ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাচনঃ আগামীর ভাবনা

ফারুক যোশী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১২

যুক্তরাজ্য থেকে: ব্রিটেনে বাংলা মিডিয়া এখন একটা অবস্থান করে নিয়েছে। কমিউনিটির প্রসার কিংবা প্রচারে বাংলা মিডিয়ার গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না।

যেখানে একসময় শুধুমাত্র মাত্র দু‘তিনটি সাপ্তাহিক এই কমিউনিটির সাফল্য-সম্ভাবনা কিংবা সমস্যাগুলো তুলে ধরতো, সেখানে এখন সাপ্তাহিক পত্রিকার ছড়াছড়ি। অন্তত চৌদ্দটি কাগজ বেরোয় লন্ডন থেকেই। কাগজের প্রয়োজনে শুধুই কাগজের সৃষ্ঠি হয়েছে, অনেকেই বলেন এ কথাটি। কিন্তু এখানেও কিছু কথা আছে। কাগজের প্রয়োজনে কিংবা শখের বশে কিংবা প্রভাব বিস্তারের প্রয়োজনে কিছু কিছু কাগজ বেরুলেও এদের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

সুরমা-জনমত-পত্রিকা প্রভৃতি নামগুলোর সাথে বাঙালী কমিউনিটির একটা যোগসূত্র এরইমধ্যে তৈরি হয়েই গেছে। ফ্রি বিতরণের পত্রিকাগুলো নিয়ে  বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ উচ্চারিত হলেও সাপ্তাহিক বাংলা টাইমস গেলো দু‘বছরে লন্ডনের বাংলা কাগজগুলোর প্রতিনিধিত্বশীল কাগজগুলোর একটায় পরিণত হয়েছে।

লন্ডনের বাইরে ওল্ডহ্যামে "প্রবাস বাংলা"-"জনসেবা" নর্থওয়েষ্টের বাঙালিদের এখন এক অনিবার্য বাংলা মাধ্যম হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে গত ৩ বছর থেকে।   হালে ওল্ডহ্যাম থেকে বেরুচ্ছে ‘কাগজ‘ নামে আরেকটি পাক্ষিক। বার্মিংহামের "বাংলা ভয়েস" মিডল্যান্ডেও একটা আসন তৈরি করেছে।

এছাড়া ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে যুক্তরাজ্যেতো বটেই, সারা ইউরোপ জুড়ে বাংলা এবং বাংলা গণমাধ্যমকে দিয়েছে অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা। চ্যানেল এস, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা,এনটিভি, বাংলা টিভি, চ্যানেল নাইন কমিউনিটিকে লাইভ করে দিচ্ছে তাদের নিউজ-টকশো দিয়ে।

এতে করে খুব স্বাভাবিকভাবে ব্রিটেনে বাংলা গণমাধ্যমে সংবাদকর্মী ও সাংবাদিক বাড়ছে। টিভি চ্যানেল কিংবা পত্রিকাগুলোতে পেশাদারিত্ব প্রাধান্য পাচ্ছে আগের তুলনায়। অনেক পেশাদার সাংবাদিক দেখা এখন পত্রিকাগুলো ্র ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়। পূর্বোল্লিখিত লন্ডনের কাগজগুলোর মান এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। আর টিভি চ্যানেলগুলোতো তাদের বিশাল বাজেট নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে কমিউনিটিতে প্রভাব বিস্তার করার।

গত দশ বছর আগে প্রেস ক্লাব সংগঠিত হয়েছে, হাতে গোনা কিছু সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায়। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব গঠনের পর নর্থ-ওয়েস্ট ইংল্যান্ডে ও বার্মিংহামেও বাংলা প্রেস ক্লাব গঠিত হয়েছে। চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব এখন একটা বড় সংগঠন। সেজন্যেই প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়াটাও গৌরবের। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়াটা আরও সম্মানের। আর কমিউনিটির সাফল্য-সম্ভাবনার সাথে এ নামটি উচ্চারিত হবে আগামীর দিনগুলোতে সময়ে সময়ে বার বার।

নির্বাচন প্রসঙ্গ
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন হচ্ছে শনিবার। এ নির্বাচন নিয়ে কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনা আছে। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে ক্লাব সদস্যদের কাছে চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচার। ক‘দিন আগে আলাপ হচ্ছিলো একটি কাগজের সম্পাদকের সাথে। তিনি দু:খ করে বললেন, কোন এক সময়ে ফোন করেছিলেন এক প্রেসক্লাব সদস্যকে। ফোন করে তিনি তার পত্রিকাটির নাম বলে তার পরিচয়টা দিলেন। কিন্তু ঐ সদস্য তাকে বললেন ঐ পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন আপনি কতদিন আগে? প্রেসক্লাব সদস্য এবং পেশায় শেফ আরও বললেন ঐ কাগজটির সম্পাদক হিসেবে চিনেন তিনি অন্য একজন সাংবাদিককে।

