ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কার ঘরে শাহবাগ আন্দোলনের ফসল

ফজলুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৩
কার ঘরে শাহবাগ আন্দোলনের ফসল

ঢাকা: শাহবাগ আন্দোলনের ফসল কার ঘরে যাবে? কাদের গোলায় উঠবে? কারা প্রস্তুত এই ফসল তুলতে? প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে আমরা যারা শাহবাগে যাই, স্লোগানে কণ্ঠ মেলাই সময়ের প্রয়োজনে; তাদেরকে ওই প্রশ্নটি করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। আমি, আমরা যুৎসই জবাব দেই।



উত্তর পেয়ে অনেকে চুপসে যায়, অনেকের মন বিষণ্ণ হয়। আমরা বলি জয় হবে, ফসল যাবে ‘শুভশক্তি’র ঘরে। যারা সত্য আর ন্যায়ের জন্য লড়ছে তারা জয়ী হবে। একাত্তরে যেমন হয়েছে, এবারও এদেশের মানুষের জয় হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের অসাম্প্রদায়িক মানুষের বিজয় হবে।

‘শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ইতিহাস সৃষ্টি করা তরুণদের আন্দোলন আওয়ামী লীগ হাইজ্যাক করেছে, তারা ফায়দা লুটবে’Ñ জামায়াত আর বিএনপির নেতাদের মতো অনেকেই এমন মন্তব্য করে। আমরা বলি, দেশ রক্ষার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সজিব রাখতে তরুণরা পথে এসে ডাক দিয়েছে।

তরুণদের সেই আহবানের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে গেছে আওয়ামী লীগ, এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? আর ফায়দা?  দেশ যদি যুদ্ধাপরাধী মুক্ত হয়, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক সমাজ কাঠামোয় ফিরে আসে, তাহলে লাভ কার? কেবল আওয়ামী লীগের?

৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে রাজপথে। ‘প্রজন্ম চত্বর’ নামে শাহবাগ এখন জগতজুড়ে আলোচিত, আলোড়িত। সেখানে একটি স্থায়ী মঞ্চ হয়েছে অতি সম্প্রতি। লাখ মানুষের এমন অহিংস আন্দোলনের নজির গোটা দুনিয়ায় বিরল। এই সমাবেশ কোথাও একটি ঢিল ছুঁড়েনি। আঘাত করেনি কোনও চিহ্নিত শত্রুকেও। কেবল তারা অপরাধীদের যথাযথ শাস্তির আর্জি করেছে আদালতের বরাবরে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা এক সপ্তাহে দেশ জুড়ে যা করেছে তা দেখে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক, তারা প্রকৃত অর্থে কোন দেশের মানুষ।

এই দেশ, দেশের মানুষের প্রতি ন্যুনতম দায়-দায়িত্ব থাকলে এমন অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে কোন রাজনৈতিক দল? বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস, ট্রেনে আগুন দেওয়া আর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে জামায়াত কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো?

এই যখন পরিস্থতি তখনও শাহবাগ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আগে কেউ কেউ সুশীল সমাজে শ্রুতিশ্রাব্য নয় এমন স্লোগান দিয়েছে বটে(একটা একটা শিবির/ জামায়াত ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর)। এখন তেমন  স্লোগানও উঠে না। এখন বলা হয়, ‘জামায়াত ধর-বিচার কর, শিবির ধর-বিচার কর’।

এই শান্তিময় আন্দোলন, ন্যায়ের দাবির ভবিষ্যত কী? এমন প্রশ্নও উঠছে? এর জবাবতো আমি, আমরা দিতে পারি না। কেউ নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন বলেও মনে হয় না। তবে জেগে উঠা তরুণরা বলছেন, দাবি তুলছেন, যতদিন না একাত্তরের অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে ততদিন তারা জেগে থাকবেন।

আর আমাদের জন্য শাহবাগ আন্দোলনের আলোর দিকটি হচ্ছে" ভবিষ্যতে কোন অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক, দখলদার যদি ক্ষমতা কেড়ে নিতে আসে তাহলে এমনি করেই প্রতিবাদী হবে গণজাগরণ মঞ্চ। "

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।