ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বামীর চাকুরিচ্যুতির আশংকায় এক গৃহিণীর খোলা চিঠি

ইশরাত জাহান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১২
স্বামীর চাকুরিচ্যুতির আশংকায় এক গৃহিণীর খোলা চিঠি

আমি জিপিতে এই মুহূর্ত পর্যন্ত কর্মরত একজন কর্মকর্তার সহধর্মিণী। আমার কথাগুলো বলার আগেই আমি জিপির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই;  এ কারণে যে, আজ সোসাইটিতে আমি/ আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তাতে জিপির অবদান অনস্বীকার্য।

কিন্তু আজ সেই জিপি কি আচরণ করছে আমাদের সঙ্গে!

আজ জিপির কারণে আমরা কয়েকশ’ পরিবার গত কয়েক মাস যে কি পরিমাণ ‘সাফার’ করছি এটাতো শুধু আমরাই জানি। আজ ৬,৭ বা ১৩, ১৪ বছর কাজ করে কত কিছু ‘স্যাক্রিফাইস’ করে এতো এতো ‘রেভেন্যু’ এনে যারা জিপির জন্য এত বড় একটা অফিস বানিয়ে দিলো, যাদের ঘামে আজ জিপির এই অবস্থান, আজ তাদের জন্য নাকি ওই অফিসে কোনো জায়গা নেই। একটা লিখিত পরীক্ষা বা মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই বলে দিলো: ‘তোমার চাকরি নাই। ’ মগের মুল্লুক আর কি !

আজ জিপির যারা বড় বড় কথা বলছে, যারা উন্নতি করার কথা বলছে তাদের ক’জন জিপির ‘টাফ টাইম’ দেখেছে? বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে বা অন্য কোম্পানি থেকে  উড়ে এসে জুড়ে বসে, বড় পজিশন নিয়ে এখন কোম্পানির ‘বস’ হয়ে গেছেন ওনারা..... জিপিতে ওনাদের কার কত বয়স তা আমরা একটু জানতে চাই।

আমার ফ্যামিলির ছোটো একটা ঘটনা বলি। আমার ৯ বছরের ছেলে, আজ পর্যন্ত ক্লাসে কোনো দিন ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি। কিন্তু সর্বশেষ পরীক্ষায় সে ষষ্ঠ হয়।

আমি যখন বললাম “বাবা, এটা কি করেছ তুমি?’’ ওর জবাব ছিলো, ‘‘মা, আমি পাপার চিন্তায় পড়তে পারছিলাম না। যদি পাপার চাকরি না থাকে আমাদের কি হবে? পাপার কি অন্য কোথাও চাকরি হবে, আমরা সবাইকে কি বলবো? পাপা সারারাত ঘুমায় না; আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি, তাই তো এবার আমি মন দিয়ে পরীক্ষাটা দিতে পারলাম না........... সরি মা, দেখো, আমি বড়ো হয়ে জিপিটা উড়িয়ে দেবো। ’’

‘‘ওরা কেন বিজ্ঞাপন দেয় ‘কাছে থাকুন গ্রামীণফোন’? ওরা তো শুধু সবাইকে কষ্ট দেয়, তাহলে ওদের কাছে থাকবার কি দরকার?’’

আমি কি বলবো?........... আমি কি ওকে রেজাল্ট খারাপ করার জন্য বকা দেবো? না কি ওকে সান্ত্বনা দেবো....... এর জবাব কি গ্রামীণ ফোন আমাকে দেবে?

আমি এমন কিছু বাবা-মার কথা জানি যারা আজ অসুস্থ হয়ে গেছেন এটা ভেবে যে, তাদের ছেলেমেয়েদের দোষ কোথায়? হয়তো পরিবারগুলো ওই `ছেলেটা` বা `মেয়েটা`র ওপরই নির্ভরশীল।

না, আমরা দুর্বল হয়ে যাইনি, একদম না!  বরং আমরা প্রতিদিন শক্ত হচ্ছি পরিস্থিতি মোকাবেলা করবার জন্য। আমি শুধু ওই বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বলবো, যারা জিপির ‘জ’ হওয়াটাও দেখেনি অথচ আজ তারাই  বিদেশি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে জিপিতে অঘটন ঘটনা ঘটিয়ে দেশে-বিদেশে জিপির ইমেজ নষ্ট করতে ব্যস্ত আছেন।

তাদের বলি, ``উপরে একজন বসে সব দেখছেন, এই পরিস্থিতিতে দু’দিন বাদে যে আপনারাই পড়বেন না তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই বাংলাদেশি কর্মীদের কাতারে আসুন, তাদের ভালোর জন্য কিছু করুন। ’’

আমি একবার ভেবেছিলাম আমাদের সম্মানিত প্রধানমন্ত্রীকে একটা চিঠি লিখি। উনিতো ওনার ‘ই- মেইল অ্যাড্রেস’ দিয়েছেন ওনাকে লেখার জন্য, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। কিন্তু ওনাকে লেখা হয়ে ওঠেনি। তার মানে এই না যে, আমি উনাকে কিছু জানাবো না। জানাবো কারণ আমার সাহস আছে ওনাকে সরাসরি ফোন করে কথা বলার। কারণ ওনার ইশতেহার হচ্ছে মানুষকে চাকরি দেওয়ার, চাকরি কেড়ে নেওয়ার নয়।

শেষে আমি ধন্যবাদ জানাই সেই ভাইবোনদের যারা সাহস করে ‘এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’ করবার কথা ভেবেছেন এবং দাঁড় করিয়েছেন। যারা যত ষড়যন্ত্রই করুক, আমরা পরিবারের সবাই ওনাদের সঙ্গে আছি। এমনকি প্রয়োজনে আমরা গ্রামীণফোন ‘এমপ্লয়িদের ফ্যামিলি অ্যাসোসিয়েশন’ও করে ফেলতে পারি।
সবাইকে আল্লাহ ভালো রাখুন। আর ধন্যবাদ বাংলানিউজকে আমার এই কথাগুলোকে বলতে দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ সময়:১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।