মাননীয় উপাচার্য স্যার,
আপনি আমাদের ভীষণ প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক। যখন আপনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম।
স্যার,
ভেবেছিলাম পরবর্তী সময়ে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার চিঠি লিখব। আবারও চিঠি লিখছি ঠিকই তবে এই মুহূর্তে আপনাকে অভিনন্দন জানাতে পারছি না। আপনি হয়তো ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের আপাতত শান্ত করেছেন কোনোভাবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা আপনার উপস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন নিপীড়কদের স্বর্গস্থানে পরিণত হয়েছে। আপনার উপস্থিতিতেই জাহাঙ্গীরনগরে চলছে র্যাগ সন্ত্রাস। সম্প্রতি নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হলে সদ্য ভর্তি হওয়া একজন ছাত্রী জাহানারা হলে সিট পায়। একই বিভাগের ও একই হলের কিছু অগ্রজ শিক্ষার্থী ঐ ছাত্রীটিকে র্যাগিঙের নামে ভয়াবহভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। বর্তমানে ঐ ছাত্রীরা তাকে `বড় ভাই`দের কাছে যেতে বাধ্য করার চেষ্টায় আছে। হ্যা, এমন ঘটনাই জাহাঙ্গীরনগরে ঘটছে। তবে পুরো ঘটনা এখানে বর্ণনা করতে পারছি না। নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে মুখে লাগাম টেনে ধরতে হচ্ছে।
স্যার,
এব্যাপারে আপনি এখনও কোনো কিছু জানেন কিনা, জানি না।
এখনো আপনার দায়িত্বশীল কোনো পদক্ষেপের কথা আমরা জানতে পারিনি। আমার বিবেকবোধ আর দায়বদ্ধতা থেকে আপনার কাছে এই খোলা চিঠি। জানি না আমার এ সামান্য চিঠি আপনার কাছে কোন গুরুত্ব পাবে কিনা। তবে র্যাগের নামে এই যৌন নিপীড়ন কোনভাবেই সমর্থন করতে পারি না।
স্যার,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিংয়ের ইতিহাস নতুন নয়। প্রতিবছর এমন ঘটনার খবর আমরা পাই। বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে নিপীড়নের ঘটনা আবার আলোচনায় চলে এসেছে এবং যেভাবে বিষয়টা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আগামী দিনে এটা মোটামুটি সবখানেই ছড়িয়ে যাবে। বিষয়টা হচ্ছে এখানে মানসিক ও শারীরিকভাবে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ শুধু ছেলের বিরুদ্ধে নয়, মেয়েদের বিরুদ্ধেও। কতিপয় নারী শিক্ষার্থীও এসব কাজে জড়িত আছে। অনেকেই র্যাগিংকে অগ্রজদের সাথে অনুজদের একটি মিলনমেলা হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটছে না।
স্যার,
প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনের ভাষ্য অনুযায়ী দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে এমনটা প্রত্যাশিত নয়। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে! কোনো ঘটনা মিডিয়ায় আসছে, কোনোটা আসছে না। অনেক শিক্ষার্থীই নীরবে এসব সহ্য করে, প্রকাশ করে না। তবে এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হবে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রিয় আনোয়ার স্যার,
আপনার প্রতি এ সমাজের সচেতন এবং আশাবাদী মানুষদের অনেক প্রত্যাশার স্থল। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীদের আস্থাকে আগের চেয়ে আরো বেশি দুর্বল করে দেবে, যা শিক্ষার্থী- শিক্ষক কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। সুতরাং কোনোভাবেই এটা হতে দেয়া যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা, র্যাগিং এর নামে সকল প্রকার, শারীরিক মানসিক নির্যাতন বন্ধে আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। আপনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে মুক্তবুদ্ধি আর সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র হিসেবেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে, যৌন নিপীড়কদের আস্তানা হিসেবে নয়।
সিয়াম সারোয়ার জামিল, কবি ও ব্লগার, [email protected]
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর