ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২, ০৪ মে ২০২৫, ০৬ জিলকদ ১৪৪৬

মুক্তমত

অভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের প্রাসঙ্গিকতা

এম জে এইচ মঞ্জু  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৮, মে ৪, ২০২৫
অভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের প্রাসঙ্গিকতা এম. জে এইচ মঞ্জু 

চব্বিশের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন প্রতিরোধের অন্যতম স্তম্ভ।

জুলাই আন্দোলনকে যখন প্রায় দমন করে শেষ করে ফেলেছিল তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার, ঠিক তখনই  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘ফাইটব্যাক’র নজির গড়েন, উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেই ঘুরে দাঁড়ানো অভ্যুত্থানের নতুন অধ্যায় শুরু করে।

অনেকে মনে করেন, ১৮ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত এই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন অগ্রসেনানী। ব্লকেডের দিনগুলোতে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রাজপথ দখলে নিয়ে তারা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে যে নয়া স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তা শতাব্দীর এক অন্যতম ইতিহাস। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মুখে বারংবার ব্যর্থ হয়েছে স্বৈরাচারের অন্যায় ষড়যন্ত্রের চক্র।  

১৯৯০ এর পরে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় যৌক্তিক যেকোনো বিষয়ে রাজপথে সংহতি জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিকট অতীতের ২০১৫ সালে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন অধিকারের সফল সংগ্রাম।  

২০২৪ এর ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে সরকারবিহীন একটা দেশে যখন বিভিন্ন নৈরাজ্য দেখা দিচ্ছিল সেটি প্রতিরোধে জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভূমিকা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিকের ভূমিকা, নজিরবিহীন বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে তারা অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন। জুলাইয়ের স্পিরিট বুকে নিয়ে যে কোনো যৌক্তিক ইস্যুতে সোচ্চার থাকা এবং সব ষড়যন্ত্র-শঙ্কা মোকাবিলা করে রাষ্ট্রের কল্যাণে এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাচ্ছেন হৃদয় উজাড় করে।  

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৯টি, এসব প্রতিষ্ঠানে আছে প্রায় তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকেই একটা সময় অনেকে রাজনৈতিকভাবে অসচেতন মনে করতেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থান সবার সেই ধারণা সমূলে বদলে দিয়েছে। ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে নিঃস্বার্থে রাস্তায় নেমে রক্ত দিয়ে প্রাণ দিয়ে তারা বুঝিয়েছেন, তারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন নন।  

এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত। ছাত্র সংসদ, তবে সেটা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীবান্ধব প্লাটফর্ম। যে প্লাটফর্ম সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং দেশ ও সমাজের জন্য ভূমিকা রাখতে তাদের দীক্ষা দেবে, প্রেরণা যোগাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিগত ৩০ বছর যাবত এই বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এমন একটা প্লাটফর্ম থাকা এখন কেবল প্রাসঙ্গিকই নয়, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক
আহ্বায়ক 
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।