ঢাকা: ইদানীং ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ায় তেমন আগ্রহ খুঁজে পাই না। কারণটাও খুব স্বাভাবিক।
পুরনো আমলের ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী বাবা-মা আর নানি-দাদিরা ছাড়া যাদের ব্রাউজ করে খবর পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা আছে তাদের কেউই কিন্তু এখন একান্ত প্রয়োজন না হলে আর মুদ্রিত পত্রিকার মুখোমুখি হতে চান না।
এখনকার যুগটাই হল ডিজিটাল। সময় বদলেছে। সেই সাথে বদলেছে মানুষের ধ্যান-ধারণা আর রুচিবোধ। সময়ের সাথে নিজেদের আপডেট করার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে মানুষ।
যান্ত্রিক জীবনের লেনদেনগুলোকে সহজ করার জন্যই কিন্তু মানুষ এখন টেকনোলজিমুখী হচ্ছে। চব্বিশ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করে কেউই আর সংবাদের জন্য মুদ্রিত কাগজের দিকে তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে নেই। সবাই ঝটপট অনলাইন ব্রাউজ করে নিজেদের পছন্দমত খবরটি পড়ে নিতে পারছেন। এ যেন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের এক সরব বিপ্লব।
আমাদের বাসায় একটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় নিয়মিত। খুব ভোর বেলায় এক কাপ চা নিয়ে খুব আয়েশ করে আম্মা পত্রিকাটি পড়েন। আমি আড়াল থেকে দৃশ্যটা দেখি আর উপভোগ করি। একেই হয়তো বলে দীর্ঘদিনের অভ্যাস।
কিন্তু এখন আমাদের এ যুগে অভ্যাসটা পালটে গেছে। এখন অনলাইন কানেকশন থাকলেই গোটা দুনিয়াটা যেন নিমিষেই হাতের মুঠোয় চলে আসে। বাংলাদেশ তো বটেই গোটা পৃথিবীটাই চোখের পলকে ঘুরে আসা যায়।
এবার অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজ নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। প্রথমেই পত্রিকাটি চতুর্থ বছরে পা দেওয়ার জন্য এর পেছনের সব কারিগর আর কলাকুশলীদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
শুধুমাত্র বাংলানিউজ পত্রিকার একজন পাঠক হিসেবে নয় বরং লেখক হিসেবেও আমি পত্রিকাটির সাথে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত।
অফিসের কাজে, অবসর সময়ে, সোজা কথা যখনই সময় পাই যখন তখন ফুরত-ফারুত এক ছত্র বাংলানিউজে ঢু মেরে আসি। পত্রিকাটির লাল লোগোর ভেতর থেকে যখন বাংলানিউজ শব্দগুলো ধীরে ধীরে আমার ল্যাপটপের মনিটরে ভেসে উঠে তখন কোথায় যেন হৃদয়ের গহিনে এক ধরনের শিহরণ ঠিকই টের পাই!
প্রথমেই হুমড়ি খেয়ে পড়ি দেশের সব রাজনৈতিক তাজা খবরগুলোর উপর। তারপর মুক্তমত, শিল্প-সাহিত্য হয়ে আর কত কি! মজার কথা হল বাংলানিউজের সংবাদ এতই আপডেট যে মাঝে মাঝে মনে হয় এই পত্রিকার সাংবাদিকরা বুঝি নাওয়া-খাওয়া, শখ, আহ্লাদ বেমালুম ভুলে-টুলে শুধু সংবাদের পেছনেই ঘুরছেন। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের খবর চোখের পলকে আপডেট হয়ে তা বাংলানিউজের পাতায় জায়গা করে নিচ্ছে।
অনলাইন পত্রিকা হিসেবে বাংলানিউজের এটাই হল সবচেয়ে বড় সফলতা। তবে প্রাসঙ্গিকভাবেই আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। সফল নেতৃত্ব ছাড়া যেমন দেশ বাঁচে না ঠিক তেমনি সফল সম্পাদক ছাড়া কোন পত্রিকাই মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না।
আমি মনে করি এই চার বছরের মধ্যেই বাংলানিউজ পত্রিকাটি বাংলাদেশের অন্যতম অনলাইন পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পেছনে সবচেয়ে বেশি যার অবদান তিনি হলেন পত্রিকাটির সম্পাদক জনাব আলমগীর হোসেন। যত দূর জানি তার বলিষ্ঠ হাত ধরেই ‘অনলাইন পত্রিকা’ এই ধারাটি বাংলাদেশে প্রধান সারিতে আসন নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। যদি বলি বাংলাদেশের অনলাইন পত্রিকার পাইওনিয়ার আলমগীর হোসেন তাহলে তা মোটেও কোন ভাবেই বাড়িয়ে বলা হবে না।
গোটা পৃথিবীতেই এখন অনলাইন পত্রিকার জোয়ার এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ইতিমধ্যেই প্রিন্ট ছেড়ে অন লাইনে চলে আসার চিন্তা ভাবনা করছে। গোটা পৃথিবীতেই এখন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারীরা গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার গাছ কেটে তা দিয়ে পত্রিকার সাহিত্য পাতা তৈরি করা আর তাতে কবিতা লেখা মানবতার প্রতি কটাক্ষ ছাড়া আর কিছুই না।
গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পরেছে। “গ্লোবাল ওয়ার্মিং” এখন পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। পশ্চিমা বিশ্বের অফিস আদালতের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ইতিমধ্যেই কাগজের ব্যবহারের প্রতি উৎসাহ কমিয়ে সেখানে অন লাইন যোগাযোগের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে। তাদের স্লোগান হল “সেভ দ্য পেপার সেভ দ্যা ওয়ার্ল্ড”।
সব দিক থেকে বিবেচনা করলে চোখ বুজেই বলা যায় বর্তমান সময়ে অনলাইন পত্রিকা হল সময়ের দাবি, তারুণ্যের দাবি, সঙ্গে পৃথিবীরও দাবি।
শেষ কথা হল, আমি এই মুহূর্তে অনলাইনে বাংলানিউজের যে গরম আর তাজা খবরটি পড়ছি তা আগামীকাল ভোর বেলা মানুষ মুদ্রিত কাগজের মাধ্যমে জানতে পারবে। এ যেন “হোয়াট বাংলা নিউজ থিংকস নাও, প্রিন্ট থিংকস ইট টুমোরো। ”
(লেখক,প্রাবন্ধিক ও ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট)
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর