ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আবারও সম্মুখ আলোচনায় ব্যারিস্টার মইনুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১২
আবারও সম্মুখ আলোচনায় ব্যারিস্টার মইনুল

ঢাকা: দীর্ঘদিন পর আবারও সম্মুখ আলোচনায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। বিগত ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কিছুদিন আইন ও তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করার পর অনেকটা অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন তিনি।



ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকাকালে যে কয়জন উপদেষ্টা আলোচিত-সমালোচিত তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মইনুল অন্যতম। সারাদিন সমন্বয়হীন গরম গরম বক্তৃতা দেওয়ায় তার তেমন জুড়ি ছিল না। মিডিয়াগুলোও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রম নিয়ে তার বক্তৃব্য শোনার জন্য থাকতো সদা প্রস্তুত। বলা চলে তত্ত্বাবধায়কের মুখপাত্র ছিলেন তিনি। খুব কম দিনই ছিল, যে দিন ব্যারিস্টার মইনুল ছাড়া মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হতো। তবে শেষ পর্যন্তিউপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন নি তিনি।

ফখরুদ্দিন-মউনুদ্দিন সরকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে প্রধান দুই দলের নেত্রী গ্রেফতারসহ অনেক নাটকীয়তার অবসানের পর ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর উপদেষ্টারা আলোচনার বাইরে চলে যান।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যারিস্টার মইনুলের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়। সে সময় তিনি একটু আলোচনায় আসেন। ‘গণতন্ত্রের সাফল্য চাহিয়াছি’, সাধু ভাষায় রচিত এই বইয়ের প্রচ্ছদে অনেকবার লেখা আছে, ‘ওয়ান-ইলেভেন’। তাই ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে লেখা বইটির ব্যাপারে পাঠকদের প্রত্যাশা ও কৌতূহল ছিল।

ব্যারিস্টার মইনুল বইটির ভূমিকায় লেখেন, ‘পাঠকদের উদ্দেশে আমি প্রথমেই অত্যন্ত বিনীতভাবে বলিয়া রাখিতে চাই যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালনসংক্রান্ত আমার ব্যাখ্যা পড়িয়া কাহারও যদি এমন মনে হয় যে সবকিছুর কৃতিত্ব আমি একা লইতে চাহিতেছি তাহা হইলে আমার জন্য উহা চরম লজ্জা ও অনুতাপের ব্যাপার হইবে। ’ হয়েছেও তাই।

বইটিতে প্রারম্ভিক কিছু স্মৃতিচারণা করেছেন, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি প্রথমে যে ৩১ জন বুদ্ধিজীবী দিয়েছিলেন (লেখক নিজেও তাঁদের একজন) সে বিষয়ে তথ্য আছে। ইতিহাসের বিচারে এই তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশেষ একটি দল প্রায়ই দাবি করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল ধারণাটি তাদের মস্তিষ্ক থেকে জাগ্রত।

ওয়ান-ইলেভেন খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কিভাবে জড়িয়ে পড়লেন, সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা না করলেও তবে কোন এজেন্ডায়, কার সঙ্গে কথা হওয়ার পরে তিনি এ রকম একটি দায়িত্ব নিতে সম্মত হলেন, সে বিষয়ে পরিষ্কার করেন নি। তবে কিছু এনজিও’র কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কোন কোন এনজিও তাহাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী আমাদেরকে সাহায্য করিতে উৎসাহ দেখাইয়াছে। অনেক ক্ষেত্রে এমনও মনে হইয়াছে, তাহারা তাহাদের নিজস্ব কর্মসূচির বাস্তবায়ন চাহিয়াছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আমাদের দায়িত্বের পরিসীমা বুঝিতে চেষ্টা করে নাই। ’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ এক শ্রেণির এনজিওর অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব। ’ রাজনীতিতে এনজিওদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ অনেকদিন ধরেই আলোচিত হলেও তিনি সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি। বললে হয়তো দেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতি উপকৃত হতো।

গোটা বইয়ে মইনুল তাঁর সঙ্গে ইত্তেফাকের সম্পৃক্ততা এবং মানিক মিয়ার সন্তান হিসেবে সংবাদপত্রের প্রতি তাঁর পক্ষপাতের কথা বেশ কয়েক জায়গায় উল্লেখ থাকলেও

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার বিষয়ে বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচার না করিয়া উস্কানিমূলক প্রচারণার জন্য ইটিভি এবং সিএসবি টেলিভিশন চ্যানেল দুইটি বন্ধ করারও কথা উঠিল। শেষ পর্যন্ত সিএসবি চ্যানেলটি বন্ধ না করিয়া পারা গেল না। ’

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠী এই একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করায় নিজের সম্পৃত্ততায় সমালোচিত হন তিনি।

বইটি প্রকাশের পর কিছু দিন আলোচনা থেকে বাদ পড়েন তিনি।

কিছু দিন আগে একটি পত্রিকায় সাক্ষাতকারে মইনুল হোসেন বলেন, আগামীতে সংসদ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পতন অনিবার্য।
এরই জবাবে তখন আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মইনুলকে জ্ঞানপাপী হিসেবে আখ্যা দেন।

আবারও হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘রাজনৈতিক সঙ্কট: উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি প্রধান দুই দলের সমালোচনা করে তৃতীয় ধারার কথা বলেন। যদিও এর আগে তৃতীয় ধারার একটি রাজনৈতিক শক্তির বিষয়ে তাকে সমালোচিত হতে হয়েছে।

গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছেন, একটা ব্যর্থ সরকারের পর আমরা আরেকটা ব্যর্থ সরকার পাচ্ছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ভয়াবহ সঙ্কটের দিকে যাচ্ছি। পারিবারিক এবং আমলাতান্ত্রিক রাজনীতির কারণেই এ সঙ্কট। এই রাজনীতিক অসহায়ত্বের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সত্যিকারের রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড প্রসেস এই বৈঠকের আয়োজন করে।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থানের মধ্যে কিছু দিন আগে দেশের রাজনীতির সর্বশেষ সংযোজনটি হয়েছে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামের একটি সংগঠন গড়ার ঘোষণা দিয়ে। ঈদের পর বৃহত্তর পরিসরে খালেদার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ দুই দলের বাইরে তৃতীয় ধারার রাজনীতির কথা বলে আরেকটি ১/১১’র ক্ষেত্র তৈরিতে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট: উত্তরণের পথ’ নিয়ে প্রকাশ্য হওয়া রহস্যটা ঘনীভূত হচ্ছে কিনা তা নিয়েও রহস্য দানা বেধে উঠেছে।

ইসমাইল হোসেন, সংবাদকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।