বড় হয়ে কি হতে চেয়েছিলো রফিকুল ইসলাম (১৫), মাতা- সতুরা খাতুন, পিতা- গোলাম মোস্তফা, সাকিন- হাটপাড়া, উপজেলা- গোদাগাড়ি, জেলা- রাজশাহী? ছোট থেকে কী স্বপ্ন ছিলো এই শিশুটির? লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চেয়েছিলো সে? নাকি সরকারি চাকুরে? কিংবা একজন শিক্ষিত কৃষক? অথবা একজন ক্রিকেটার যার নামে উদ্বেল হবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অথবা মহান কোনো নেতার নামে কোনো স্টেডিয়াম?
তার স্বপ্নগুলো আজ আর জানার কোনো উপায় নেই। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রফিককে নিয়ে অতীতকালে কথা বলতে হচ্ছে।
রফিকেরতো আজ কবরে থাকার কথা ছিলো না। আজ মাদ্রাসায় ছুটির দিন তাই লেখাপড়া শেষ করে তার ছুটে যাওয়ার কথা ছিলো খেলার মাঠে। অথবা বাংলাদেশ-শ্রীলংকা যে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে ওই খেলা দেখতে বাজারের কোনো চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে বন্ধুদের নিয়ে ভিড় করার কথা ছিলো তার। কিংবা বাবাকে সাহায্য করতে ক্ষেতে-খামারে।
যদি খুব পড়ুয়া হতো তাহলে বাড়িতে বসে হয়তো খুব উঁচু গলায় পড়তো রফিক, মাথা গুঁজে অংকগুলো ঝালিয়ে নিতো আরেকবার। এক ফাঁকে মা বলতেন, আর পড়তে হবে না সোনা, এবার একটু বিশ্রাম নাও। রফিক হয়তো বলতো, দাখিল পরীক্ষার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে মা, তা না হলে জিপিএ-ফাইভ পাওয়া যাবে না। ছেলের পরিশ্রম হচ্ছে তাই মায়ের কষ্ট লাগলেও আনন্দে মায়ের বুকটা ভরে যেতো, এই ভেবে সুখ সুখ লাগতো যে ছেলে লেখাপড়া শেষ করে ছোট ছোট অনেক না পাওয়ার কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। টানাটানির সংসার, ছেলেটাকে একটু দুধ-ডিমও খাওয়ানো যায় না; মা হয়তো দুই মুঠো মুড়ি আর এক টুকরো খেজুরের গুড় রাখতেন ছেলের সামনে, সঙ্গে এক গ্লাস পানি। একটু হাত বুলিয়ে দিতেন ছেলের মাথায়।
কিন্তু রফিকের মা আর কখনোই তার নাড়িছেঁড়া ধনকে দেখবেন না, আদর করে কাছে টেনে নিতে পারবেন না, চাইলেও আর কখনোই শুনতে পারবেন না রফিক ডাকছে ‘মা’। রফিককে শত ডাকলেও সে আর সাড়া দেয় না, রফিক বই-খাতা হাতে আর মাদ্রাসায় যায় না, নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে তাই টুপি হাতে মসজিদে দৌড় দেয় না, যে পথ দিয়ে সে প্রতিদিন হাঁটতো সেই পথের ঘাসগুলো আর রফিকের ছোঁয়া পায় না। এখন প্রতিদিন একটু একটু করে মাটিতে মিশে যাচ্ছে মাটির মানুষ রফিক।
রফিক আজ চিরঘুমের দেশে, কারণ রফিক না বুঝেই মিছিলে গিয়েছিলো। ওই মিছিল এতোই জঙ্গি ছিলো যে পুলিশ আরও প্রাণহানি ঠেকাতে গুলি করতে বাধ্য হয়। মিছিল থেকেও গুলি হচ্ছিলো পুলিশের ওপর। একটু আগেও যে টগবগ করে ফুটছিলো, যে কোনো এক পক্ষের গুলিতে রক্তাক্ত লাশ হয়ে গেলো সেই রফিক।
কার জন্য ১৫ বছর বয়সী রফিকের এই পরিণতি? কার জন্য একটি স্বপ্নের এমন অকাল মৃত্যু? বিস্ময়করভাবে মৃত্যুর পর জানা গেলো, রফিক তার মা-বাবাকে বলেই গিয়েছিলো, সে শহীদ হতে মিছিলে যাচ্ছে। তার মা-বাবাও বলছেন, ছেলের মৃত্যুতে তাদের কোনো কষ্ট নেই। তাদের ছেলের ‘শহীদী মরণ’ হয়েছে। ছেলের মাধ্যমে তারা বেহেশতে যাবেন।
রফিকের মা-বাবা কিংবা রফিকের ভুল উপলব্ধির জন্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। গণহত্যা-হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের কারণে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাঈদীর জন্য জীবন দেওয়ার মধ্যে যে গৌরবের কিছু নেই, কেউ তাদের সেটা বোঝায়নি। রফিক যে দলের হয়ে জঙ্গি মিছিলে নেমেছিলো, একাত্তরে তাদের অপকর্মের জন্য যে তাদের রাজনীতি করারই অধিকার নেই, সেই কথা কেউ রফিকদের কেউ জানায়নি। রফিকের মা-বাবার জানার সুযোগ কম ছিলো, কিন্তু লেখাপড়ার সুযোগ থাকায় রফিকের জন্য সেই সুযোগ থাকলেও তার মাদ্রাসায় বরং উল্টোটাই শেখানো হয়েছে। তাই ১৫ বছরের এক ছেলের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের মিছিলে যাওয়াটাই আইন এবং মানবাধিকারবিরুদ্ধ হওয়ার পরও রফিককে রাজনৈতিক মিছিলে নামানো হয়েছে। শুধু তাই নয় এমন রাজনৈতিক শক্তির মিছিলে নামানো হয়েছে যে শক্তি বাংলাদেশবিরোধী।
তবে রাজশাহীর গোদাগাড়ির আয়েশা সাবের দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র রফিক কোনো বড় ব্যতিক্রম নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর মাদ্রাসার হাজার হাজার ছেলেকে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে নামানো হয়েছে। অসত্য তথ্য দিয়ে তাদের বোঝানো হয়েছে, ইসলাম রক্ষায় শিশুদেরও মিছিলে নামতে হবে। তাদেরকে বলা হয়েছে, সাঈদী এবং জামায়াতকে রক্ষা মানে ইসলাম রক্ষা, আর এই আন্দোলনে শহীদ হলে বেহেশ্ত। এই কারণেই আত্মঘাতি মিছিলে যাওয়ার আগে রফিক তার মা-বাবাকে বলে গেছে, সে শহীদ হতে যাচ্ছে; আর তার মা-বাবা এখন বলছে, শহীদ সন্তানের হাত ধরে তারাও বেহেশ্তে যাবেন।
তবে শিশুদের শুধু ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্যই ব্যবহার নয়, নিজেদের শক্তি সঞ্চয়েও শিবিরের মাধ্যমে শিশুরাই জামায়াতের বড় টার্গেট। বছরের পর বছর তারা এটা করছে, কোমলমতি শিশুরা কোনো কিছু বোঝার আগেই ইসলামের নামে মওদুদীবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। প্রথমে তাদের বোঝানো হচ্ছে, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে যা বলা হয় তার পুরোটাই ইসলামবিরোধী অপপ্রচার, এরপর ব্রেইনওয়াশ শেষ হলে তারা নিজেরাই রগ এবং হাত-পা কাটার রিহার্সালে হাত মকশ করে একসময় আবির্ভূত হচ্ছে ঘাতক হিসেবে। এভাবে গাজী হওয়ার প্রশিক্ষণের সঙ্গে ‘শহীদী মরণে’ বেহেশ্তের লোভ দেখিয়ে গত ৩৫ বছরে হাজার হাজার শিশুকে দলে টেনেছে শিবির; যারা এখন সাঈদীর জন্য পুলিশকে মেরে ফেলছে অথবা মারতে গিয়ে নিজেদের জান কোরবান করে দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দাবিদার সরকার কিংবা প্রগতিশীল শক্তিগুলো কতোটা কি ভাবছে, অথবা আদৌ ভাবছে কি না জানা নেই। তবে বাস্তবতা হলো জামায়াত-শিবিরের আজকের যে শক্তি তার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বেআইনি এবং অনৈতিকভাবে শিবিরের শিশু রিক্রুটমেন্ট। ইসলামের নামে মওদুদীবাদের চাষাবাদ।
ইসলামের নামে এই রাজনৈতিক চাষাবাদ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে মানুষের স্বত:স্ফূর্ত আকাঙ্খার কারণে বন্ধ হয়ে গেলেও আবারও তার শুরু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে। সেই জাতির জনকের জন্মদিনে আজ জাতীয় শিশু দিবস। অথচ এই শিশু দিবস এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির তা-বের পরিপ্রেক্ষিতে রফিকের মতো আরও অনেক শিশুর মৃত্যুর মিছিলের মধ্য দিয়ে। এদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় মিছিলে গিয়েছিলো। তারা বুঝতেই পারেনি, যাদের জন্য তারা মিছিলে যাচ্ছে সেই জামায়াত, জামায়াতের গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদী-কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানরা শুধু ওই শিশুদের দেশের জন্মেরই বিরোধিতা করেনি; এজন্য এই বদ্বীপে একাত্তরে তারা রক্তগঙ্গাও বইয়ে দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর এমনই এক তা-বের শিকার বগুড়া সদর উপজেলার বানদীঘি গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম। রফিকের মতো তারও বয়স ছিলো ১৫। পারিবারিক অনটনে তার লেখাপড়ার সামর্থ্য ছিলো না, উল্টো তার রোজগারে লেখাপড়া করতো ছোট ভাই। বগুড়া শহরের ফপ্স টেইলার্সে কাজ করতো সেলিম। জামায়াতের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। কিন্তু সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে গুজব রটিয়ে মানুষকে ‘ঈমানী দায়িত্ব’ হিসেবে রাস্তায় নামার উস্কানির মিছিলে সেও না বুঝে সাড়া দিয়েছিলো।
বগুড়া থানায় দায়ের করা মামলায় তার বাবা মোহাম্মদ দুদু মিয়া অভিযোগ করেছেন, হরতালের দিনে তার ছেলে শিবিরের উস্কানিতে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র মিছিলের সঙ্গে বড়গোলা এলাকা থেকে সাতমাথার দিকে আসতে থাকে। বড়গোলা চার রাস্তার মোড়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে, দুদু মিয়া তার এজাহারে লিখেছেন, “ভিড়ে পড়িয়া অজ্ঞাতনামা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার ছেলে সেলিম নাভির নীচে গুলিবিদ্ধ হইলে লোকজন ধরাধরি করিয়া ০৩/০৩/২০১৩ তাং বেলা ১১.৩০ ঘটিকার সময় শজিমেক হাসপাতাল বগুড়ায় নিয়া ভর্তি করিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ০৫/০৩/২০১৩ ইং তারিখ সকাল ৫.১৫ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন। ”
এভাবে সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে যে ৭০ জনের মৃত্যু, তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের আক্রমণে যেমন পুলিশ বাহিনীর সদস্য, কলেজের প্রভাষক, পর্যটন কর্পোরেশনের প্রকৌশলী, নীরিহ রিকশাচালক, ফল ব্যবসায়ী এবং কৃষক আছেন; তেমনই আছে তাদের নিজেদের কর্মী যাদের অনেকেই শিশু। রাষ্ট্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হলো নিরূপায় পুলিশের গুলিতেও নিহত হয়েছে অনেকে।
কিন্তু এরকমতো হওয়ার কথা ছিলো না। হয়েছে, কারণ জাতির জনককে হত্যার পর দেশকে উল্টো পথে হাঁটানো হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় একাত্তরের ঘাতকরা শুধু পুনর্বাসিতই হয়নি, রাজনৈতিক শক্তির গোষ্ঠিগত স্বার্থের খেলায় মোটামুটি এক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। তাদেরকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা রেখেছে ইতিহাস বিকৃতি, যে বিকৃতিতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা শক্তি জামায়াতের বীভৎসতার কথা জানতে পারেনি। ঢাকার শহীদ রুমি কিংবা সুনামগঞ্জের শহীদ জগতজ্যোতির মতো শহীদদের বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের কথা না জানার পাশাপাশি জানতে পারেনি নিজামী-মুজাহিদ-কামারুজ্জামান-কাদের মোল্লাদের নৃশংসতার কথাও। এই না জানার কারণে আজ অনেক তরুণ এবং কিশোর সাঈদীকে বাঁচানো তাদের ঈমানী দায়িত্ব মনে করছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনেক বিষয়ে আদর্শহীনতা। নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রফিউর রাব্বীর ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর হত্যাকা-ে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এবং তার পরিরবারের দিকে আঙুল উঠাই তার বড় প্রমাণ।
আমাদের শিশুদের সামনে আদর্শহীনতার প্রমাণ রাখার পাশাপাশি তাদের জন্য নিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। তার আরেক প্রমাণ জাতীয় শিশু দিবসের আগের দিন কুমিল্লায় ট্রাকের ধাক্কায় আট শিশুর মৃত্যু। মীরেরসরাইয়ের পর এরকম আরেক ঘটনায় বাংলাদেশের হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠেছে। এভাবে বার বার মৃত্যু আমাদের সন্তানদের! শুধু দুর্ঘটনা বলে আমরা কি দায় এড়াতে পারি? এই রাষ্ট্র তার শিশুদের খাবারের নিশ্চয়তা দেবে না, লেখাপড়ার নিশ্চয়তা দেবে না, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেবে না; তাই বলে কি বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাও দেবে না? আমরা কি আমাদের হৃদয়ের ডাক শুনতে পাই না? যদি শুনতে পাই তাহলে আমাদের মস্তিষ্ক কেনো কাজ করবে না!
