প্রচলিত টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) তে আস্থা নেই। টিআরপি নির্ধারণের কাজ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
যে করেই হোক রেটিং পয়েন্টে ওপরের দিকে থাকা চলবে না। থাকলেই বিপদ। কারণ, রেটিং পয়েণ্টে ওপরের দিকে থাকা মানেই বেশি সংখ্যক দর্শক চ্যানেলটি দেখেছেন। বেশি সংখ্যক দর্শক দেখার প্রমাণ মিললেই সর্বনাশ।
যেটি ঘটেছে দেশের বহুল পাঠক পঠিত সংবাদপত্রগুলোর বরাতে। সেই অভিশাপ যে কোনো মুহূর্তে চেপে বসতে পারে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপরেও।
গত ৬ ডিসেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে পাঁচটি দৈনিক সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই পত্রিকাগুলোকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, অধিদফতর ও দফতরগুলোর গ্রাহক তালিকায় অন্তভুক্ত করা হয়েছে। ওই পাঁচটি সংবাদপত্র হলো- দৈনিক জনকণ্ঠ, সংবাদ, ইত্তেফাক, ডেইলি সান ও ইন্ডিপেনডেন্ট।
এ তালিকা দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া পাঠক ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিকল্প কিছু নেই। এমনকি যে পাঁচটি পত্রিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারাও হয়তো চমকে উঠেছেন তালিকায় তাদের নাম দেখে। কারণ, নিজেদের প্রচার সংখ্যা সম্পর্কে তারা নিজেরাও ওয়াকিবহাল। যেখান থেকে নির্দেশনা এসেছে বা যারা এ নির্দেশনা পালন করতে বলেছেন, তারাও যে ওয়াকিবহাল নন, আমি তা বলছি না। তারা ভালো করেই জানেন, প্রচার সংখ্যায় কোন পত্রিকাগুলো এগিয়ে, পাঠকের হাতে হাতে কোন পত্রিকা ঘুরে বেড়ায়। প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, সমকাল, যুগান্তর পত্রিকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজতো রয়েছেই। সেসব কাজের কারণেই তারা সরকারের বিরাগভাজন।
সরকার বা সরকার দলীয় সাহাবি, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনরা কি করছেন, সে খবরগুলো সোজা-সাপ্টা প্রকাশ করছে এ পত্রিকাগুলো। এ কাজটি তারা করছে সরকারে অন্যান্য জনমুখি কাজের খবর দেওয়ার পাশপাশি। সরকার নানা প্ররোচণায়, আত্মঅহমিকায়, তোষামদকারীদের উৎসাহে ভুল পথে চলতেই পারে।
সরকার বা দলের অনেক উঁচু আসনে যারা বসে থাকেন, তাদের নজরে, কানে সব খবর আসে না। গণমাধ্যম তাদের হয়ে কাজটি করে। কিন্তু সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলোর চোখে বরাবরই চালসে! তারা কোনোভাবেই নিজেদের সমালোচনার কথা শুনতে রাজি নন। রাজি নন দেখতেও।
গণমাধ্যম সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ নয়। দলীয় মুখপাত্রগুলো এর ব্যতিক্রম। বিজ্ঞাপন নির্ভরতার যুগে, পাঠক-দর্শকহীন গণমাধ্যম কল্পনা করা যায় না। তাই গণমাধ্যম মাত্রই চায়, যথাযথ খবরগুলো যতোটা সম্ভব পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে।
পাঠক-দর্শকরা যদি দেখেন, সরকার কোনো ভুলেই করছে না, ভালো কাজের নহর বইয়ে দিচ্ছে, কিন্তু গণমাধ্যমগুলো সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে, তাহলে সেই গণমাধ্যম পাঠক-দর্শকরাই বর্জন করবেন। সরকারকে কষ্ট করে উদ্যোগী হতে হবে না।
সরকারের এখন মেয়াদ শেষের দিকে। এই সময়ে সরকার অনেকটাই অগোছালো। জনগণের অনেক প্রতিশ্রুতি, প্রত্যাশা। দলীয় লোকজনের লোভ-প্রত্যাশার যোগান দিতে গিয়ে এটা হতেই পারে। অতীতের সরকারগুলোরও হয়েছে। সেই অগোছালো, বেসামাল দিকগুলো যেনো সামাল দিতে পারে, সেই গাইডের কাজটিই করছে বেশিরভাগ গণমাধ্যম। সেই কাজটি কেনো সরকারের পছন্দ হবে না? সরকার চাইছে, সরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা– কর্মচারীরা বালিতে মুখ গুঁজে থাকুক। তারা না জানুক তাদের নিজেদের এবং সরকারের ব্যর্থতার কথা। তারা না জানুক, বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত কারা? মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীদের প্রলাপ ও দুর্নীতি আড়াল করতেই এই মুর্খতার রেসিপি?
আরেকটি জানার বিষয় ছিল, যে পত্রিকাগুলো পড়তে বলা হয়েছে তাদেরকে সরকারের গুণগান গাইতে বলা হয়েছে অবিরত, না হলে অতি অল্প প্রচার সংখ্যার পত্রিকাগুলোকে সরকারি লিফলেটের মর্যাদা দেওয়া?
তাই প্রার্থণা অনলাইন পত্রিকা, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য, কোনোটির জন্যই যেনো সরকারের আশীর্বাদ নাজিল না হয়। আমিন!
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১,২০১২
এমএমকে- [email protected]