কোনো প্রকার ভূমিকা বা ভান ভনিতা ছাড়াই লেখাটা শুরু করছি। বলছি, এটা অন্যায়! বাংলা ছবিতে নবাগত অভিনেতা আব্দুল জলিল অনন্তর সাথে কিছু মিডিয়ার অন্যায় আচরণে ফেসবুকে স্ট্যাটাস বাদ দিয়ে আজ এখানে লিখতে বাধ্য হলাম।
এ ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার ও বেদনার। অনন্তর নিজের জন্যতো বটেই, আমরা যারা অনলাইনে লিখি তাদের জন্যও বিব্রতকর। সত্যি বলতে কি আজ এ ঘটনায় কিছু সাংবাদিক ও কিছু অনলাইন একটিভিস্ট এর দায় এড়তে পারেন না। তারা অনন্তকে অপদস্থ করে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এনিয়ে মজা করেছেন। তাদের মজা ফেসবুক বা ব্লগে লুফে নেয়। সেটা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
গত কিছুদিন এফএম রেডিওতে সিমু নাসের ও আশিফ এন্তাজ রবির উপস্থাপনায় অনন্তকে নিয়ে মজা করা হয়। মজাটা নির্দোষ মনে হয়েছে। অনেকের মতো আমিও প্রোগ্রামটা শুনি। মজাও পাই। মজাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু না। সেটাকে লেবুর মতো কচলানো হলো। এরপর সেখানকার এক উপস্থাপকের ম্যাগজিনে সম্প্রতি আবার অনন্তর সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেখানেও তাকে হেয় করা (সহজ বাংলায় পচানোর) চেষ্টা থেকে যায়। বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিল অতি ব্যক্তিগত। যেমন- তিনি বিয়েতে হেলিকপ্টার কেন ব্যবহার করলেন, তিনি ঘানাকে ভালোবাসেন কিনা, এতো দেশ থাকতে ঘানার কথা কেন বললেন, তার ভক্তরা ইংলিশ মিডিয়ামের কিনা, ইউ পম ঘানা..ইত্যাদি।
অতি সম্প্রতি মুন্নী সাহা একটি টিভি অনুষ্ঠানে অনন্তকে নিয়ে আসেন। মুন্নী আপ্রাণ চেষ্টা চালান তাকে হেয় করতে। তাকে এমনও প্রশ্ন করা হয়, তিনি একজন শিল্পপতি, তার জীবনে হলমার্কের মতো কোনো ঘটনা আছে কিনা? আমি জানি না, এমন প্রশ্ন করা সাংবাদিকতার শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা! সাংবাদিকতা যে একটা ভদ্র পেশা, সেখানেও যে মানুষের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়, উত্তরদাতার ব্যক্তিত্বের উপর আঘাত যাতে না আসে বা তাকে যে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়, এই সামান্য জ্ঞানটুকু বোধহয় আমাদের লোপ পেয়েছে। সাংবাদিকতার ন্যূনতম এটিকেটটুকু হারাতে বসেছি আমরা। তা না হলে আব্দুল জলিল অনন্তকে অপদস্থ করার মানে কী? তবে কি আমাদের মিডিয়া এতোটা দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, তাকে অপমান করে অনুষ্ঠানের হিট বাড়াতে হবে? মুন্নী সাহার ব্যক্তিগত কাণ্ডজ্ঞান বা কমনসেন্স নিয়ে আমার প্রশ্ন আগেও ছিল; তিনি দেশের সর্বোচ্চ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রশ্ন করেছিলেন- আপনাকে তো লোকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ বলে। কেউ ইচ্ছে করলেই খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করতে পারেন না- ‘আপনাকে তো অলি আহমদ চোরের মা বলেন, এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন?’ এমন প্রশ্ন করা যাবে না। এমন প্রশ্ন করার জন্য সাহস থাকা লাগে না। ’ভদ্রতা জ্ঞানের অভাব’ লাগে। এখন আমাদের সেটাই বোধ করি বেশি।
