সদ্য অবর্ণনীয় নৃশংসতায় নিহত বিশ্বজিৎকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। এর নিকটাত্মীয়সহ দেশ বিদেশে অবস্থিত বাংগালিরাতো বটেই, অনেক বিদেশির কাছে একটা প্রশ্ন বার বার ফিরে আসছে- আমরা মনে হয় কোন অলৌকিক অভিশাপের ফলে মধ্যযুগে ফিরে গেছি যখন এ ধরনের নিষ্ঠূর আচরণ হয়তো স্বাভাবিক মনে হত।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি, এবং প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের বেশির ভাগ টিভি চ্যানেল দেখার ও অনলাইনে খবর পড়ার সূযোগ পাই, তারা সংগত কারনেই এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে “আমার সোনার বাংলা”কে পরিচিত ও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করি। স্থানীয় চ্যানেলগুলো থেকে তাদের চোখ নিজ দেশের চ্যানেল বা অনলাইনে ফেরানো কষ্টকর তবু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তা পারি।
আমরা পূলকিত হই- গর্বে বুক ভরে ওঠে যখন দেখি, আমার ৩ বছরের নাতনী- জিনিয়া- যে তার জীবনের মাত্র আটদিন বাংলাদেশে থেকেছে, তার আধো আধো কথায় “বালাংলা দেশের কিকেট জাসি” পরে তার বাবার সাথে আমাদের “টাইগার” দের দাপটের সময় উল্লাসে ফেটে পড়ে, হেরে গেলে বাবার মন খারাপের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আশ্বস্ত করতে চায়, বলে “বাবানি বালাংলাদেশ” আবার ভাল খেলবে।
কিন্তু যখন সেই টিভিই দেখতে বসে, এ জাতীয় ঘটনা তাদের সামনে এসে যায়, দারুণভাবে তারা বিষ্মিত হয়, আহত হয়, প্রচণ্ড নাড়া দেয় তাদের- তীর্যক প্রশ্নের সম্নুখীন হই আমরা (যেন যারা দেশ চালাবার দায়িত্বে রয়েছেন আমরা সরাসরি তাদের প্রতিনিধিত্ব করি)। প্রশ্নের ধরন গুলো হল, এটা কি আসলেই ঘটেছে? যদি ঘটে থাকে, তবে তোমরা কি এখনো দাবি করবে যে ওই মুল্যবোধ বা সার্বিক সংস্কৃতিকে আমরা ধারন বা লালন করব? তোমরা কি এখন ও বলবে তোমাদের জীবন ধারার আলোকে আমাদের জীবন গড়তে? সবচে কঠিন হল যখন তারা সম্নুখীন হয় তাদের ভিনদেশি বন্ন্ধুদের, যখন ঘরে ফিরে এলে এদের মুখে অপমানের করুন ছাপ দেখি। তখন খুব মনে হয় দেশের কথা বলে সন্তানের কাছেই দারুণভাবে হেরে গেলাম।
বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হবে, আর তাতে আর কোন বিশ্বজিৎ হত্যার মতো দানবীয় চিত্র দেখা থেকে এই দুর্ভাগা জাতির মুক্তি হবে এ নিয়ে সন্দেহ প্রায় সবাই প্রকাশ্যেই করছেন। আমি এক প্রবাসী পিতা-পিতামহ, দারুনভাবে দেশকে বুকে ধারন করার সব চেষ্টা করছি এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে “সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি” সবসময়ে বলার অপরাধে আমারই বংশধরের কাছে মিথ্যুক বলে চিহ্নিত হচ্ছি, আমি চিৎকার করে সুকান্তকে ফিরে আসতে বলি, বলি- ওই নরাধমদের, তাদের লালনকর্তাদের এবং যে সমাজ ব্যবস্থা এই বিষাক্তদের জন্ম দিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে আবার প্রচণ্ড চিৎকারে চারদিক তোলপার করে বলুন “আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই, স্বজন হারানোর শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই”। আপনার সাথে সাথে আমরা আপনার এই সতর্ক বাণী কোটি কোটি সাধারন বাংগালির কন্ঠে প্রতিধ্বনিত করবো-- এই অংগীকার করছি।
লেখকঃ অষ্ট্রেলিয়ার আর এম আইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (RMIT University) শিক্ষকতা ও উন্য়নশীল বিশ্বের প্রবাসী রেমিট্যান্স বিষয়ক গবেষণায় নিয়োজিত।
ইমেইলঃ [email protected]
এমএমকে