বই মেলাকে ঘিরে আশা প্রত্যাশার পাশাপাশি চিন্তা ও কম কিছু নয়. বাংলা একাডেমীর এই মেলা এখন বাংগালির গর্ব , বাংলাদেশের অহংকার। আমাদের যে কোন অর্জন ই বজ্রচেরা।
মেলার ভেতর দিয়ে বইকে জনপ্রিয় করা আর জন-মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই এর দায়িত্ব। আমাদের বই মেলা তা পেরেছে . পেরেছে বলেই তার ওপর অন্যদের নজর পড়ছে।
ভারতীয় বিশেষত পশ্চিমবংগের লেখকদের ধারণা তাঁদের লেখা ছাড়া বাংগালি বাঁচবে না. পদ্মাপাড়ের সরলতা ধ্রুপদী সাহিত্য প্রীতি আর অতীতের প্রতি সম্মানকে তাঁরা হক মনে করেন। এ জন্য দায়ী আমাদের কম মেধাবী অগ্রজ লেখক ও প্রীতি মুগ্ধ বাংগাল পাঠক শ্রোতা. বিদেশের কুকুর ধরি স্বদেশের ঠাকুর ফেলিয়া নীতির কারণে দাদারা কূলীনতার রোগে ভোগেন। অবিভক্ত বাংলার পূর্বাধিকারকে মনে করেন নিজেদের সম্পত্তি। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে ও নিজেদের ঝুলির মাল মনে করেন তাঁরা। যে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু সাল জানেন না মৃত্যুর ৫/৬ বছর পর গান্ধীকে লেবুর শরবত খাইয়ে
অনশন ভাংগানোর বক্তিমা রাখেন সে দেশের সমরেশ মজুমদার এসেছিলেন উকিল হয়ে। আমাদের বই মেলাটির বারোটা বাজানোর জন্য নিজেদের বই গছিয়ে দিতে।
আমরা বাংলা সাহিত্যের কর্তন বা বিভেদে বিশ্বাসী নই। কিন্তু বিষয় যখন একতরফা এবং মুরুব্বিয়ানার মত দখলের, তখন তা মানা অসম্ভব। আমাদের নপুংসক বুদ্ধিজীবী বা মাজা ভাংগা কর্তৃপক্ষ সঠিক জবাব দিতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বলা উচিৎ ছিল. "দাদা আগে আপনাদের আকাশের মেঘ দূর করুন। আপনাদের শকুন সামলান। আপনাদের
ঘরে ঘরে বাংলাদেশকে প্রবেশাধিকার দিন। " এ সত্য বলার সাহস আমাদের নেই।
আনন্দ বাজারের এই খায়েশ নতুন কিছু নয়। এর আগে তাঁরা পত্রিকার ঢাকাইয়া সংস্করণের জন্য ও উঠে পড়ে লেগেছিলেন। একবার ঢুকতে পারলে মাড়োয়ারি বাণিজ্যবুদ্ধি আর অর্থে আমাদের লুট করা তাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না। সে যাত্রায় আমাদের বিবেকবান বন্ধুরা তা ঠেকিয়েছিলেন। সে গল্প আমি লুৎফর রহমান রিটনের কাছেই শুনেছি। এবারও
সুবিধা হয় নি। কিন্তু দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। আর আমাদের দেশে আত্মবিক্রি করার মত লেখক বুদ্ধিজীবী ও প্রচুর। মেধাবি তরুণ আর খ্যাতিমান অগ্রজদের ভাত মারতে এক পা এগিয়ে ভারতীয়দের বরণ করে নিয়ে আসবে তাঁরা। পরের-পশ্চাতে-কাঠি-দিতে-ওস্তাদ আমাদের আরেকটি স্বভাব দাদাদের কৌলিন্যে বুঁদ থাকা।
আমাদের মেলাটিকে ঘিরে হাজার হাজার নতুন লেখকের স্বপ্ন ডানা মেলে। এ সময় কর্মব্যস্ত জীবনপীড়িত নারীও কবি হয়ে ওঠেন। তরুণ তরুণীর এক বেলা না খেয়ে জমানো টাকায় প্রকাশিত ছড়া,কবিতা, প্রবন্ধের বইয়ের গন্ধে মৌ মৌ করে বইমেলা। এই স্বপ্ন বিক্রি নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ আমাদের বই মেলা নিয়ে ষড়যন্ত্র। আহমদ ছফা স্বাধীনতার পর ভারতীয় বাংগালি লেখকদের আধিপত্য দেখানোর জন্য শওকত ওসমানকে সাথে নিয়ে বাংলা বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি দোকানে সুনীল-শক্তি-সমরেশকে পেলেও শওকত ওসমানরা ছিলেন না। দোকানদাররা তাঁদের চিনতেন ও না। আহমদ ছফা বলেছিলেন " এই ...লের জন্য কি দেশ স্বাধীন করছি আমরা?"
এত বছর পর আজ আবার আগ্রাসন বা ভেলকিবাজী দেখে সে কথাই মনে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে বই যখন দ্রুত উধাও হবার পথে, বই মুদ্রণের পরিবর্তে ই-বুক নাম ধারণ করে অদৃশ্য ও পর্দানির্ভর তখনো আমরা বইমেলকে দেখছি অসাধারণ জনপ্রিয়। তাই এর বুকে কামড় বসাতে চাইছে অনেকে। সে কাজটি হতে দেয়া যাবে না। আমাদের অর্জন আমাদের। ছোট হোক বড় হোক কেবলই আমাদের। ঘ্রাণ নিতে আসুন, উপভোগ করুন, ষড়যন্ত্র করবেন না।
ফেব্রুয়ারির শক্তি বিষয়ে অবহিত না থাকলে ইতিহাস জানুন সেখানেই উত্তর আছে...
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর