জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ (সোমবার) যখন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার প্রথম বাষির্কী উপলক্ষ্যে সাংবাদিক মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করছিলাম তখন কখন প্রেসক্লাবের নোটিশ বোর্ডে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক আবিদ রহমানের মৃত্যুসংবাদ টানানো হয়েছে তা টের পাইনি। সমাবেশ শেষে ক্লাবে প্রবেশ করতেই নোটিশ বোর্ডে আবিদ ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ দেখে মনটা ভারি হয়ে উঠলো।
আবিদ ভাইয়ের সাথে আমার সর্বশেষ কথা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে তার অস্ট্রেলিয়া যাবার আগে কয়েকমাস আগে। এর পর ফেসবুকে যোগাযোগ ছিল।
১৯৮৫ সাল। এরশাদের পত্রিকা ‘দৈনিক জনতায়’ তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার। হাটখোলা রোডে ‘দৈনিক জনতা’য় আবিদ রহমান তখন স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসাবে তখন আমার কোনো নির্ধারিত বসার টেবিল ছিল না। বেশিরভাগ সময় কোন সিনিয়র না থাকলে তার খালি টেবিলে বসে রিপোর্ট লিখতাম। অথবা কোনো সিনিয়রের ডে-অফ থাকলে তার টেবিলে বসে কাজ করার সুযোগ মিলতো। মাঝে মধ্যে টেবিল খালি না থাকলে কোনো সিনিয়রের সামনে বসে কাজ করতে হতো। কিন্তু বেশির ভাগ সময় কোনো সিনিয়র তার টেবিলে বসে আমাকে কাজ করতে দিতে অনীহা প্রকাশ করতো। তখন দু’জন সিনিয়র আমাকে তাদের সামনে বসে কাজ করার সুযোগ দিতেন তাদের একজন আবিদ রহমান ও অপরজন মাসুদ নিজামী।
এভাবে আবিদ রহমান আমাকে স্নেহের জালে আবদ্ধ করে ফেলেছেন তার ছোট ভাই হিসাবে। তিনি কখন যেন হয়ে গেলেন হলেন আমার শ্রদ্ধেয় ‘আবিদ ভাই’। আমি তখন থাকতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মোহাম্মদ মহসিন হলের ৬৩২ নম্বর কক্ষে । আমার রুমমেট ছিলো বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক জসিম মল্লিক।
সম্ভবত ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে কোনো একদিন আবিদ ভাই আমার হলে গিয়ে উপস্থিত । কারণ তখন আসন্ন জাতীয় প্রেসক্লাব নির্বাচনে তিনি নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনের দিন যেন সহকর্মী হিসাবে তার জন্য সারাদিন প্রেসক্লাবে প্রচারকাজ করি।
সেবার আবিদ ভাই নির্বাচিত হলেন। এর পরে আমাকে উদ্বুদ্ধ করলেন জাতীয় প্রেসক্লাবে সদস্য হতে আবেদনপত্র জমা দেবার জন্য। আবিদ ভাইয়ের কথামতো আমি প্রেসক্লাবে প্রথমবারের মতো আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিই।
১৯৮৬ সালের কোনো এক সময় প্রেসক্লাবের বাছাই তালিকায় আমার নাম দেখতে পাই। আর সেটা ছিল আবিদ ভাইয়ের কারণেই। কিন্তু সে সময় বর্তমান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, এনটিভির হেড অব নিউজ খায়রুল আনোয়ার মুকুল, তৎকালীন বাংলার বাণীর রিপোর্টার দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বর্তমানে দেশে অবস্থানকারী সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ অন্যদের সদস্যপদ হলেও যে কোনো কারণেই হোক আমার সদস্যপদ হয় নি। অনেক পরে আমার সদস্যপদ হয়।
পরবর্তী সময়ে আবিদ ভাই দৈনিক জনতা ছেড়ে দেন। তার পরেও জাতীয় প্রেসক্লাবে দেখা হতো। তখন প্রেসক্লাবে আবিদ ভাইয়ের সৌজন্যে প্রতিনিয়ত ডালপুরি খেতে যেতাম।
আবিদ ভাই এরপর বিদেশে চলে যান। কখন তিনি বিদেশে চলে যান তা জানতে না পারলেও ২০০৩ অথবা ২০০৪ সালের দিকে আবিদ ভাইকে অনেকদিন পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেখতে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। তাকে জড়িয়ে ধরি বলি “আবিদ ভাই আমি এখন প্রেসক্লাব সদস্য”। আবিদ ভাই শুনে খুশি হন। ক্লাবে বসে অনেকক্ষণ কথা হয় তখন তার সাথে।
এরপরে দেশে এলে সব সময় প্রেসক্লাবে দেখা হতো। কথা হতো। হতো আড্ডা। আবিদ ভাই দৈনিক আমাদের সময়ে কাজ করতেন নাইমুল ইসলাম খানের মালিকনায়। হঠাৎ একদিন দু:খ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, তিনি সেখানে কাজ করতে পারছেন না। এ দেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তাই তিনি আবার দেশ ছাড়তে চান। তার কষ্টের কথা শুনতে হয়েছে।
এরপর তিনি দেশ ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে তার সাথে শুধু ফেসবুকে যোগাযোগ হতো। আজ আর ফেসবুকে কোনো যোগযোগ হবে না। আর ঢাকায় এলে দেখা হবে না। কারণ তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সাথে নিয়ে গেলেন কিছু কষ্ট !
শুধু বলতে চাই, ভালো থাকুন আবিদ ভাই। আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাকে দু:খ ও কষ্ট দেবার জন্য।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩
আরআর; জুয়েল মাজহার,কনসালট্যান্ট এডিটর