উল্লেখ্য, ঐ সাংবাদিক (অন্য আরেকটি পত্রিকার সম্পাদক) কোনদিন ঐ জনপ্রিয় কাগজে কাজও করেন নি। পেশায় শেফ হওয়া কোন অগৌরবের ব্যাপার নয়, বরং অর্থনৈতিক মানদণ্ডে একজন সাংবাদিকের বেতন থেকে হয়ত দ্বিগুণ কোন কোন ক্ষেত্রে ত্রিগুণই হবে ঐ শেফের বেতন। এবং একজন শেফ পেশাদার সাংবাদিক না হয়েও সংবাদকর্মী কিংবা সাংবাদিকতায় থাকতেই পারেন। বাংলাদেশ শুধু নয়, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর যে কোন জায়গায়ই একজন অন্য পেশার মানুষ কলামিস্ট হতে পারেন, হতে পারেন এমনকি সাংবাদিক, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সংবাদ কিংবা লেখালেখি কিংবা ঐ মাধ্যমের সাথে সম্পৃত্ততা না থাকলে একজন মানুষকে সাংবাদিকতার সনদ দেওয়া কোনভাবেই সাংবাদিকতার জন্যে কোন ভালো দিক নয়। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের জন্যেও এটা অবমননাকর।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা সারা ব্রিটেনের বাঙালি গণমাধ্যমে এখন উচ্চারিত একটা ব্যাপার। সবাই জানে আগামী ৩০ জুন লন্ডনের একটি হোটেলে আড়ম্বরের সাথে এ নির্বাচন এবং উৎসব হচ্ছে। আমাদের ভালো লাগছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসব আয়োজনের। এ উৎসব আয়োজনের বিভিন্ন প্রচার শুনে কমিউনিটির এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং নর্থওয়েস্ট ইংল্যান্ডের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান কিছুটা ক্ষোভের সাথেই বললেন," আমাকেওতো আজীবন সদস্য করা হয়েছে এই প্রেস ক্লাবের"।

সৌভাগ্যক্রমে হোক আর দুর্ভাগ্যক্রমে হোক প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন ক্রয়ের জন্যে চাঁদা সংগ্রহের সময় আমার মাধ্যমে ঐ মানুষটি  দুই হাজার পাউন্ড দিয়েছেন। চাঁদা সংগ্রহের পর একটা অনুষ্ঠানে তাদের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়। আমরা জানি প্রেসক্লাবের ঐ অর্ধলক্ষাধিক ( প্রায় ৭০ হাজার পাউন্ড) পাউন্ড একাউন্টেই আছে। কিন্তু একজন চাঁদাদাতা প্রেসক্লাবকে অর্থ দিয়েছিলেন ব্রিটেনের অন্য চ্যারিটি সংগঠনগুলোকে চাঁদা দেওয়ার মতো নয়। সেজন্যে আজ ৫ বছরের মাথায় এসে প্রেসক্লাবের এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। ডোনারদের অবহিত করা প্রয়োজন কেন কি-ই কারণে অর্থগুলো এখনও জমা আছে ব্যাংক একাউন্টে।

অন্যদিকে প্রেসক্লাবের নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার না রাখলেও প্রেসক্লাবের বিভিন্ন উৎসব-আয়োজনে ঐ মানুষগুলোকে ডাকা, তাদেরকে পর্যবেক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা কোন অযৌক্তিক ব্যাপারও নয়।  

আরেকটি বিষয়  লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব  নির্বাচনে এবারেও দুটো প্যানেল লড়ছে। নির্বাচনী প্রচারে আসছে নানা প্রসঙ্গ। একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে সবাই অনেকটা দূরে। যদিও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শব্দ দুটো এখানেও কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি যেহেতু লাখো মানুষের আত্নদানে পাওয়া স্বাধীনতা আমাদের একটি গৌরবময় অধ্যায়, সেহেতু স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির প্রভাব থাকুক এটা আমরা চাইনা। কিন্তু একজন প্রকৃত সাংবাদিক তার বেচে থাকার প্রয়োজনে অর্থাৎ চাকরির প্রয়োজনে কোথায় কিংবা কিভাবে বসে আছেন, তা বিবেচনায় না নিয়ে প্রেস ক্লাব সদস্যবৃন্দ সাংবাদিককে বেছে নেবেন। তবে অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের মানুষটাকে। কারণ এ নির্বাচনের একটা বড় প্রভাব ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ায়তো বটেই, কমিউনিটিতেও পড়বে।

* ফারুক যোশী: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।