ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এ কেমন বিদায়, আবিদ রহমান?

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৩
এ কেমন বিদায়, আবিদ রহমান?

অস্ট্রেলিয়া থেকে: তাকে আমি দীর্ঘকাল থেকে চিনতাম না. তবে জানা ছিল তার নাম। তার লেখার সঙ্গেও ছিল পরিচয়।



অষ্ট্রেলিয়ার দুটি ভিন্ন শহরে বসবাস আমাদের। দূরত্বও অনেক। তারপরও সময় আর চিন্তার ঐক্য যে এক সময় নৈকট্য তৈরি করবে, এটাই ছিল নিয়তি।

প্রবাসে নানা ধরনের ক্যাচাল, ছদ্মবেশী রাজাকার মিথ্যাবাদী রাখালের কমতি নেই। এসব অপশক্তি আর ঝামেলাবাজদের বিরুদ্ধে তার অনলাইন কাগজ রাখালের জন্য লেখা চেয়ে পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটান তিনি। কিছুদিন পর ঢাকাবাসী হওয়ার আনন্দে আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার দায়িত্ব নিলেন।

তখন থেকেই ঘনিষ্ঠতার শুরু। বেশ কয়েকটি কাগজে লেখা আর বহুপ্রজ হবার কারণে আমি ঠিক রাজি না হলেও তিনি ছিলেন নাছোড়বান্দা।

যোগাযোগের ওই সুবর্ণ মুহূর্তগুলো এতো তাড়াতাড়ি স্মৃতিতে পরিণত হবে ভাবিনি। অসাধারণ ইংরেজি লিখতেন। প্রখর ব্যাকরণবোধ আর শব্দচয়নে চমৎকার

বুনন ছিল তার। আমি বিস্মিত হতাম। অনেক সময় অভিধান না হাতড়ে উত্তর দিতেও কুণ্ঠিত হয়ে পড়তাম।

এক সময় সে পাট চুকলো। মেলবোর্নে ফিরে এলেন তিনি। ফেরার পরদিন সন্ধ্যায় ম্যারাথন ফোনালাপে তার বেদনা ও রাগের বহি:প্রকাশে আমি এক সৎ ও প্রতিবাদী মানুষের অবয়ব খুঁজে পেয়েছিলাম।

সততার পোকা মাথায় নিয়ে অসৎ সমাজে নষ্ট পরিবেশে মাথা তুলে দাঁড়ানো যায় না। তিনিও পারেননি। না পারার আরো কিছু কারণ আছে। স্বাভাবিক মানুষের মত খাওয়া-দাওয়া আর নিদ্রা তার প্রার্থিত কিছু ছিল না। বোহেমিয়ানই বটে।

জীবনের শুরুতে বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের লোভনীয় চাকরি পাবার পরও ছেড়ে দিয়েছিলেন। হংকংয়ে তার ব্যবসায় সাফল্য কিছুই নয়! মেলবোর্ন পৃথিবীর বিচারে প্রায় এক বা দুই নম্বর নগরী- তাও তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। গলি ঘিঞ্জি আর বসবাস অযোগ্য ঢাকায় থাকার আপ্রাণ বাসনা নিয়েই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন আমার এই বন্ধু!

লেখালেখির বিভিন্ন শাখায় অনায়াস মেধা আর শ্রমের পরিচয় রেখে গিয়েছেন। প্রচারবিমুখ আর স্পষ্টভাষী বলে তেমন প্রচার বা খ্যাতি ছিল না তার। কিন্তু যারা জানেন তাঁরা নিশ্চয় ‘হ্যাট অফ’ বিদায় সম্ভাষণ জানাবেন।

গত কয়েক মাস ধরে শরীর বিদ্রোহ করছিল তার। প্রশ্ন করলে বলতেন, ‘আরে আমার কিচ্ছু হবে না. এই একটু সূঁচ-সুতোর গুঁতো নিতে যাচ্ছি’। সে আপদও সহ্য করতে হয়নি তাকে। তার আগেই বিদায় নিয়েছেন।

মেলবোর্নে শাহবাগ সংহতির নায়ক আড্ডা দিতে দিতেই ঢলে পড়েছেন আবিদ রহমান।

না ফেরার দেশে যাওয়া আমার এই বন্ধুটিকে শ্রদ্ধা আর বিনম্র প্রণাম। মনে রাখার মতো মানুষের সংখ্যা কমেই কমে আসছে। আবিদ রহমান তেমনই একজন।

নীল দিগন্তে আকাশের ওপারের আকাশে ভালো থাকুন- আবিদ রহমান। বাংলাদেশ আপনাকে মনে রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১২
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।