আর মস্তিষ্ক কাজ করলে আমাদের শিশুদের জন্য আমাদের নিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তারা যে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্লে-গ্রুপের শিক্ষার্থী নিহাদ-শুভ-হৃদয়, নার্সারির শোভা-আল আমিন, তৃতীয় শ্রেণীর নাসির-মিথুন এবং চতুর্থ শ্রেণীর স্বাধীনের মতো জীবন থেকে বিদায় নেবে না, এটা যেমন নিশ্চিত করতে হবে; তেমনই তাদের শিক্ষা এবং খাবারের নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে যে গণজাগরণ তাতে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান জামায়াতের বড় অংশের রিক্রুটমেন্ট শিশু বয়সে, আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ওই শিশুদের অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ্য।
একইসঙ্গে চেতনার লড়াইও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু তার স্কুলেই কেনো জানতে পারছে না বাংলাদেশের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষায় সবচেয়ে গৌরব আর সম্মানের শব্দ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। শুধু বইয়ের কথায় শিশুদের মনোজগত গঠন সম্ভব নয়, এজন্য দীর্ঘ সাংস্কৃতিক সংগ্রামও জরুরি। সেই সংগ্রামে শিশু সংগঠনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ, শুধু শহরে নয়; গ্রাম পর্যন্ত শিশু সংগঠন উৎসাহিত করা এখন রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে। কারণ এরকম সংগঠন যেগুলো ছিলো সেই খেলাঘর, কচিকাঁচার আসর, চাঁদের হাট এখন বিলুপ্তপ্রায়, জাগিয়ে তোলার কোনো উদ্যোগও নেই।
মনে করা হতো গ্রামীণ এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক এবং ব্র্যাক ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের পাশাপাশি মানুষের চেতনার জায়গাটিতেও কাজ করছে। এ কারণে নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে সংগঠনগুলোর উদ্যোক্তারা অনেক পুরষ্কার এবং সম্মানও পেয়েছে। এমনকি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এবং নাইটহুড পেয়েছেন ফজলে হাসান আবেদ। কিন্তু গ্রামীণ জনপদে জামায়াতের সাম্প্রতিক তা-বে প্রমাণ হয়েছে, পরিবর্তনের পথে খুব সামান্যই করতে পেরেছেন তারা।
সরকারকেই তাই সরকারি-বেসরকারি দু’ ধরণের উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে। মানিকগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া স্পষ্টই বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দিতে আরও কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। তিনি তার মধ্যে শিশুদেরও রেখেছেন কি না জানা নেই, তবে কোনো সুস্থ মনের মানুষ প্রাণহানির কথা ভাবতে পারেন না; শিশু মৃত্যুর কথাতো অবশ্যই না। জামায়াতের সহিংসতায় এরইমধ্যে অনেক বড় হয়ে গেছে শিশু মৃত্যুর মিছিল। এই মিছিল থামান, এখনই থামান। স্বপ্নগুলোকে বাঁচতে দিন, কুঁড়িগুলোকে ফুল হয়ে ফুটতে দিন।
জাহিদ নেওয়াজ খান: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল আই ([email protected])
বাংলাদেশ সময় ১৫২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৩