১৯৮২। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মালিকাধীন দৈনিক দেশ পদোন্নতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার বিক্রি করে দিলেন এক ব্যবসায়ী মন্ত্রী মাঈদুল ইসলামের কাছে।
ছোট একটা দৈনিকে ছাপার অযোগ্য বেতনে কাজ করি পেশায় নাম টিকিয়ে রাখার জন্যে। তবে মূল ভরসা কবি রফিক আজাদ আর কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন আর তাদের সাপ্তাহিক ‘রোববার’। তখন ‘রোববার পত্রিকা ‘আমাদের জেলা...’ শিরোনামে প্রচ্ছদ করতো।
রফিক ভাই ও মিলন ভাইয়ের অপার বদান্যতায় পেলাম, ‘আমাদের জেলা নোয়াখালী’ অ্যাসাইনমেন্ট। দেড় টাকা স্টার সিগ্রেট আর দু’টাকার স্টাফ তরকারির লাঞ্চের যুগে নয় হাজার টাকার ক্ষ্যাপ! সংগে আগাম সাড়ে তিন হাজার টাকা আর ইত্তেফাক সম্পাদকের ‘টু হুম ইট মে কনসার্ন’ চিঠি।
পাঠককে জানানো প্রয়োজন, সেই যুগে দৈনিক বাংলা ও সংবাদকে বহু পেছনে ফেলে ইত্তেফাকই ছিলো দেশের একমাত্র স্বীকৃত দৈনিক। আর একই ভবন থেকে প্রকাশ পেত `সাপ্তাহিক রোববার`।
যাহোক, সফরে সঙ্গী নিলাম বন্ধু ও দৈনিক দেশ’র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পাবার প্রত্যাশায় কাতর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা নোয়াখালীর মির্জা তারেককে। অজানা কারণে আমরা পরস্পরকে ‘আব্বু’ বলে ডাকি। স্বভাবে ও চলনে-বলনে একেবারে বিপরীত হলেও আমাদের পারস্পরিক সমঝোতাটা অসাধারণ।
তখন `দৈনিক দেশ’র নোয়াখালী সংবাদদাতা জুবায়ের। আর জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম খোদ দৈনিক দেশ’র মালিক মাঈদুল ইসলামের আপন ভগ্নিপতি। তিনি পরে ‘দৈনিক দেশ’ সম্পাদকও হয়েছিলেন। ইত্তেফাক ভাঙ্গিয়ে আমাদের থাকার ব্যবস্হা হলো সার্কিট হাউজে। এরই মধ্যে ঢাকার কয়েকটি দৈনিকের জেলা প্রতিনিধিরা এলেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও জেলা প্রতিনিধিদের হুমকি-ধমকি। রাতের এক হোটেলে ডিনার হলো ফ্রি। রুমে ফেরার সময় দু’প্যাকেট দামি সিগ্রেট পকেটস্হ হলো।
সকালে আরো অনেক জেলা প্রতিনিধি এলেন। সার্কিট হাউজের ফোন থেকে বিভিন্ন জায়গায় গেলো ‘হুমকি’। খোদ জেলা প্রশাসক বাধ্য হলেন একটা জিপ দিতে। আরো অনেক ঘটনার বিবরণে গেলাম না। তবে যখন ঢাকার বাসে বিনা ভাড়ায় উঠি, তখনো পকেটে তিন হাজার টাকার বেশি। মাঝখানে ১৯ দিন আর সবক`টি উপজেলা-থানা ঘোরা হয়ে গেছে। ঢাকার কাছাকাছি এসে মির্জা তারেক ঝাড়লেন জীবনের সেরা সংলাপ, “আব্বু, নূরী ভাইতো (সানাউল্লাহ নূরী) তোকে বেশ স্নেহ করেন, আমি স্টাফ রিপোর্টার হতে চাই না, আমাকে নোয়াখালী সংবাদদাতা বানিয়ে দিতে বল। ”
মধ্যিখানে মফস্বল সম্পাদক গল্পকার আবু সাঈদ জুবেরী ভাই’র বদলীতে মফস্বল সম্পাদকের ভূমিকায় ক’দিন অভিনয় করার ‘দুর্ভাগ্য’ হয়েছিলো। সেই ক’দিন এক প্যাকেট সিগ্রেটও কিনতে হয়নি। বিনা পয়সায় খেয়েছি সিলেটের কমলা, গফরগাঁয়ের বেগুন-মূলো। সেই ছিলো এক রাজসিক জীবন।
তবে কোনো মফস্বল সাংবাদিককে আহত ও বিব্রত করতে এই লেখা নয়। এখন অধিকাংশ মফস্বল সাংবাদিক মূল পত্রিকা থেকে সামান্য হলেও বেতন পান, যদিও প্রাপ্য সম্মানটুকু অনেকের কপালে এখনো জোটে না। এই লেখাটির দ্বিতীয় কিস্তিতে পাঠক জানতে পারবেন প্রবাসে পত্রিকা প্রকাশের নামে নিম্নমান আর রুচির কী কী ঘটে। আজকের লেখার শিরোনামটা প্রবাসী প্রিন্ট ও ওয়েবভিত্তিক মিডিয়ার সঙ্গে জড়িতদের খুব কাছ থেকে দেখা একটি সরেজমিন প্রতিবেদনের শিরোনামেরই অংশ।
পাদটীকা: দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশের আগে কোনো প্রতিক্রিয়া না পাঠনোর অনুরোধ রইল।
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]