আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ সস্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস। এ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক সময় পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিলো।
আজ সে সন্ত্রাসী আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে একেবারে সাধু হয়ে যাবেন এমন ভাবার কোন কারণ নেই।
জানা গেছে, এ সন্ত্রাসী মুক্তি পাওয়ার পর থেকে সরকারি কোন বাহিনীর কাছেই তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে কোন তথ্য নেই।
তবে মহাজোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসকে আইনি প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবারও।
গত ১৯ ডিসেম্বর বুধবার রাজধানী ঢাকায় পুলিশের তিনবছর মেয়াদী স্ট্রাটেজিক প্ল্যান প্রকাশের পর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, বিকাশ গত ১৫ বছর বিভিন্ন মামলায় কারাগারে ছিলেন। ২০০৯ সালে সব মামলায় জামিন পেলেও কারাগার থেকে বের হননি তিনি। সর্বশেষ তেজগাঁও থানার এক মামলায় হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার হলে গত ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।
এর আগে বিকাশের মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিকাশের জেল থেকে বের হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। যদি আদালত জামিন দিয়ে দেন এবং তার বিরুদ্ধে ভিন্নতর কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে তাকে এক মিনিটও জেলে রাখার ক্ষমতা কারও নেই।
বিকাশের মুক্তি প্রসঙ্গে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের খোঁড়াযুক্তি প্রদর্শনের পর সবার মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে জামিন হওয়ার পর কেন বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মীকে জেল থেকে ছাড়া হয় না?
এছাড়া রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসের কারামুক্তি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনা আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে অনেকে মনে করেন।
বিস্ময়ের বিষয়, গত ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর তিনি কোথায় আছেন, সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কিছু বলতে পারছেন না। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হত্যাসহ ১২ মামলার আসামি বিকাশ কুমার বিশ্বাস কিভাবে জামিন পেলেন? তিনি একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ ধরনের সন্ত্রাসী কোনো মামলায় জামিন পেলে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা জেলা পুলিশকে অবহিত করা হয়। এটি এ কারণে করা হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারেন।
এর আগে ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই কাশিমপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেলেও গাজীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাকে ফের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কিন্তু এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করেছে অত্যন্ত গোপনীয়তায়। যে কারণে তার জামিনের বিষয়টি জেলা পুলিশকে জানানো হয়নি। এমনকি বিকাশ কুমার বিশ্বাস জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর যাতে গ্রেপ্তার না হন সে জন্য দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নজরদারি করতে পাঠানো হয়েছিল বলে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই ব্যক্তি অপরিচিত নন।
২০০১ সালে ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন জোট সরকার যে ২৩ জন শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীর তালিকা করেছিল, বিকাশ তাদেরই একজন। এমনকি কারাগারে বসেও তিনি চাঁদাবাজি করতেন বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে আগারগাঁওয়ে জোড়া খুনসহ আরও বেশ কয়েকটি খুনের মামলা রয়েছে।
এ অবস্থায় বিকাশ কুমার বিশ্বাস কিভাবে মুক্তি পেলেন?
সরকার হয়তো জামিনের দোহাই দেবে। এরইমধ্যে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এ জামিনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু তার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিংবা সরকারপক্ষের আইনজীবী কী ভূমিকা রেখেছেন, তা-ও জানা দরকার।
২০০৯ সালে যে হত্যা মামলায় বিকাশ গ্রেপ্তার হলেন, ২০১২ সালে সেই একই মামলায় জামিন পাওয়ার কি কারণ থাকতে পারে? আমরা যারা প্রবাসে আছি তারা পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।
কেননা, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এভাবে কারাগার থেকে বাইরে এলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরই শুধু অবনতি হবে না, জননিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ প্রথমে বাসাবো এলাকায় কর্মকাণ্ড চালালেও পরে মিরপুর-আগারগাঁও এলাকায় আস্তানা গাড়েন। আগারগাঁওয়ে জোড়া খুন, এলজিইডি ভবনে খুনসহ আরও কয়েকটি খুনের দায়ে সরাসরি বিকাশকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ছিল, তার ছয়টি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি ছয়টিতে জামিনে আছেন। ১৯৯৭ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ২০০৯ সালে জামিন পেলেও সরকার ফের তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে আমরা আবারও বলতে চাই, যে দেশে রাষ্ট্রপতি ভয়ংকর অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মাফ করে দেন সে দেশে এসব ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে অনেকে মনে করেন। তবে বিকাশের মতো আত্মস্বীকৃত সন্ত্রাসীকে কারামুক্তি দেওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না।
এর ফলে দেশে সন্ত্রাস আরও বেড়ে যাবে। বিশেষ করে সাধারণ পাঠকের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, নব্বই দশকের প্রথমার্ধে স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের ঠিক আগ মুহুর্তে একদল সন্ত্রাসীকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করা হয়েছিলো। এর ফলে সে দিন ড. মিলন নিহত হয়েছিলেন। যার বিচার এখনো হয়নি।
তাই বিচারের বানী নিভৃতে যেনো আর না কাঁদে। কেমন করে একজন স্বীকৃত সন্ত্রাসী জেল থেকে ছাড়া পায় তা জাতির কাছে বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার যে ২৩ শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল, বিকাশ কুমার বিশ্বাস তাদের একজন।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ প্রথমে বাসাবো এলাকায় কর্মকাণ্ড চালালেও পরে মিরপুর-আগারগাঁও এলাকায় আস্তানা গাড়েন। আগারগাঁওয়ে জোড়া খুন, এলজিইডি ভবনে খুনসহ আরও কয়েকটি খুনের দায়ে সরাসরি বিকাশকে আসামি করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ছিল, তার ছয়টি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি ছয়টিতে জামিনে আছেন। ১৯৯৭ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ২০০৯ সালে জামিন পেলেও সরকার ফের গ্রেপ্তার করে।
পাদটীকা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আদালত থেকে জামিন পেয়ে তিনি ছাড়া পেয়েছেন। “
যে মামলায় ২০০৯ সালে বিকাশ গ্রেপ্তার হলেন, সেই মামলায় এখন কীভাবে তিনি জামিন পেলেন? বিকাশের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যদি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন, তাহলে দেশে কারাগার রাখার প্রয়োজন হবে না। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই সরকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের আটক রাখে। যে ব্যক্তি কারাগারে বসেও চাঁদাবাজি করেন, সেই ব্যক্তি বাইরে এসে কি সাধু হয়ে যাবেন?
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, সদ্য কারামুক্ত সন্ত্রাসী বিকাশ এখন ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। আগামী সপ্তাহের যে কোন একদিন তিনি ফ্রান্সে আসতে পারেন। বর্তমানে ফ্রান্সে তার ভাই প্রকাশ ওরফে কিশোর অবস্থান করছেন। এখানে এসে তিনিও তার ভাইয়ের মতো রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারে বলে জানা গেছে।
লেখক: প্র্যারিস প্রবাসী বাংলাদেশি [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১২
জেডএম/- [email protected]