ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

তথ্যকে শক্তি মেনে চলছে তথ্য নিয়ে খেলা

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১২
তথ্যকে শক্তি মেনে চলছে তথ্য নিয়ে খেলা

১ জুলাই ছিলো বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। দিনটিতে পাঠকের শুভেচ্ছা ও ভালোলাগার অনুভ‍ূতির প্রকাশের পর হওয়া উপলব্ধি থেকেই এই লেখার অবতারণা।

বাংলানিউজ পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্ষপূর্তিতে কোনো আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচি নেয়নি। ফলে ছিলো না কোনো আয়োজন। এই কর্মসূচি না নেওয়ার একটা দারুণ গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন দিয়েছেন। সেটি লেখার পরের অংশে জানাবো।

আয়োজনহীন বর্ষপূর্তির দিনে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছাবার্তা এবং কয়েকজনের লেখা হাতে আসার পর তা প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয় বাংলানিউজ।

এরপরই আসতে থাকে শুভেচ্ছা-বার্তা এবং লেখার পর লেখা। সেসবের বেশিরভাগই প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকরা জানিয়েছেন তারা বাংলানিউজকে তাদের মিডিয়া হিসেবে নিয়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলানিউজকে ভালোবাসেন, দ্রুত সংবাদ দিয়ে, সঠিক সংবাদ দিয়ে এবং সাহসী ভূমিকা নিয়ে বাংলানিউজ তাদের মন জয় করেছে। পাঠকদের এই অভিমত বাংলানিউজের কর্মীদের আনন্দিত করেছে। সাহস যুগিয়েছে সঠিক পথে চলার। তেমনিভাবে দায়িত্ববোধকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে: পারবো তো আমরা পাঠকের এই প্রত্যাশা পূরণ করে দীর্ঘ পথ চলতে? একটি সংবাদ মাধ্যম পরিচালনায় কিছু বাধা সবসময়ই থাকে। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে সে বাধা আরও প্রকট। সেনিয়েও আজ পাঠককে কিছু কথা জানাতে চাই। তবে তার আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে আরও কিছু কথা।

বাংলানিউজ এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেনি। এনিয়ে অনেকটা মন খারাপ করেই কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তিনি যা বললেন তা সাংবাদিকতা চর্চাকারীদের জন্য অবশ্যই একটি শিক্ষা। আলমগীর হোসেন, যিনি এসময়ের সাংবাদিকতা চর্চাকারীদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রবর্তী চিন্তার মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার জনক বলেই যাকে উল্লেখ করা হয়, তিনি আবারও প্রমাণ করলেন চিন্তা চেতনায় তিনিই এগিয়ে।

বললেন, বিশ্বের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে না। এ ক্ষেত্রে বিবিসি, সিএনএনসহ বিশ্বময় জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমগুলোর উদাহরণ টানলেন তিনি। বললেন,``চিন্তা ও কাজে আধুনিকতা না আনতে পারলে আধুনিক সময়ের মিডিয়া পরিচালনা করা কঠিন হবে। `` জানতে চাইলেন, বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠা কত তারিখে হয়েছে তা কারো জানা আছে কি না। আমরা জবাব দিতে পারিনি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বাংলাদেশে এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে আলমগীর হোসেন আরও বললেন, ``এটি এক শ্রেণীর এনজিওধর্মী সংবাদ মাধ্যমের সৃষ্টি এই বর্ষপূর্তি উদযাপন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বিজ্ঞাপনদাতাদের শুভেচ্ছাবার্তার নামে কিছু অর্থ উপার্জনের পথ ছাড়া আর কিছুই নয়। ``

তবে জন্মদিন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানানো তো থেমে থাকে না। তারা ফোন করে, ই-মেইল পাঠিয়ে, মোবাইল ফোনে টেক্সট পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনেকেই আবার সশরীরে হাজির হয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের সবার প্রতি বাংলানিউজের কৃতজ্ঞতা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলানিউজের কয়েকজন পুরোনো কর্মী ছুটে এসেছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে। পেশার ধরনের কারণেই এরা সকলে এখন অন্য সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন কিন্তু বাংলানিউজ তাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান তার প্রমাণ দিয়েছেন সালাম ফারুক, রিয়াজ রায়হান, মুরসালিন হক, হাসান জামিল শিশির, শরিফুল ইসলাম, পবন আহমেদ, হাসান আজাদসহ আরও অনেকে। শরিফুল কেবল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটির জন্য ঢাকা এসেছেন গোপালগঞ্জ থেকে। এটাই প্রমাণ করে বাংলানিউজ তার প্রতিটি কর্মীকে কিভাবে আপন করে নেয়। অসাধারণ এক যোগ্যতায় কর্মীদের আপন করে নেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। বাংলানিউজে না থাকলেও তারা প্রতিষ্ঠানটির আপন হয়ে থাকেন।  

পাঠককে জানিয়ে রাখি, এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন না করে সেই অর্থে সারা দেশে দশটি স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলানিউজ। আলমগীর হোসেনের মতে, অর্থ খরচ করে কিছু মানুষকে ডেকে এনে শুভেচ্ছা জানাতে বাধ্য করার চেয়ে সে অর্থে কম্পিউটার নেই বা কেনার সামর্থ নেই এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ বলে গণ্য হতে পারে। কেউ যদি শুভেচ্ছা জানাতে চান তাহলে তারা এমনিতেই জানাবেন।

আলমগীর হোসেনের এই কথা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়াই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার জোয়ারে ভেসেছে বাংলানিউজ।  