আব্দুল জলিল অনন্ত সম্পর্কে যতটুকু ব্লগে পড়েছি- তিনি একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। শখের বশেই সিনেমায় এসেছেন। লাখ লাখ টাকা ঢালছেন এ খাতে। তার সিনেমার বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি সিনেমার প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের চেষ্টা করছেন। আমি তার একটি ছবি দেখেছি। তার ছবির প্রযুক্তিমান বাংলাদেশের অন্য যে কোনো ছবির চাইতে অনেক উপরের। কিছু দুর্বলতা আছে। আমার মনে হয়েছে সেটা অভিজ্ঞতার। আরো কিছু সিনেমা বানালে এসব প্রযুক্তিগত ক্রটি কেটে যাবে। শখের বশে অনন্তর সিনেমায় আসার একটি কারণ হলো নিজে নায়ক হওয়া। তিনি তার প্রতিটি ছবিতে নিজেই নায়ক বা হিরো। তার উচ্চারণগত কিছু বেশ কিছু দুর্বলতা আছে। চেষ্টা করলে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। অনেকে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন অভিনয় ছেড়ে প্রযোজনা করতে। আমার বিশ্বাস, তার শখ মিটে গেলে তিনি অভিনয় কমিয়ে দেবেন এবং প্রযোজনায় নামবেন। তবে তার অভিনয় খারাপ বলার কোনো কারণ নেই। কেননা বাংলাদেশে বর্তমানে যারা সুপারহিট হিরো তাদের অভিনয় আর অনন্তর অভিনয়ের মাঝে তেমন একটা তফাত আমি দেখিনি। সেই গলা ফাটানো ডায়ালগ, ন্যাকামো, কান্না, গোলাগুলি, নাচের নামে লাফালাফি অন্য ছবিতে যেমন আছে অনন্তর ছবিতেও আছে। অনন্ত বরং প্রাযুক্তিক মানে তাদের চাইতে এগিয়ে। একটা লোক স্রেফ শখের বশে নিজের অর্জিত কোটি টাকা ঢালছেন, সিনেমায় তিনি একটি জায়গায় উন্নতির চেষ্টা করছেন, না হয় আছে তার কিছু দুর্বলতা, এতে তার দোষ কী? কী তার অপরাধ আমি জানি না। ভালো না লাগলে আমরা তার সিনেমা দেখব না। তিনি তো আর রাষ্ট্রদ্রোহ করছেন না। তার ছবিতে অপসাংস্কৃতিক-অশোভন কিছু আছে বলে মনে হয় নি। তার অপরাধটা কী?
প্রথম দুটি সাক্ষাৎকার আমি শুনেছি ও পড়েছি। মুন্নীর সাক্ষাৎকারটি লিখিত রুপে ব্লগে দেখেছি। মি. অনন্ত তার নিজের মতো করে উত্তর দিয়েছেন। অনন্তর উত্তর শুনে তাকে যথেষ্ট ভদ্রলোক মনে হয়েছে। তিনি হয়তো সাংবাদিকদের চেষ্টাটা বুঝে না বোঝার ভান করেছেন। তার সাক্ষাৎকার পড়ে আপাতদৃষ্টিতে তাকে ভদ্রলোকই মনে হলো। ভদ্রলোক না হলে নিশ্চয়ই তিনি এসব ব্যক্তিগত আক্রমণে কষে আমাদের থাপ্পড় লাগিয়ে দিতেন। আমরা তার মতো ভদ্র হতে পারিনি। আমরা শুদ্ধ উচ্চারণের মানুষগুলো এই একটা জায়গায় তার কাছে হেরে গেছি। আমরা মানসিকভাবে খুবই দরিদ্র। উই পম গানা...।
মি. অনন্ত, আজ আপনার সাথে যা হলো তার জন্য অনেকে ক্ষমা চাচ্ছে। আমি জানি, আপনি হয়তো ক্ষমা করেও দেবেন। অনুরোধ, আমাদের মতো অভদ্রজনের কথা কানে নেবেন না। আমরা জানি, আপনি বাংলা সিনেমায় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন। আপনি আপনার মতো চেষ্টা করে যান। আশা করি সফল হবেন। অবশ্যই হবেন।
লেখক: ব্লগার ।
ইমেইল- [email protected]
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]