে আইনি জিজ্ঞাসাবাদের। নেতাদের জ্বালাময়ী বক্ততায় শান্ত ও আশান্বিত হন সাংবাদিকসমাজ। তদবিরের জোরে র্যাবকে তদন্তে যেতে হয় এটিএন কার্যালয়ে।
আপটু দিস পয়েন্ট, দ্য ড্রামা ওয়াজ পারফেক্ট। কিন্তু এটিএনসহ বিভিন্ন খুঁটি থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়া নেতারা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি `পোষা নেতা` হবার খেসারতটি। এটিএন কর্তৃপক্ষ শনিবার রাতে শিল্পী-সমাজকে সঙ্গে নিয়ে ভানুর কৌতুকই করলেন সাংবাদিক নেতাদের সাথে। লাইভ টকশো ধরনের প্রোগ্রামে `পোষা` নেতারা বেশ দলাই মলাই হলেন।
রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিরীহ ও সাধারণ সাংবাদিকদের মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এক নব্য সাংবাদিকনেতা স্ক্রিপ্ট ভুলে বেমক্কা কিছু বাতচিতে মত্ত হলেন। এটিএন সাংবাদিকদের মালিক পক্ষ জানিয়েছেন, কুছ পরোয়া নেই, অল আন্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড পেইড ফর।
এদিকে সিকোয়েন্সের বাইরে আওড়ানো স্ক্রিপ্ট শুনে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ হলেন এটিএনের বেশ ক’জন সাংবাদিক। যদি এই আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় এটিএন? ঈদ সামনে খোয়াতে হয় দুর্মূল্যের বাজারের এই চাকরিটি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের মতোই তারা চড়াও হলেন সংলাপ ভুলে যাওয়া `অভিনেতা’ নেতার ওপর।
ঘুষিগুলো আসলেই খেলেন সাংবাদিক ফেডারেশন আর ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু কী আর করবেন, জলে নেমে কুমীরের সঙ্গে আর ডাঙায় থেকে বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের সৎসাহসটুকু বহুদিন আগেই খোয়ানো নেতারা মিটমাটের নামে `হামলাকারী’ এটিএন কর্মীদের উত্তেজিত সাংবাদিকদের কাছে থেকে ছিনিয়ে আনেন `আদিষ্ট হইয়া’।
মাঝখানে ফেঁসে গেলেন জ ই মামুন। সহকর্মী রুনীর প্রতি মানবিক সহানুভূতি প্রকাশে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে যেতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু যখন তিনি “উপলদ্ধি করেন বা দেখেন ” সাংবাদিক নেতারা তার সাহসী বক্তব্য বিক্রি করেই খাচ্ছেন তখন হয়তো চাকরি বাঁচানোর বেপরোয়া পদক্ষেপে জ ই মামুনকে দাঁড়াতে হয় মালিকদের পক্ষে।
সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধনে থাকা সাংবাদিক আর চাকরি খোয়ানোর দুঃস্বপ্নে কাতর রুনীর সহকর্মী এটিএন কর্মীদের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি। তারা উভয়ে যা কিছুই করেছেন সেটা ছিলো নিঃস্বার্থ ও সত্যনিষ্ঠ। যদিও কলিগদের ওপর হামলাটা অন্যায় ও ক্ষমার অযোগ্য।
ঘুষি-কিলটা পাতি ও নব্য নেতার মুখে পড়লেও মূল ঘুষিটা খেয়েছেন দুই ফেডারেশনের দুই স্বেচ্ছাচারী ও সার্বভৌম চিরস্হায়ী নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও রুহুল আমিন গাজী।
[email protected]
বাংলাদেশ সময় : ১৫১৮ ঘণ্টা, ২৪ জুন, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]