যারা উচ্চ আসনে থাকেন তাদের কথা আমরা আমজনতা খুব মন দিযে শুনি। উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।
এটি শুধু এখন নয়। রমজানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওযায় এক ডাকসাইটে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন “পেঁয়াজ না খেলে কি হয়”। একজন বাণিজ্যমন্ত্রীর ছবক ছিলো- “কম খান, কম খেলে সুস্থ্য থাকা যায়। ” যুগ যুগ ধরে শাসকরা সাধারনের সাথে এমনটা করছে।
সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতায়তো বটেই, মানুষ এখন শাসকদের কথায়ও অতিষ্ঠ। উন্নয়ন মানেতো শুধু বারবার ভাল ধানের ফলন নয়। মানুষ কতটা তার জীবন মান বাড়াতে পারল? কতটা কর্মসংস্থান হলো? মানুষ কতটা নিরাপদ বোধ করে সমাজে চলাফেরা করতে পারলো? সেগুলো অনেক বড় মাপকাঠি।
হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এদেশের একটি সন্তান, তা সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, একা একা আসতে পারে। কিন্তু ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর সে আর বিমান বন্দর থেকে একা বাইরে বের হতে সাহস করেনা। আমাদের শাসকরা বদলে যায়, কিন্তু বদলায়না এই শঙ্কা। দলগুলো যত বেশি ভোট পাচ্ছে, দিন দিন এই নিরপত্তাহীনতা ততই বাড়ছে।
অর্থনীতি কেমন চলছে তা এক জটিল বিতর্ক। কিন্তু এটুকু সবাই বুঝেন যে বাংলাদেশে এখন আর বিদেশি বিনিয়োগ আসেনা। দেশি বিনিয়োগও প্রায় বন্ধ। কারণ অনেক্। ব্যাংকের সূদের হার এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তা দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানই লাভের মুখ দেখবেনা। নেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচোরা। এতো সমস্যার পরও যদি কেউ বিনিয়োগ করেন তবে তার জন্য অপেক্ষা করে সরকারি বিভিন্ন পরিদপ্তরের নানা হয়রানি, আর চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম। শাসক বদলায়, এই সংস্কৃতি বদলায়না।
অনেক আশা মানুষের্। তাই ঘুরে ফিরে দুটি বড় দলকেই বারবার অদল বদল পরীক্ষা করে। কিন্তু কিছু পায়না। এবার একটু বেশিই দিয়েছিলো। কিন্তু গত তিন বছরের বেশি সময়ে মানুষ কি দেখলো। ক্ষমতাশীনরা যে বার্তা প্রায় প্রতিদিন মানুষকে দিচ্ছেন, তা কোনভাবেই আশাপ্রদ নয়। মানুষের এখন আর বুঝতে বাকি নেই যে এরা সর্বস্তরেই অযোগ্য। সাধারণ কর্মী হতে মন্ত্রী, মানুষ এখন কাউকেই বিশ্বাস করতে চায়না।
অনেক কথায় ঢাকতে চাইলেও অন্ততঃ পদ্মাসেতু নিয়ে যা হয়েছে, তাতে মানুষের মনে ধারনা তৈরি হয়েছে আগের সরকারে যেমন ছিলো, এই সরকারেও দূর্ণীতিবাজ তেমনই আছে।
সর্বস্তরে এই যে অবিশ্বাস, তার একটি বড় কারণ মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা। দেশের আইনশৃংখলা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়াসহ নানা উপলক্ষে পুলিশের অকর্মন্যতা মানুষকে আর সুশাসনের আশ্বাস দেয়না। এর বাইরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ কলেজগুলোতে সরকার দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড এই দেশকেই এক গভীর সংকটে ফেলেছে। তাদের কর্মকাণ্ড এমনই যে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীকেও চোখের জল ফেলতে হয়।
গত প্রায় দুই দশকে দলবাজির যে সংস্কৃতি দেশের অভিজ্ঞান হয়ে উঠেছে তার থেকে পরিত্রাণের কি উপায় তা কেউ জানেনা। ক্ষমতার মসনদে দলের রঙ বদলায়। কিন্তু মানুষের জীবন-মান বদলায়না। তা আরো নিচের দিকে চলে যায়।
যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে, যে ব্যাক্তিগত ও দলগত অসহিষ্ণুতার অনুশীলন হচ্ছে, তা দেখে ভয় লাগে, আমাদের সন্তানেরা কি শিক্ষা পাচ্ছে? কথায় কথায় শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজের মতের সাথে না মিললে, অতি সন্মানীয় ব্যক্তিকেও যেনতেনভাবে অপমান করা, চরিত্র হনন করা অতি সাধারন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এমন অসহিষ্ণুতার বাতাবরণে দেশের উন্নতি হয়না। এটা হলো ক্ষুদ্রের সাধনা। তা দিয়ে কি বড় কিছু হয়?
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বার্তা পরিচালক, একাত্তর টেলিভিশন- [email protected]
এমএমকে[email protected]