ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দেশের মর্যাদা রক্ষায় প্রবাসীদের সচেতন হতে হবে

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৩
দেশের মর্যাদা রক্ষায় প্রবাসীদের সচেতন হতে হবে

বিদেশে বাঙালির বেশ একটা সুনাম রয়েছে। কর্মক্ষমতা, কাজকর্মে কৌশলী মনোভাব ও আলস্যহীনতা,  চৌকস ও প্রত্যুৎপন্নতার বহিঃপ্রকাশ, বন্ধুভাবাপন্ন অতিথিপরায়ণতা- সর্বপরি যে কোনো বিষয়ে সম্মিলিত সহযোগী প্রচেষ্টার পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি ইতিবাচক কাজকর্মের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাঙালির একটি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিই ফুটে উঠেছে।



আমার এখনও মনে পড়ে, আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে সিঙ্গাপুরে থাকাকালে আমার সেখানকার বস কোনো এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে বলেছিলেন, “তোমরা বাঙালিরা যেমন কর্মঠ, তেমন অন্য দশটা জাতির তুলনায় বেশ ভাল ও স্মার্ট।

কিন্তু বাঙালির এ ইমেজ ও সুনাম আমরা ধরে রাখতে পারছি না। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বাঙালি রয়েছে, কিন্তু হাতে গোণা দু’একজনের কুকর্মের কারণে পুরো জাতির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আজকাল এ সমস্যাটি বেশ প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শান্তিপ্রিয় দেশখ্যাত আয়ারল্যান্ডে এর বিরুপ প্রভাব এতোদিন তেমন না পড়লেও সম্প্রতি পরপর দু’টো ঘটনা আয়ারল্যান্ডেও আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানে সসম্মানে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের জন্য।

পুরো জাতিকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর মতো লিমরিকের (লিমরিক - আয়ারল্যান্ডের একটি কাউন্টি, যা বাংলাদেশে একটি জেলার সমমান) ঘটনাটির রেশ কাটতে না কাটতেই কাউন্টি গলওয়েতে ঘটেছে আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ব্যাপারটি স্থানীয় বাঙালিদের অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

সুমন মাহমুদ নামে এক বাংলাদেশি তরুণ গলওয়ে জিএমআইটিতে (GMIT) পড়াশোনা করতো। এখানে ছাত্রদের সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি থাকলেও প্রবাসী ছাত্রদের অধিকাংশই ফুলটাইম কর্মজীবীদের চেয়েও বেশি কাজ করে থাকে। সুমন মাহমুদও এর ব্যতিক্রম নয়।

সে গলওয়ের মুরওয়েলে সেন্ট্রা (Centra) নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সেলস অপারেটর হিসেবে কাজ পায়। এটি আয়ারল্যান্ডের একটি বিশাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে যার শাখা রয়েছে। গলওয়ের ওই শাখাটিতে নাবির হাসান নামে এক বাঙালি ভদ্রলোক ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। বলতে গেলে তারই সহযোগিতায় সুমন সেন্ট্রার এ চাকরিটি পেয়েছিল। অথচ বিকারগ্রস্ত এ তরুণ তুচ্ছ লোভে মত্ত হয়ে কেবল নাবির হাসানকেই বিব্রত ও দায়গ্রস্ত করেনি, বরং আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রতিটি বাঙালি হৃদয়েই পীড়ন ঘটিয়েছে।

কয়েকদিন আগে সুমন সুযোগ বুঝে তার কর্মস্থল সেন্ট্রা থেকে ২০ হাজার ইউরো (২০ লাখ টাকা) চুরি করে পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজি করেও এ পর্যন্ত তার কোনো হদিস মেলেনি। তবে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, সে টাকা নিয়ে দেশে পালিয়েছে এবং বর্তমানে নরসিংদীর নিজ বাড়িতে বসবাস করছে।

কী জঘন্য নৈতিকতা! যে ছেলেটি উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্র হিসেবে দেশ ছেড়ে বিদেশে এসেছিল, সে কিনা শেষমেশ ‘চোর’ উপাধি নিয়ে ফিরে গেলো!

সৎপথে বিশ হাজার ইউরো সঞ্চয় করতে কতদিনই বা লাগতো! বড়জোর দেড়-দুই বছর। এ অল্প সময়ের তুচ্ছ সঞ্চয়ের মোহে আসক্ত হয়ে সুমন কেবল নিজেরই নির্মম ক্ষতি করেনি, বরং চুনকালি দিয়েছে পুরো জাতির মুখে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবাসে বসবাসরত একেকজন বাঙালি গোটা দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। একজনের সুনাম যেমন দেশের জন্য মর্যাদা ও গৌরবের, ঠিক তেমনি একজনের কলংকময় পথভ্রষ্টতাও পুরো জাতির জন্য বিব্রতকর ও লজ্জাজনক।

নাবির হাসানসহ গলওয়ে বাঙালি কমিউনিটি সুমনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোয় আহ্বান জানিয়েছেন। আমি তাদের এ আহবানকে সমর্থন জানিয়ে এটুকু যোগ করতে চাই, যদি সুমনের নজরে ভুল করেও এ লেখাটি আসে, তবে তাকে বলবো- যে ঘৃণ্য উপায়ে সাময়িক সুখের সন্ধান পেয়ে আপনি আনন্দে নাচানাচি করছেন, তা মূলত সুখ নয়। একদিন এটিই অবাঞ্ছিত দুঃখ হয়ে আপনার হৃদয়ে জ্বালাময়ী আঘাত হানবে। সুতরাং কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করে নিয়ে যদি এখনই নিজেকে সংশোধন করতে পারেন, তবেই কেবল প্রকৃত সুখ ও মহত্ত্ব পেতে পারেন।
 
সরকার ও বিরোধী দলের যাঁতাকলে দেশ আজ এক মহা সংকটে নিমজ্জিত। হরতাল এখন বিরোধীদলের প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধসহ প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই করুন চেহারা ফুটে উঠছে।

একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, একেকটি হরতালে দেশের ক্ষতি হয় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। কিছুদিন যাবৎ অনবরত হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে লাল বাতি জ্বলছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু এ খাতটিও যদি কোনপ কারণে রাহুগ্রস্থ হয়, তাহলে দেশকে বাঁচিয়ে রাখাই দায় হবে।    

বিশ্ব শ্রম বাজারের বর্তমান অবস্থাও একদম ভাল নেই। মন্দা চলছে সর্বত্র। যে কোনো অযুহাতে প্রায় প্রতিটি কোম্পানিই চালাচ্ছে ছাঁটাই অভিযান। শুধু নতুন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নয়, বরং নিজ নিজ কর্মস্থলে চাকরি টিকিয়ে রাখাও যেন এখন ইস্পাত কঠিন ব্যপার। এরকম পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাঙালিদের এমন কোনো কাজ করা ঠিক নয়, যা দেশ ও জাতির ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বিরাট বাধা তৈরি করে।                
         
লেখক: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।