ইটিভির রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনকে অসংখ্য ধন্যবাদ, বাংলাদেশের পুলিশ ও পরিবহণ খাতে চলমান দুর্নীতির ওপর একটি অসাধারণ রিপোর্ট করায়।
আমি অনুষ্ঠানটি দেখলাম, সত্যিই প্রশংসনীয় একটি কাজ।
ওই রিপোর্টের ট্রাকচালকদের মত একই মানসিক অবস্থা থেকে আমার গল্পও শুরু হয়েছে, এক অর্থে ওই ট্রাক চালক আর আমি আসলে সমাজের একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি।
সুখের সন্ধানে ইউরোপের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে পড়ি দশ বছর আগে। এরপর শুধুই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ইতিহাস। অল্প অল্প সফলতাও আসে। বিয়ে করলাম, বাচ্চা কাচ্চার পিতাও হলাম। কিছুদিন পর পরিবার থেকে দেশে চলে আসার অনুরোধ এক পর্যায়ে প্রচণ্ড চাপে রূপ নেয়। শেষতক পাকাপাকি ভাবেই আমার সোনার বাংলায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেই। দেশে এসে কোনো ছোটখাটো ব্যবসা শুরুরও পরিকল্পনা করলাম।
এসব ভেবে প্রায় সাড়ে তিনবছর আগে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দেই। দেড় বছরের মধ্যেই ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করি নিজের কষ্টার্জিত সঞ্চয় থেকে। ফ্ল্যাট বুকিংয়ের পরপরই মূলত চূড়ান্তভাবে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই।
ভেবেছিলাম দেশে এসে নিজের ফ্ল্যাটে উঠবো আর নিজের জমানো টাকার যেটুকু অবশিষ্ট আছে তা দিয়েই একটা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করবো।
তবে আমার সুখস্বপ্ন প্রথমেই হোঁচট খেলো যখন বুকিংয়ের দু’বছর পার হওয়ার পরও ডেভেলপার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে নানা ধরণের টালবাহানা শুরু করে।
বিদেশ থেকে মেইলের পর মেইল আর ফোন করেও তাদের কোনো তরফে কোনো সাড়া না পেয়ে অবশেষে আমি নিজেই উদ্যোগী হয়ে অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই আমার ফ্ল্যাটটি বুঝে নেই। বুকিংয়ের পর থেকে এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় তিন বছর। তখনও বাকি ছিলো প্রায় এক তৃতীয়াংশ কাজ।
এরপর দেশে ফিরে আমি আমার স্বপ্নের ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোটখাটো একটা ব্যবসাও আরম্ভ করি। পাশাপাশি নিজের শেষ সম্বলটুকু খাটাই শেয়ার বাজারে।
তবে ছয় মাস পার হতে না হতেই টের পেলাম চারপাশের পরিস্থিতি বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। শেয়ার বাজারে খাটানো আমার পুঁজি নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে। দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে আমার সাপ্লাই ব্যবসাও কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর ওপর মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি চার্জ বাবদ প্রতি মাসেই আমাকে শোধ করতে হচ্ছে সাত-আট হাজার টাকা।
আমার অ্যাপার্টমেন্টের অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকদের সঙ্গেও আমার দুর্ভোগ নিয়ে আলোচনা করেছি। সবার অভিজ্ঞতাই কমবেশি একই রকম। ডেভেলপারের কারণে কম বেশি সবাই একইভাবে ভুক্তভোগী।
আমরা আমাদের ফ্ল্যাটের ডেভেলপারের (মিরপুরের পল্লবী এলাকার ম্যাস ডেভেলপার অ্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেড) সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করি। আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন ঘোরানোর পর তারা ফ্ল্যাট বাবদ আর কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। ফ্ল্যাটের বাকি কাজ আমাদের নিজের টাকায় করতে হবে বলে জানায়। এ মুহূর্তে আমি এবং আমার মত আরও বেশ কয়েকজনের পক্ষে তা করা প্রায় অসম্ভব।
এরপর আমরা একই ডেভেলপারের অন্যান্য প্রজেক্টগুলোতেও খোঁজ নেই। সেখানেও একই চিত্র পাওয়া গেলো।
সবখানেই ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের সঙ্গে বুকিংয়ের সময় করা লিখিত চুক্তির বরখেলাপ করেছে তারা। অন্যদিকে আবার ডেভেলপারের পোষা সন্ত্রাসী চক্রও এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করতে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে আমাদের।
নিজের সামাজিক মর্যাদা হারিয়ে এখন আমি উল্টো হুমকি আর ভীতির শিকার। এ ধরনের ভূয়া ডেভেলপারের কারণে সত্যিকারের ডেভেলপারদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
সবকিছু বিবেচনা করে তাই আমি আবারও দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশের বাইরে যাওয়ার মত টাকাও আমার হাতে নেই। পাশাপাশি টাকার অভাবে অর্ধসমাপ্ত ফ্ল্যাটের কাজও শেষ করতে পারছি না। তাই অবশেষে নিজের স্বপ্নের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই আমি। কিন্তু অসম্পূর্ণ ফ্লাটটি কেনার মত ক্রেতাও এ মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছি না।
অনেক সময়ই আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, সারাজীবন সততা অবলম্বন করে চলার এটাই কি পুরস্কার?
আমার ফ্ল্যাটটি বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায়। এতে রয়েছে দুই বেডরুম, দুই বাথরুম ও দুই বারান্দা। মিরপুর ১১ তে অবস্থিত ফ্ল্যাটটির বিক্রয় মূল্য ৪০ লাখ টাকা। যদি আপনি আগ্রহী হন তবে আমার ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
পরিশেষে বলতে চাই শেয়ার বাজারে সর্বস্ব হারিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তে আত্মহত্যা করেন আমার মত এক ভুক্তভোগী কাজি লিয়াকত আলী। কিন্তু আমি সে পথে যেতে চাই না। আমার অসাধারণ সুন্দর পরিবার আর আমার সম্মানিত অভিভাবকদের সুখের জন্য আবারও দেশ ছেড়ে প্রবাসের পথে বেরিয়ে পড়তে চাই আমি।
বিনীত
একজন ভুক্তভোগী
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ০৮ আগস্ট, ২০১২
সম্পাদনা : রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর