১৪ জুলাই রাত থেকেই অনেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন:
আগামীকাল, ১৫ জুলাই। ঐতিহাসিক দিন, গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় হবে।
১৫ জুলাই মধ্য দুপুরে বাংলাদেশের মানুষ দেখলো, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গোলাম আযমের ফাঁসি হয় নি। তিনি গুরুপাপে লঘুদণ্ড পেয়েছেন। তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব কারাদণ্ড, ফারাদণ্ড পরবর্তী সময়ে কি হয়? বাংলাদেশের মানুষ অতীতে তা অনেকবার দেখেছে। তাই দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচটি অভিযোগের সবক’টিই প্রমানিত হওয়া সত্ত্বেও তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মহলকে যারপরনেই বিস্মিত করেছে, হতাশ করেছে। ফেইসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রচণ্ডভাবে সরব হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুস ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশবাসীকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানাচ্ছে। প্রতিবাদ জানানোর স্থান হিসেবে গণজাগরণমঞ্চ, শাহবাগকে বেছে নিচ্ছে। যে যেখানে অবস্থান করছে, সে সেখান থেকেই শাহবাগ অভিমুখে রওয়ানা দিয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ার ঘটনার সাথে একটি মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফেইসবুক স্টাটাসে মানুষ হঠাৎ করেই গোলাম আযমের পরিবর্তে সরকারের বিরুদ্ধেই অনেক বেশি ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। সরকার-সমর্থক অনেককেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই এই অপ্রত্যাশিত রায়কে আমেরিকান অ্যাম্ব্যাসেডরের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ‘পুঁজিবাজারের দরবেশ’ বলে খ্যাত সালমান এফ রহমান এবং গোলাম আযমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বৈঠকের ফল বলেই মনে করছেন।
ওই রায়ে বলা হয়েছে, বার্ধ্যক্য এবং অসুস্থতাজনিত কারণে গোলাম আযমকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। অথচ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য খ্যাত নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কাউকেই এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। গোলাম আযমকে কেন এই ঘৃণ্য অনুকম্পা? তাহলে কি এই রায়ের পেছনে কিংবা সামনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ কাজ করেছে? ‘আওয়ামীলীগ ইসলামবিরোধী’ জামায়াত-শিবিরের এমন প্রচারণায় সরকার কি ভয় পেয়েছে? কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে কি পিছিয়ে গেছে? নাকি অন্য কোনো ধরনের আপসরফা হয়েছে? যা কিছুই হোক না কেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ না হওয়ায় এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকার নিজ দলের কর্মী-সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে।
গোলাম আযমের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে আওয়ামীলীগের ভোট হয়তো বাড়তো না, কিন্তু তার ভোটব্যাংকের একটি ভোটও কমতো না। কিন্তু গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এই রায়ে আওয়ামীলীগের অনেক ভোট কমে যেতে পারে। আওয়ামীলীগের ভোটব্যাংক দলটির কাছ থেকে চিরতরে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বিভিন্ন মহলের মতে, সালমান এফ রহমান পুঁজি বাজারকে ফতুর করে দিয়ে অনেক আগেই মহাজোট সরকারকে দেউলিয়া বানিয়েছেন, এবার তিনি আওয়ামীলীগ নামের দলটিকেই দেউলিয়া বানিয়ে দিলেন। শেখ হাসিনার নৌকাডুবি হলে না হয় একদিন না একদিন উদ্ধার করা যেতই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনারতরী যদি গোলাম আযমের দাড়িপাল্লায় ওজন করে কেজি দরে বিক্রি হয়ে যায়? তাহলে অবশ্যই বিষয়টি ভেবে দেখার দাবি রাখে।
এই মুহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কথাবার্তা সরকার পতনের আন্দোলনের দিকেই মোড় নিচ্ছে। ফেইসবুকে অনেকেই লিখছে ‘নো মোর শেখ হাসিনা-সরকার’, ‘এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকৃতভাবে বিশ্বাসী নয়’, ‘এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে’ ‘বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ‘ ‘শেখ হাসিনাকে এই ভুলের মাশুল দিতে হবে’ ফেইসবুকে এতো এতো মন্তব্যের মধ্যে আমিও একটি স্টাটাস লিখলামঃ ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে গোলাম আযমের কারাদন্ড ৯০ বছর, আওয়ামীলীগের মৃত্যুদণ্ড। ’
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক, পিএইচডি স্টুডেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া। [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৩
জেএম