পাঠকের প্রসঙ্গে ফিরি। বিশাল একটি পাঠকশ্রেণী দেশে ও দেশের বাইরে থেকে ‘সংবাদ বিনোদন সারাক্ষণ’ এই স্লোগানের বাংলানিউজের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকেন। তারা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। ভালো একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তার প্রশংসা যেমন পাওয়া যায়, অপেক্ষাকৃত দুর্বল রিপোর্টের জন্য কথা শুনতে হয়, রিপোর্ট প্রকাশে সামান্য দেরিও পাঠক সহ্য করেন না। এ কারণে বাংলানিউজ তার পাঠকের আরও কাছে পৌঁছাতে ২৪ ঘণ্টা তৎপর থাকে।

অনলাইন এমন একটি সংবাদমাধ্যম যেখানে পাঠকের অপশান অনেক বেশি। একজন পাঠক চাইলেই দ্রুত সরে যেতে পারেন সাইট থেকে। আমরা জানি, একজন পাঠকের জন্য সরে পড়া একটি ক্লিকের ব্যাপারমাত্র। আর এ কারণেই অনলাইনে দায়িত্ব অনেক বেশি। বাংলানিউজ ক্রমেই যে যোগ্যতা অর্জন করছে। বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট দিয়ে বাংলানিউজ চেষ্টা করছে পাঠক ধরে রাখতে। অ্যালেক্সা রেটিং দেখলে দেখা যাবে টাইম অন সাইট-এ বাংলানিউজ দেশের সব সংবাদ মাধ্যমকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। যারা বাংলানিউজের নিয়মিত পাঠক তারাই আমাদের শক্তি, তাদের জন্যই আমাদের সংবাদচর্চা।

বলেছিলাম অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার ভিতরের কিছু কথা বলবো। রোববার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলানিউজে যারা লেখা পাঠিয়েছেন তাদের অনেকের কথায়ই দায়িত্ববোধের চর্চার বিষয়টি এসেছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের পাঠক সবচেয়ে অগ্রসর পাঠক। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তারা নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। তাদের বোধ ও বিশ্বাস অন্য সনাতনি মিডিয়ার (সংবাদপত্র, টেলিভিশন) পাঠক দর্শকের চেয়ে উন্নত। এই পাঠকের জন্য অনলাইনেও চাই এমন কনটেন্ট যা তাকে আকৃষ্ট করবে। সাংবাদিকতায় ‘অভিনবত্ব’কে সংবাদের অন্যতম উপাদান হিসেবে দেখানো হয়। পাঠককে নতুন কিছু না দিতে পারলে পাঠক তা দ্রুত ছুঁড়ে ফেলে দেবে, নয়তো ছুঁয়েও দেখবে না। বাংলানিউজ চেষ্টা করে তার কনন্টেন্টে অভিনবত্ব নিশ্চিত করতে।

অনলাইনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার জন্য একটি বড় থ্রেট স্যোশাল মিডিয়াগুলো। এইসব মিডিয়া একটি বিশাল ইউজার বেজ তৈরি করে ফেলেছে। এরা সবাই আন্তর্জালে বিচরণকারী। তাদের মধ্যেও গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফলে একজন কিছু জেনে গেলে তা নেটওয়ার্কের কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ক্ষণিকের ব্যাপার মাত্র। তথ্যকে শক্তি মেনে এরাও তথ্য নিয়েই মেতে আছেন। ফলে কোনো খবর যখন মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার কাছে আসে ততক্ষণে তা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীদের কাছেও পৌঁছে যায়। তাদের মাধ্যমে জালের মতো বিস্তৃত হতে থাকে একের পর এক জনের কাছে। এখানে থ্রেটটি হচ্ছে সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে মেইনস্ট্রিম অনলাইন মাধ্যম যখন সেই খবরটি পরিপূর্ণ সংবাদ আকারে প্রকাশ করে ততক্ষণে সেটি নেটে বিচরণকারীদের কাছে বাসি খবর। তারা এতে আগ্রহ পান না।   স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরাই আবার বাংলানিউজের মতো অনলাইনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার পাঠক। ফলে বলা যায় পাঠক নিজেই এই মিডিয়ার জন্য একটি থ্রেট। আর অনলাইনের প্রতিযোগী কোনো সনাতনী মিডিয়া তো নয়ই, অন্য অনলাইন মিডিয়াও খুব বেশি একটা নয়। অনলাইনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ এর মতো সামাজিক মিডিয়াগুলো।

এই মিডিয়াগুলোরও পাঠক ও ব্যবহারকারী দুইই আছে। তারাই আবার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার প্রধান পাঠকগোষ্ঠী। ফলে তাদের উপযোগী কনটেন্ট সরবরাহ করতেই হবে।

ব্রেকিং নিউজে বাংলানিউজ এগিয়ে, বাংলানিউজই সবচেয়ে আগে খবর দেয় এমন প্রশংসা খুব শোনা যায়। বাংলানিউজের কেন্দ্রীয় অফিসে প্রায় দেড়শ’ সদস্যের কর্মীবাহিনী ও সারা দেশের জেলাগুলোতে ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাগুলোতে নিয়োজিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাঠকের এই প্রশংসা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশা করি, পাঠকের এই আস্থা অব্যাহত রাখতে বাংলানিউজ সচেষ্ট থাকবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাঠকের ভালোবাসা প্রকাশের পর বাংলানিউজের কর্মীরা তাদের সন্তুষ্ট রাখতে আরও সচেষ্ট থাকবেন এটাই আমাদের  অঙ্গীকার।

বাংলাদেশ সময় ১২১৪ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১২
এমএমকে- [email protected]; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।